স্বপ্নপূরণ: টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতকে প্রথম পদক এনে দিলেন মীরাবাই চানু। রুপো জয়ের মুহূর্ত। শনিবার।
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে রুপো পাওয়ার ঘণ্টা চারেক পরে ভিডিয়ো কলে ভারতীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মীরাবাই চানু। সেখানে একটার পর একটা প্রশ্নের উত্তর দেন এই ভারোত্তোলক।
কী রকম ছিল পদক জয়ের অনুভূতি? চানু বলেছেন, ‘‘একটা স্বপ্ন সত্যি হল। যার পিছনে আমরা অনেক দিন ধরে ছুটছিলাম। আজ নিজেকে নিয়ে ভীষণ গর্ব হচ্ছে। জানি, আমার জন্য কোটি কোটি ভারতবাসী প্রার্থনা করেছেন। তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ।’’
জানতে চাওয়া হয়, বাড়ির সঙ্গে কথা হয়েছে কি না? চানুর উত্তর, ‘‘হ্যাঁ, মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাড়িতে উৎসব হয়েছে। সবাই খুব খুশি। মায়ের হাতে রান্না খাওয়ার জন্য আর তর সইছে না। শেষ পাঁচ বছরে বোধ হয় চার কী পাঁচ বার বাড়িতে গিয়েছিলাম। এ বার যাব এই পদকটা সঙ্গে করে।’’
পাঁচ বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সে বৈধ ভাবে ওজন তুলতে না পেরে বাতিল হয়ে যান চানু। সেই ব্যর্থতা নিয়ে বলছেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সের প্রস্তুতিও ঠিক ছিল। কিন্তু দিনটা আমার ছিল না। ওই দিনই রিয়োর মাটিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছিলাম, টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদক আমাকে পেতেই হবে।’’
কী শিক্ষা নিয়েছিলেন যন্ত্রণা থেকে? চানুর মন্তব্য, ‘‘রিয়োয় ওই ভাবে ছিটকে যাওয়ার পরে আমাকে প্রচুর চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। দুঃখে ভেঙে পড়েছিলাম। দিন কয়েক মাথায় ঢুকছিল না কী করব। তার পরে কোচ স্যর (বিজয় শর্মা) আর জাতীয় সংস্থা আমার পাশে দাঁড়ায়। আমাকে বোঝানো হয়, তোমার মধ্যে দক্ষতা আছে। তুমি ঠিক পারবে। ওই ব্যর্থতা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছিলাম।’’ যোগ করেন, ‘‘এর পরে আমার ট্রেনিং টেকনিকে কিছু বদল ঘটাই। প্রচুর পরিশ্রম করেছিলাম রিয়োর পরে।’’
পাশে বসে থাকা কোচ বিজয় শর্মা বলে ওঠেন, ‘‘আমাদের ট্রেনিং পদ্ধতি বদলানোর ফল পাই ২০১৭ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে। তার পরে ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা আসে। মাঝের এই পাঁচটা বছর চানু ভারোত্তোলনের বাইরে কিছু ভাবেনি।’’
অলিম্পিক্সে রুপো জেতার পরে চানু তাঁর টুইটারে লেখেন, ‘‘একটা স্বপ্ন সত্যি হল। এই পদকটা আমি দেশকে উৎসর্গ করতে চাই। পাশাপাশি আমার মাকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছে মা। দেশের সরকার আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার কোচ, আমার স্পনসর— সবাইকে ধন্যবাদ।’’ এর পরে নিজের কোচকে নিয়ে চানুর মন্তব্য, ‘‘বিজয় স্যরকে আলাদা ভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই। ধন্যবাদ দিতে চাই আমার সাপোর্ট স্টাফকে। যারা ট্রেনিং থেকে শুরু করে সব দিকে নজর রেখেছে। আরও এক বার ধন্যবাদ জানাচ্ছি পুরো ভারোত্তোলক সম্প্রদায় এবং আমার দেশকে। জয় হিন্দ।’’
পদক জেতা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরেও যেন চানুর বিশ্বাস হচ্ছিল না, তিনি পেরেছেন। বলেছেন, ‘‘এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম, কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। তার পরে ঘোষকের কথায় ঘোর কাটল। দেখলাম, সামনে অলিম্পিক পোডিয়াম।’’ চানুর ঘোর কাটলেও দেশবাসীর ঘোর সম্ভবত
এখনও কাটেনি।