ইউসেইন বোল্ট। ফাইল চিত্র।
বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে এ বার আসরে নামলেন বিশ্বের দ্রুততম মানব ইউসেইন বোল্ট। ইউরো ফাইনালে টাইব্রেকারে গোল না করতে পেরে গণমাধ্যমে যে ভাবে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছেন মার্কাস র্যাশফোর্ড, বুকায়ো সাকা ও জাডন স্যাঞ্চো, তার কঠোর নিন্দা করলেন জামাইকার কিংবদন্তি অ্যাথলিট।
বোল্ট বলেছেন, ‘‘পেনাল্টি নষ্ট হলে খারাপ লাগবেই। তাতে কিছু করার নেই। আবেগ, অনুভূতি বাদ দিয়ে মানুষের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কিন্তু সেখানে বর্ণবিদ্বেষ মিশিয়ে দেওয়া হলে তার সঙ্গে ফুটবলের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। সাধারণ ভাবেও এটা মানা যায় না।’’ যোগ করেছেন, ‘‘আমার কাছে ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর। আমি তো একেবারেই তা সহ্য করতে পারছি না। তার উপরে আমি নিজে একজন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান। তা ছাড়াও কে পেনাল্টি মারবে, তা কি স্যাঞ্চোরা নিজেরা ঠিক করেছিল? কখনওই না।’’
এখানেই থামেননি বোল্ট। আরও বলেছেন, ‘‘এটা ফুটবল খেলা। কখনও আপনি জিতবেন, কখনও হয়তো হেরে যাবেন। অবশ্যই হারতে খারাপ লাগে। এ’ব্যাপারে আমারও অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার জন্য কখনও কাউকে অভিশাপ দিতে পারি না। বিশেষ করে কোনও ফুটবলারের গায়ের রঙের কথা তুলে।’’ ১১টি বিশ্বসেরার পদকজয়ী বোল্টের সংযোজন, ‘‘আমি ফুটবল ভালবাসি। এই সব ছেলেদের খেলা চিরকালই দেখে আসছি। তাই কিছুতেই এই ঘটনা মেনে নিতে পারছি না। যা হয়েছে, তা অত্যন্ত অন্যায় একটা ব্যাপার।’’
ব্রিটেনে র্যাশফোর্ডদের ঘটনা নিয়ে পরিস্থিতি এখনও অগ্নিগর্ভ। এমনকি ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও তার আঁচ গিয়ে পড়েছে। তোপের মুখে পড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভাষণ দেওয়ার সময় বারবার বাধা পেয়েছেন। তিনি অবশ্য কথা দিয়েছেন, সরকার এ’ব্যাপারে কঠোরতম ব্যবস্থাই নেবে। জনসন খুবই বিরক্ত গণমাধ্যমগুলির উপরে। তাঁর সাফ বক্তব্য, কেউ কোনও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করলে সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে দিতে হবে। না হলে তাদের আর্থিক জরিমানা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি তো প্রথম থেকেই এই ধরনের আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। এখন দেখা হচ্ছে কী কী ভাবে এ’সবের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’’ জনসন ঘোষণা করেছেন, যারা গণমাধ্যমে এই ধরনের মন্তব্য করেছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের কাউকেই ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডের কোনও স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি ব্রিটেনের সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকেও ওয়েম্বলির ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে এফএ-র কাছে।
অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে ম্যাঞ্চেস্টারে র্যাশফোর্ডের নিজের শহর উইদিংটনে। সেখানে বর্ণবিদ্বেষের বিরোধিতা করে মঙ্গলবার মিছিল করেছেন সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভকারীরা জমায়েত করেন তাঁর একটা দেওয়াল চিত্রের সামনে। ইউরো ফাইনালে ইংল্যান্ড হারার পরে যে ছবিকে নোংরা করে গিয়েছিল বর্ণবিদ্বেষীরা। জমায়েতে আসা ম্যাঞ্চেস্টারের এক মহিলা কেট কেন বলেছেন, ‘‘গোটা ঘটনা অসহনীয়। ম্যাঞ্চেস্টারের অধিবাসী হিসেবে আমি গর্বিত। একই রকম গর্বিত র্যাশফোর্ডকে নিয়েও। ছেলেটা দেশের জন্য যা করেছে, তার তুলনা হয় না। এই সব বর্ণবিদ্বেষীদের সব রকম ভাবে আমি ধিক্কার জানাচ্ছি।’’ র্যাশফোর্ড-ভক্তদের জন্য আবার খারাপ খবরও আছে। ইংরেজ স্ট্রাইকারের কাঁধে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার ওয়ে গুন্নার সোলসার জানিয়েছেন, অক্টোবরের আগে তাঁর মাঠে ফেরার সম্ভাবনা কম।
ইংল্যান্ড দলের ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়েরও জানিয়েছেন, ইউরো ফাইনাল দেখতে তাঁর বাবা ওয়েম্বলিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গ্যালারিতে ঝামেলা হওয়ার সময় তিনি আহত হন। তাঁর আঘাত লেগেছে বুকের পাঁজরে। উদ্বিগ্ন হ্যারি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনায় আমার বাবা খুব ভয় পেয়ে যান। আমি চাই না ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে বা বড় কোনও ফাইনালে কেউ এ রকম অভিজ্ঞতার সামনে পড়ুন।’’
এ দিকে, রোমের পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে তারা ইউরোজয়ী ইটালি দলের হুড খোলা বাসে বিজয়মিছিল করার প্রবল বিরোধী ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়। অনেকের আশঙ্কা, মানচিনিদের দেখতে সে দিন অসংখ্য মানুষ মুখাবরণ না পরে পথে নামায় আবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।