এটাই কি তবে শেষ ইউরো? বেলজিয়াম ম্যাচের পর হতাশ রোনাল্ডো। ছবি টুইটার
আঁতোয়া গ্রিজম্যানের অভাব পূরণ করতে বছর দুয়েক আগে রেকর্ড অর্থে বেনফিকা থেকে জোয়াও ফেলিক্সকে কিনেছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ। তখনই দিতে হয়েছিল ১১১৫ কোটি টাকা।
স্ট্রাইকাররা গোল করতে পারছিলেন না। কারণ, মাঝমাঠ থেকে বল সরবরাহ করার মতো ফুটবলার নেই। স্পোর্টিং লিসবন থেকে ৪৫৮ কোটি টাকায় ব্রুনো ফের্নান্দেসকে তুলে নেয় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড।
প্রায় ৪১৭ কোটি টাকায় ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়া বার্নার্দো সিলভা এখনও পেপ গুয়ার্দিওলার নয়নের মণি। বছর তিনেক আগে মরসুমে সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সিটির খেলা থাকলে প্রথম একাদশে বার্নার্দোর সুযোগ পাওয়া এক রকম নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রবের্তো ফির্মিনো, সাদিও মানে, মহম্মদ সালাহদের উপর বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছিল। প্রত্যাশাও তৈরি হচ্ছিল অনেক। গোলের ধারা অব্যাহত রাখতে গত বছর সেপ্টেম্বরে দিয়োগো জোতাকে ৩৭২ কোটি টাকা দিয়ে উলভারহ্যাম্পটন থেকে কিনে নেয় লিভারপুল।
যাঁদের কথা বলা হল, ঘটনাচক্রে প্রত্যেকেই রবিবার বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ম্যাচে দলে ছিলেন। তবুও গত বারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালকে ইউরো কাপের শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিতে হল বেলজিয়ামের কাছে হেরে। বিশ্বের এক নম্বর দলের কাছে হারকে কেউ অঘটন মনে করছেন না ঠিকই, কিন্তু এই প্রতিযোগিতা থেকে পর্তুগালের এত দ্রুত বিদায়ও বিশ্বাস করতে পারছেন না।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা আরও অবাক হয়ে গিয়েছেন পর্তুগালের রোনাল্ডো-নির্ভরতা ফিরে আসতে দেখে। ২০১৬ সালে যখন এই পর্তুগাল ইউরো কাপ জিতেছিল, তখন সেই দলে ছিল না এত তারুণ্যের ছড়াছড়ি। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর শিরোনামে এসেছিলেন সেই ৩৩-এর পেপে, ৩৪-এর ব্রুনো আলভেস, ৩২-এর রিকার্ডো কুয়ারেসমা এবং অবশ্যই তখন ৩১-এর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
কিন্তু এবারের ইউরোতে রোনাল্ডোর দলকে অন্যতম শক্তিশালী মনে করা হচ্ছিল। তার কারণও ছিল অনেক। প্রথমত, দলে তরুণ খেলোয়াড়ের আধিক্য। রুবেন দিয়াজ (২৪), বার্নার্দো (২৬), রেনাতো স্যাঞ্চেস (২৩), রুবেন নেভেস (২৪), জোতা (২৪), ফেলিক্স (২১), ব্রুনো (২৬) — প্রত্যেকে ফুটবলজীবনের সেরা সময়ে রয়েছেন। প্রত্যেকে প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয়ত, অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। এই পর্তুগাল দলের বেশিরভাগই ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগে বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবলার। স্পেনে, ইটালিতেও অনেকে ছড়িয়ে রয়েছেন। ফলে ইউরোপীয় ধাঁচের ফুটবল প্রত্যেকের নখদর্পণে। তৃতীয়ত, দলের রোনাল্ডো-নির্ভরতা কমা। জোতা, ফেলিক্স ছাড়াও আন্দ্রে সিলভা, রাফা সিলভার মতো তুলনায় অখ্যাত ফুটবলারদের উপরও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ ছিল।
কিন্তু আসল সময়ে কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি। যে বার্নার্দোকে গুয়ার্দিওলা এত ভরসা করেন, তাঁকে রীতিমতো বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন ৩৫-এর টমাস ভার্মায়েলেন এবং ৩৪-এর জ্যান ভার্টোঙ্ঘেন। গুয়ার্দিওলার আর এক পছন্দের পাত্র রুবেন দিয়াজ প্রথম গোলের সময় কার্যত থরগান অ্যাজারকে ফাঁকা মাঠ দিয়ে রাখলেন। সামনে গিয়ে ট্যাকলও করার চেষ্টা করেননি। রাইট-ব্যাকে দিয়োগো দালতের খেলা দেখে ভালই বোঝা গিয়েছে কেন তাঁকে লোনে এসি মিলানে পাঠিয়েছিল ম্যান ইউ।
রোনাল্ডো কিন্তু প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই একার কাঁধে যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এবারের প্রতিযোগিতায় যে সাতটি গোল করেছে পর্তুগাল, তার মধ্যে পাঁচটিই এসেছে তাঁর পা থেকে। অর্থাৎ, গোল করার মতো ফুটবলার এখনও তৈরি হয়নি পর্তুগালে। জোতাকে বাদ দেওয়া গেল, ১১০০ কোটির ফেলিক্স জার্মানির মতো মোক্ষম ম্যাচে খেলতেই পারেননি। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে নামলেন বটে। কিন্তু তাঁর এক-একটি শট গোলের অনেক উপর দিয়ে প্রায় গ্যালারির কাছে গিয়ে পড়ছিল।
বুড়ো আলভেস এবং পেপে-কে দিয়ে গত বার গোটা ইউরো কাপে মাত্র পাঁচটি গোল খেয়েছিল পর্তুগাল। এবার চারটি ম্যাচেই সাত খানা হজম করেছে। তার মধ্যে শুধু জার্মানির বিরুদ্ধেই চারটি। আগাগোড়াই তাঁদের ডিফেন্সকে নড়বড়ে দেখিয়েছে। যথারীতি বারবার একা পড়ে গিয়েছেন পেপে। রবিবার তবু ব্রুনো নামার পরে মাঝমাঠ কিছুটা সচল হয়। তার আগে বেলজিয়াম বক্সে ঢুকতেই পারেনি পর্তুগাল। কিন্তু প্রতিভার সুবিচার করতে পারেননি ব্রুনোও। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সহজ বল উড়িয়ে দিয়েছেন হেলায়। ম্যান ইউ-তে তাঁর মাপা ক্রস বেলজিয়াম ম্যাচে দেখা যায়নি।
পর্তুগালের হয়ে সম্ভবত শেষ ইউরো খেলে ফেললেন রোনাল্ডো। বিদায়বেলায় তাঁকে দেখে যেতে হল যে এখনও কোনও উত্তরাধিকারী তৈরি হয়নি।