Euro 2020: ধারাবাহিকতার অভাব, তবু এবারের ইউরোয় সব থেকে বেশি আনন্দ দিচ্ছে জোয়াকিম লো-র জার্মানিই

জার্মানির সামনে এবার কঠিন পরীক্ষা। সামনে ইংল্যান্ড, যারা খেলবে ঘরের মাঠে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ২০:৩১
Share:

মন মাতাচ্ছে জার্মানির ফুটবল। ছবি রয়টার্স

হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষ হতে আর কয়েক মিনিট বাকি। মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারিনায় থাকা জার্মান সমর্থকরা তখন কার্যত নিস্তব্ধ। প্রায় ৭০০ কিমি দূরে বুদাপেস্টে তখন ফ্রান্স এবং পর্তুগালের ম্যাচ ড্র চলছে। অর্থাৎ, হারলেই এবারের মতো ইউরো কাপ শেষ হয়ে যাবে জার্মানির। হঠাৎই রীতিমতো দেবদূত হয়ে দেখা দিলেন লিয়ঁ গোরেৎজা। সমতা ফেরালেন, সেই সঙ্গে নিশ্চিত করলেন জার্মানির শেষ ষোলোর টিকিট। গোটা বিশ্বের জার্মান সমর্থকরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ফের সত্যি হল সেই প্রবাদবাক্য, হারার আগে হারে না জার্মানি।

Advertisement

কে ভেবেছিল জার্মানি শেষ দুটো ম্যাচে এ ভাবে খেলবে? প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হারের পর জোয়াকিম লো-র দলকে ছিড়ে খেয়েছিল জার্মান সংবাদমাধ্যম। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল তাঁর রণকৌশল নিয়ে। সংবাদমাধ্যম দাবি তুলছিল, কেন ইউরোর আগেই তাঁকে সরানো হল না। লো মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন। ফল পাওয়া গেল পরের ম্যাচেই। ট্রফি জেতার অন্যতম দাবিদার পর্তুগালকে ছিন্নভিন্ন করে দিল জার্মান দল। গোটা ম্যাচে যেন ছবির মতো খেললেন টনি খুস, রবিন গসেন্স, ইলখাই গুন্ডোয়ানরা। ঠিক যখন দরকার, তখনই দুর্দান্ত ছন্দে ফিরতে দেখা গেল জার্মানিকে। ২০১৮ সালেও এই জিনিস দেখা গিয়েছিল। সে বার সুইডেনের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে ফ্রি-কিকে গোল করে বিদায় আটকেছিলেন খুস।

জার্মান সমর্থকরা প্রিয় দলকে ‘দি মানশাফ্ট’ বলে ডাকেন। কিন্তু জার্মান সংবাদমাধ্যম এবং ফুটবল বিশেষজ্ঞদের কাছে জার্মানি পরিচিত ‘টুর্নিয়েমানশাফ্ট’ নামে। অর্থাৎ, যে দল যেকোনও প্রতিযোগিতায় সব থেকে ভাল খেলে। না হলে যে দল কিছুদিন আগে স্পেনের কাছে হাফ ডজন গোল খেয়েছে বা উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার কাছে হেরেছে, তাদের পক্ষে এ রকম খেলা কী ভাবে সম্ভব?

Advertisement

উত্তর লুকিয়ে আছে জার্মানদের আত্মাভিমানে। তাই জন্যেই বারবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ফিরে আসতে দেখা গিয়েছে তাদের। কৃতিত্ব প্রাপ্য কোচ ওয়াকিম লো-র ঠান্ডা মাথারও। হাজারও সমালোচনা সত্ত্বেও জার্মানির আক্রমণাত্মক মানসিকতা বদলাননি। সেই তিন জন ডিফেন্ডারেই খেলিয়েছেন পর্তুগাল এবং হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে। আক্রমণভাগে কখনও সখনও পাঁচজনও উঠে যাচ্ছিলেন। উইং ধরে আক্রমণের ঝড়, একের পর এক ভেসে আসা ক্রস, জার্মানি যেন ফিরিয়ে এনেছে সেই সোনালি দিন। এবারের ইউরোতে ছ’টি গোল করেছে জার্মানি। ৯০ শতাংশ গোলই হয়েছে উইং ব্যাকদের সৌজন্যে। কখনও তাঁরা ক্রস ভাসিয়েছেন, কখনও নিজেরাই গোল করেছেন। কখনও দুটোই একসঙ্গে দেখা গিয়েছে, পর্তুগালের বিরুদ্ধে গসেন্সের অফসাইডে বাতিল হওয়া গোল ভুললে চলবে না। কাই হাভাৎস, জোসুয়া কিমিখের পাশাপাশি এবারের নতুন আবিষ্কার এই গসেন্সই।

এত প্রতিভাবান ফুটবলার, বিনোদন দেওয়া ফুটবল খেলা সত্ত্বেও জার্মানির ধারাবাহিকতা নেই কেন? বিশেষজ্ঞরা এখানে কিছুটা হলেও দায়ী করছেন লো-কে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর এখনও বেশ কিছু জায়গায় খামতি থেকে গিয়েছে। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ডিফেন্ডারদের মধ্যে যোগাযোগ এবং মনঃসংযোগের অভাব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে এই জার্মানি উপহার দিচ্ছে মনোগ্রাহী ফুটবল। বিশেষজ্ঞদের মতে, লো-কে একদম সঠিক সময়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নতুন কোচ হান্সি ফ্লিক ফুটবলারদের হাতের তালুর মতো চেনেন। ফলে, ভবিষ্যত আরও ভাল হতে চলেছে।

জার্মানির সামনে অবশ্য এখন কঠিন পরীক্ষা। সামনে ইংল্যান্ড, যারা খেলবে ঘরের মাঠে। লো-র আসল পরীক্ষা এবার শুরু। বিদায়ের আগে শেষ একটা ছাপ রেখে যেতে চাইবেনই তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement