বুধবার বারুইপুরের হোমে বিরাট কোহালি। —নিজস্ব চিত্র
সাতসকালে সান্তা বুড়ো। তা-ও নভেম্বরে! বেশ মজাই পেয়েছিল হোমের খুদেরা। একটার পর একটা উপহার পেয়ে খুশিতে ডগমগ করছিল তারা। কিন্তু আসল চমক তখনও বাকি। সান্তা ক্লজ় হঠাৎ সাজ খুলে ফেলতেই চিৎকার করে উঠল খুদের দল। সামনে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালি!
বুধবার সকালে এ ভাবেই এক ঝাঁক বাচ্চাকে চমক দিলেন কোহালি। বারুইপুরের একটি হোমের এই খুদেরা এইচআইভি আক্রান্ত। প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধের মাঝখানে এই হঠাৎ-পাওনায় ওদের চোখ-মুখ তখন খুশিতে উজ্জ্বল। আগেই ঠিক ছিল, এই খুদের দল কাল, শুক্রবার প্রথম ‘পিঙ্ক টেস্টে’ ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচে নৈশ-বিরতি চলাকালীন ছ’ওভারের জন্য ইডেন কাঁপাবে। খেলা শুরুর আগে দু’দলের খেলোয়াড়দের মাঠে নিয়ে যাবে ওরাই। ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়ে গাইবে জাতীয় সঙ্গীত। কিন্তু তার আগের দিন যে তাদের সঙ্গে হোমে দেখা করতে আসবেন কোহালি, তা তারা স্বপ্নেও ভাবেনি।
বারুইপুরের ওই হোম-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে কথাবার্তা চললেও শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতে চূড়ান্ত হয় যে, কোহালি আসছেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বলে কথা। তাই রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-র বিশেষ অনুমতি নিয়ে বারুইপুর জেলা পুলিশ ওই সংস্থার দু’টি হোমকে পুলিশ ও র্যাফের নিরাপত্তায় মুড়ে দেয়। এ দিন সকাল ৮টায় হোমের সদর পেরিয়ে ঢোকে বিরাটের গাড়ি। খুদেদের চোখ এড়িয়ে অধিনায়ক সোজা চলে যান সাজঘরে। সেখান থেকেই সান্তা ক্লজ়ের সাজে হাজির হন বাচ্চাদের সামনে। ঝোলা-ভর্তি উপহার। একের পর এক উপহার বাচ্চাদের দেওয়ার পরেই একে একে খুলতে শুরু করেন পরচুলা আর সাদা গোঁফ-দাড়ি। গোঁফ খুলতেই তারস্বরে এক ঝাঁক খুদের চিৎকারে তখন সেখানে কান পাতা দায়। সকলেই চিনে ফেলেছে তাঁকে। এর পরে বাচ্চাদের সঙ্গে নাচতে শুরু করেন বিরাট। সেখানেই সারেন দুপুরের খাওয়াদাওয়া। পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে দুপুর ১টা নাগাদ হোম ছাড়েন তিনি।
আরও পড়ুন: চোখধাঁধানো সংবর্ধনায় গাইবেন রুনা লায়লা
কাল, শুক্রবার ইডেনে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তনদের সঙ্গে খেলবে এই খুদেরা। সেই জন্য ৪০ জন বাচ্চাকে কয়েক দিন ধরে অনুশীলন চলছে হোমের ভিতরে। ‘আনন্দঘর’ হোমের কর্ণধার কল্লোল ঘোষ জানান, সিএবি গঠনমূলক কাজের জন্য এ বার এইচআইভি বাচ্চাদের পাশাপাশি ক্যানসার-জয়ীদের জন্যও খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, ‘‘এখনও সমাজে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষকে স্পর্শ করতে ভয় পান অনেকেই। ক্রিকেটের মাধ্যমে সেই ভয় কাটানোর জন্য আমি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেছিলাম।’’