জুটি: ফ্রান্সের প্রথম গোলের পরে বেঞ্জেমা ও এমবাপের উচ্ছ্বাস। রয়টার্স
ম্যাচ তখন শেষের দিকে। ৯০ মিনিটের মাথায় থিয়ো হার্নান্দেজ বক্সের সামনে বল পেলেন। বাঁ পায়ের দুরন্ত শটে দূরের কোণ দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিতেই তুরিনের মাঠে ফ্রান্সের উৎসব শুরু হয়ে যায়। উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে প্রথমার্ধে ০-২ পিছিয়ে থেকেও পল পোগবারা রদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিলেন। বেলজিয়ামকে ৩-২ হারিয়ে ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন কাহিনি উপহার দিলেন। রবিবার স্পেনের বিরুদ্ধে ফাইনাল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
তবে ফ্রান্সের অসাধারণ এই প্রত্যাবর্তনের আসল নায়ক কিলিয়ান এমবাপে। ইউরোয় টাইব্রেকার থেকে গোল করতে না পেরে যিনি জাতীয় দলের মধ্যে একঘরে হয়ে পড়েছিলেন। সে দিনের আক্রান্ত তারকাই বৃহস্পতিবার রাতে গতি এবং ড্রিবলে ফ্রান্সের উদ্ধারকর্তা হয়ে দাঁড়ালেন। কনিষ্ঠতম হিসেবে ফ্রান্সের হয়ে পঞ্চাশটি ম্যাচ খেলার কৃতিত্বও অর্জন করলেন। সে দিন টাইব্রেকার অভিশাপ সঙ্গী হয়েছিল। বৃহস্পতিবার পেনাল্টি থেকে গোল করলেন। ইউরোয় সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সুযোগ নষ্ট করার পরে এই প্রথম ফ্রান্সের হয়ে পেনাল্টি।
প্রথমার্ধে যদিও বেলজিয়ামের আধিপত্যই চলছিল। ৩৭ মিনিটে ইয়ানিক কারাস্কো বাঁ দিক থেকে কাট করে ঢুকে হুগো লরিসকে বোকা বানিয়ে দারুণ ‘ফিনিশ’ করলেন। চার মিনিটের মধ্যে ২-০ করেন রোমেলু লুকাকু। কেভিন দ্য ব্রুইনের থ্রু পাস থেকে গোলার মতো শটে গোল করেন চেলসির তারকা।
প্রথমার্ধ শেষে দিদিয়ে দেশঁর দলকে দেখে মনে হচ্ছিল, ইউরোর পরে নেশন্স লিগেও ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সব কিছু পাল্টে যায়। ফ্রান্সকে প্রথম আশার আলো দেখান করিম বেঞ্জেমা। যিনি চলতি মরসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দশ ম্যাচে দশ গোল করেছেন। ৬২ মিনিটে এমবাপের পাস থেকে ২-১ করেন বেঞ্জেমা। বক্সের মধ্যে পড়ে গিয়েও দুর্দান্ত টার্নে বেলজিয়াম রক্ষণকে বোকা বানিয়ে গোল করে গেলেন বেঞ্জেমা। সাত মিনিটের মধ্যে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরালেন এমবাপে। বক্সের মধ্যে আতোয়াঁ গ্রিজ়ম্যানকে অবৈধ ভাবে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে মনে হয়েছিল, বেলজিয়ামই শেষ হাসি হাসবে। কারাস্কোর নিচু ক্রস থেকে গোল করেছিলেন লুকাকু। কিন্তু ভিডিয়ো সহায়তা (ভার) নিয়ে অফসাইডের জন্য গোল বাতিলন করেন রেফারি।
নাটক তখনও শেষ হয়নি। পল পোগবার ৩০ গজের বাঁকানো ফ্রি-কিক বারে লেগে ফিরে এল। শেষ পর্যন্ত হার্নান্দেজের গোলে সম্পূর্ণ হয় ফ্রান্সের প্রত্যাবর্তন অভিযান। বেলজিয়ামের সোনার প্রজন্মের জন্য পড়ে থাকল সেই হতাশা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হয়েও মুকুটহীন রাজা হয়ে থাকতে হচ্ছে কেভিন দ্য ব্রুইন, রোমেলু লুকাকুদের। বিশ্বকাপ, ইউরোর পরে নেশন্স লিগেও ট্রফি জয় অধরা থেকে গেল।