Euro Cup 2020

Euro 2020: নাইজেরিয়া, সুদান, বসনিয়ার অভিবাসীরাই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ফেডেরারের সুইৎজারল্যান্ডকে

গোটা সুইৎজারল্যান্ড দলটারই পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে নানা অজানা কাহিনি।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২১ ০৯:০১
Share:

ফ্রান্সকে হারানোর পর সুইৎজারল্যান্ডের উচ্ছ্বাস। ছবি পিটিআই

বুন্দেশলিগায় বরুসিয়া মুনশেনগ্ল্যাডবাখ ক্লাবে খেলেন ইয়ান সমার। সেখানে অদ্ভুত নামে ডাকা হয় তাঁকে — ‘বনসাই’। অথচ তিনি মোটেই বেঁটেখাটো নন। বরং ছ’ফুটের উপর লম্বা। তবে জার্মানির ঘরোয়া লিগে যাঁরা খেলেন, তাঁদের তুলনায় খাটো তো বটেই।

Advertisement

তবে উচ্চতা সমারের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। গত সোমবার রাতে আকাশ ছুঁয়েছিলেন তিনিই। পেনাল্টি শুট-আউটে রুখে দিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপের শট। দৌড়ে গিয়েছিলেন সুইৎজারল্যান্ডের গ্যালারির দিকে।

সোমবারের ওই রাতের আগে কতজন তাঁর নাম জানতেন সন্দেহ! জার্মান লিগে তাঁকে নিয়ে আলোচনা হলেও নিজের দেশেই তিনি অচেনা ছিলেন! ফুটবলার নয়, সুইৎজারল্যান্ডে সমার পরিচিত ‘ফুড ব্লগার’ হিসেবে, অর্থাৎ যাঁরা বিভিন্ন খাবারের সম্পর্কে ভিডিয়ো পোস্ট করেন।

Advertisement

শুধু সমার নয়, গোটা সুইৎজারল্যান্ড দলটারই পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে নানা অজানা কাহিনি। খেলাধুলোয় যে দেশটার পরিচিতি রজার ফেডেরারের হাত ধরে সেই দেশের জাতীয় দলের ২৬ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৬ জনই অভিবাসী। কেউ এসেছেন নাইজেরিয়া থেকে, কেউ কঙ্গো, কেউ উগান্ডা, কেউ বা আবার কোনও বলকান দেশ থেকে চলে এসেছেন।

মারিয়ো গাভ্রানোভিচের কথাই ধরা যাক। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময়ে তিনিই গোল করে দেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন। আদতে তিনি বসনিয়ার। কথা বলেন ক্রোট ভাষায়। বেড়ে উঠেছেন সুইৎজারল্যান্ডের ইটালি অধ্যুষিত শহর টিসিনোতে।

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রথম গোল করা হ্যারিস সেফেরোভিচের কথাই ধরা যাক। তিনিও বসনিয়ার, কিন্তু মুসলিম। ১৯৮০-র দশকে তাঁর পরিবার বলকান যুদ্ধের সময় পালিয়ে এসেছিল। নাইজেরিয়া থেকে এসেছিলেন ম্যানুয়েল আকাঞ্জির পূর্বপুরুষরা।

দলের ২৬ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৬ জনই অভিবাসী। ছবি পিটিআই

সুইৎজারল্যান্ডের মিডফিল্ড যাঁরা শাসন করেন, সেই জারদান শাকিরি এবং গ্রানিট হাকা যথাক্রমে আলবেনিয়া এবং কসোভোর। ব্রিসি এমবোলো ক্যামেরুনের, ডেনিস জাকারিয়ার বাবা কঙ্গোর, মা সুদানের, রুবেন ভার্গাসের বাবা এসেছিলেন ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে। এডমিলসন ফের্নান্দেসের পূর্বপুরুষ এসেছিলেন কেপ ভার্দে থেকে। বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন সংস্কৃতি। কিন্তু ফুটবলের ব্যাপারে প্রত্যেকের সুর একই তারে বাঁধা।

বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ফ্রান্স — ইউরোপের বহু দেশেই ভাষাগত, সংস্কৃতিগত বৈচিত্র রয়েছে। কিন্তু সুইৎজারল্যান্ড বাকিদের থেকে আলাদা। কারণ এখানে ঔপনিবেশিকতার কোনও ছাপ নেই। এঁরা প্রত্যেকেই উদ্বাস্তু। যুদ্ধবিধ্বস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত, মানবাধিকার-হীন দেশ থেকে পালিয়ে আসা। বাকি দেশের তুলনায় এ দেশে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ। তার সুফল অন্তত ফুটবল দলে পাওয়া যাচ্ছে।

সুইৎজারল্যান্ডের থেকে ফ্রান্স কতটা আলাদা, তা সামান্য উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। কিলিয়ান এমবাপের বর্তমান বাজারমূল্য ২০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। গোটা সুইৎজারল্যান্ড দলের মূল্য সেখানে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো।

গাভ্রানোভিচ এক সময় বুন্দেশলিগার তলার সারির ক্লাবগুলিতে খেলতেন। ক্রোয়েশিয়ার ডায়নামো জাগ্রেবে যাওয়ার পর সাফল্য পেয়েছেন। একই কথা প্রযোজ্য সেফেরোভিচের ক্ষেত্রেও। পর্তুগালের বেনফিকায় সাফল্য পাওয়ার আগে ঘুরে বেড়িয়েছেন নিচের সারির ক্লাবগুলিতে।

শুক্রবার সুইৎজারল্যান্ডের সামনে স্পেন। ২০১০ বিশ্বকাপে এই স্পেনকেই প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছিল তারা। পরে সেই স্পেনই গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। স্পেন কি পারবে তার বদলা নিতে? নাকি আবার সুইৎজারল্যান্ডের জয়গাথা রচনা হবে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement