জুটি: সম্প্রচারকারী চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন বিরাট কোহালি ও রবি শাস্ত্রী। যে ছবি টুইট করলেন ভারতের হেড
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে এক বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতীয় শিবিরে। যে সময়ের মধ্যে একাধিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে প্রস্তুতি নেবেন বিরাট কোহালিরা। এই এক বছরের মধ্যেই ভারতীয় অধিনায়ককে বেছে নিতে হবে তাঁদের সেরা কম্বিনেশন।
আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে কোহালির ‘মিশন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ’। তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়ে বিরাট দেখে নিতে চান কারা কতটা তৈরি। কাদের নিয়ে আরও কাজ করা বাকি। আসন্ন সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনা নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিলেন বিরাট ও রবি শাস্ত্রী।
রবিবার ধর্মশালায় প্রথম টি-টোয়েন্টি শুরু হওয়ার আগে প্রচারিত যে সাক্ষাৎকারে বিরাট বলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে আমরা ২৫টির উপরে ম্যাচ পাব। এটাই সময় ঠিক দল বেছে নেওয়ার। ভবিষ্যতের কথা ভেবে দল গড়তে হবে। তরুণদের সুযোগ দিয়ে দেখে নিতে হবে, কারা আগামী দিনের জন্য তৈরি।’’
বিরাট জানিয়েছেন, তরুণ ক্রিকেটারেরা পর্যাপ্ত সময় পাবেন নিজেদের প্রমাণ করার। কিন্তু কেউ যেন ভেবে না বসেন, তাঁর অনেক বেশি সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল। তরুণ ক্রিকেটারদের বিরাট-বার্তা, ‘‘সবাইকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিয়ে দেখে নিতে চাই। যাদের মধ্যে মানসিক দৃঢ়তা ও সাহস লক্ষ্য করা যাবে, তাদেরই বেছে নেওয়া হবে আগামী দিনের জন্য।’’
একজন তরুণ ক্রিকেটারের নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ঠিক কতগুলো সুযোগ পাওয়া উচিত? বিরাটের উত্তর, ‘‘কোনও ক্রিকেটারকেই খুব একটা বেশি সুযোগ দেওয়া যাবে না। খুব বেশি হলে পাঁচটি সুযোগ দিয়ে দেখা যেতে পারে। তার মধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আমিও যখন ভারতীয় দলে এসেছিলাম, ভেবেছিলাম একটিই সুযোগ দেওয়া হবে আমাকে। তার মধ্যেই কিছু করে দেখাতে হবে। তরুণ ক্রিকেটারদের বলব, ওরাও যেন এই মনোভাব নিয়েই দেশের হয়ে খেলতে আসে। সেই সময়সীমায় যে পারফর্ম করে দেখাবে, সুযোগ পাবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এ রকম ক্রিকেটার চাই না, যারা ভাবে তাদের অনেক বেশি সুযোগ পাওয়া উচিত।’’
বর্তমানে ঋষভ পন্থের ফর্ম নিয়ে সমস্যা দেখা গিয়েছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে তাঁকে দেখা হলেও ধোনির মতো ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা তাঁর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি বলে অভিযোগ। টেস্টে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেঞ্চুরি করেছেন বলেই তাঁর উপরে আস্থা রেখেছে ভারতীয় দল। কিন্তু কোচ রবি শাস্ত্রী জানিয়েছেন, পন্থকে বুঝতে হবে ম্যাচের কোন পরিস্থিতিতে কী রকম ব্যাট করা উচিত। এমনকি শট নির্বাচন নিয়েও পন্থকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রবি বলেন, ‘‘ঋষভ বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। অসাধারণ প্রতিভা। কিন্তু এই প্রতিভা ঠিক মতো কাজে লাগাতে হবে।’’ সে ক্ষেত্রে পন্থ যে স্বাভাবিক ব্যাটিং করেন, সেটা কি বদলাতে হতে পারে? শাস্ত্রীর উত্তর, ‘‘ভারতীয় দলে কেউ নিজের স্বাভাবিক খেলার ধরন বদলাবে না। শুরু থেকেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রত্যেককে। তাই বলে মাঠে নেমে যা ইচ্ছা তাই করে আউট হয়ে চলে এলেও চলবে না। তখনই সতর্ক করে দিতে হবে।’’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের উদাহরণ টেনে এনে শাস্ত্রী বলেন, ‘‘ক্যারিবিয়ান সফরে বেশ কয়েকটি ম্যাচে খারাপ শট খেলে আউট হয়েছে ঋষভ। ড্রেসিংরুমে ফিরতেই ওকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, ও যা করে এসেছে তা একেবারেই ভুল। প্রথমত দলকে সমস্যায় ফেলার অধিকার কারও নেই। দ্বিতীয়ত নিজেকে ছোট করার অধিকারও কেউ পায়নি। দলের সবাই মনে রাখে, আগে দল তার পর সব কিছু। ঋষভকেও সেই মন্ত্র নিয়েই এগোতে হবে।’’ কোহালি বলেন, ‘‘ম্যাচে কী হতে পারে, কোন পরিস্থিতিতে কী রকম বোলিং হতে পারে, এগুলো বুঝতে হবে পন্থকে। আমি যখন সুযোগ পেয়েছিলাম, আমাকেও এগুলো বুঝতে হয়েছিল। তবে পন্থ যে গতিতে রান করতে পারে, সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’
গত বুধবার ধোনির সঙ্গে একটি ছবি টুইট করেছিলেন অধিনায়ক বিরাট। তার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আশঙ্কা তৈরি হয় যে, ধোনি হয়তো অবসর নিতে চলেছেন। তাঁর করা টুইটকে ঘিরে জল্পনা ছড়ায়, হয়তো ধোনিই কোহালিকে তাঁর অবসরের বিষয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু কোহালি এত কিছু ভেবে ছবিটি একেবারেই টুইট করেননি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বাড়িতে বসে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। তখনই মাহি ভাইয়ের সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ছবিটি টুইট করি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়ায় আমি চমকে গিয়েছিলাম। কী এমন করলাম, যাতে এ ধরনের কোনও কথা উঠতে পারে! আমি আরও এক বার টুইট খুলে পড়লাম। দেখলাম, এমন কিছু লিখিনি যেখান থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।’’ বিরাট যোগ করেন, ‘‘সত্যি আশা করিনি এ ধরনের একটি টুইট থেকে এ রকম কোনও ধারণা তৈরি হতে পারে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই দেশের মাটিতে মরসুম শুরু হচ্ছে ভারতের। প্রায় এক বছর পরে দেশের মাটিতে ভারতের হয়ে খেলার অনুভূতি কী রকম? বিরাট বলছিলেন, ‘‘বাইরে খেলে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ঘরের মাঠে খেলার অনুভূতি অন্য রকম। এখানে সব সময় দর্শকদের সমর্থন পাওয়া যায়। নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলা যায়। কিন্তু বাইরে সেটা সম্ভব নয়। তবুও আমাদের দল খুব ভাল খেলেছিল। সেটাই সাহায্য করেছে ক্লান্তি দূর করতে।’’
কোচ রবি শাস্ত্রীও বিরাটের সঙ্গে একমত। তিনিও বললেন, ‘‘বাইরের মাঠে ভারত যে ক্রিকেট খেলেছে, সেটাই ওদের থেকে আশা করেছিলাম। প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি আমরা। ঘরের মাঠে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যাবে। আমি তো আগেই বলেছি, ঘরের মাঠ বা বাইরের মাঠ নিয়ে আমরা ভাবতে চাই না। এই বিশ্বের সেরা হতে গেলে যে কোনও মাঠে, যে কোনও পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জিতে দেখাতে হবে।’’