সরব: বর্ণবিদ্বেষী বিদ্রুপের সামনে পড়েছেন খোয়াজাও। —ফাইল চিত্র
ক্রিকেটে বর্ণবিদ্বেষ বিতর্ক অব্যাহত। এ বার বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করলেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার উসমান খোয়াজা। রাখঢাক না করে বলে দিলেন, পাকিস্তান থেকে এসে ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে নাগরিকত্ব নেওয়া ইস্তক কী ভাবে তাঁকে বর্ণবিদ্বেষী বিদ্রুপের সামনে পড়তে হয়েছে বারবার।
সিডনিতে ২০১১-তে খোয়াজার টেস্ট অভিষেক হয়। সেটা অ্যাশেজে। তাঁর আগে কোনও ইসলাম ধর্মাবলম্বী অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেননি। এখনও পর্যন্ত ৪৪টি টেস্ট খেলেছেন খোয়াজা। এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘খুব অল্প বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরে আমাকে একটা কথাই বারবার শুনতে হত। সেটা হচ্ছে, কখনও এ দেশের জাতীয় দলে আমি সুযোগ পাব না। তার কারণ একটাই। আমার চামড়ার রঙ। বলা হত, আমি দলের মধ্যে একেবারেই মানানসই নই। ওরা তাই সুযোগও দিত না। তখন এটাই মানসিকতা ছিল। আশার কথা, এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে।’’
খোয়াজা যোগ করেছেন, ‘‘মনে আছে, এখানকার ক্রিকেটে একটু-একটু করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। তখন আমাদের উপমহাদেশ থেকে আসা অন্য মানুষেরা এসে উৎসাহ দিয়ে যেতেন। বলতেন, আমার সাফল্যে ওরা দারুণ খুশি। বিশেষ করে আমি নিজেকে এতটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছিলাম বলে। ওরা আরও বলতেন, আমার জন্যই নাকি অস্ট্রেলিয়া দলকে সমর্থন করতে শুরু করেছেন। তার আগে কখনও যেটা করত না।’’
সাক্ষাৎকারে খোয়াজা যোগ করেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে একটা সময় বারবার আমি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। আর যত বার সেটা হত, মনে হত আমি এখানকার কেউ নই। অন্য কোনও দেশ থেকে এসেছি। আমার প্রেক্ষাপট আলাদা। সত্যিই এর ফলে অন্যদের সঙ্গে আমার একটা পার্থক্য তৈরি হত। যে কারণে আমিও অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক হয়ে উঠেছিলাম অনেক পরে। পাকিস্তান থেকে প্রথম এ দেশে পৌঁছে আদৌ অস্ট্রেলীয়দের সমর্থন করতাম না।’’ এ দিকে অস্বস্তি বাড়ছে ইংল্যান্ডের পেসার অলি রবিনসনেরও। অতীতে তিনি গণমাধ্যমে একাধিক বার যৌনবাদী ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন। যা নিয়ে রবিনসন অবশ্য এখন অনুতপ্ত। চেয়ে নিয়েছেন ক্ষমাও। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ গ্রাহাম থর্প বলে দিলেন, এ বার ইংল্যান্ডের অন্য ক্রিকেটারেরাও অতীতে গণমাধ্যমে কবে কী বলেছেন, তা খুঁজে দেখা
হতে পারে।
বুধবারই ২৭ বছরের রবিনসনের টেস্ট অভিষেক হয়েছে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে। কিছু মানুষ তাঁর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলা হচ্ছে, কেন রবিনসনের মতো একজনকে জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হল? এই ক্রিকেটারটি টুইটারে নানা বিতর্কিত মন্তব্য অবশ্য করেছিলেন অনেক আগে। সেটা ২০১২-১৩-তে। থর্প জানিয়েছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি একেবারেই অভিপ্রেত নয়। তাই আগামী দিনে হয়তো গণমাধ্যমে ক্রিকেটারদের ভূমিকা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
থর্পের কথায়, ‘‘অবশ্যই এই ব্যাপারটা নিয়ে আলাদা করে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে। যাতে গত কালের মতো বিতর্কিত পরিস্থিতি আর কখনও সৃষ্টি না হয়।’’ আর রবিনসনের মন্তব্য, ‘‘আমি এই ভুলটা করেছিলাম আজ থেকে আট-ন’বছর আগে। ভাবিনি এতদিন পরে সে সব নিয়ে আবার নতুন করে চর্চা হবে। একটা কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই। আমি যৌনবাদী নই।’’