কীর্তি: টোকিয়ো অলিম্পিক্সে জ্যাভলিন থ্রো-এ প্রথম হয়ে সোনার পদক নিয়ে নীরজ চোপড়া। —ফাইল চিত্র
অলিম্পিক্স থেকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ভারতের সোনা জয়ের ১০০ বছরের অধরা স্বপ্ন টোকিয়োয় পূরণ করেছেন তিনি। ৮৭.৫৮ মিটার দূরত্ব ছুঁয়ে। এ বার তাঁর লক্ষ্য ৯০ মিটার দূরত্ব পার করা। যেটা পারলে তাঁর মতে, বিশ্বের সেরা জ্যাভলিন থ্রোয়ারদের মধ্যে উঠে আসবেন। তিনি নীরজ চোপড়া। গত তিন সপ্তাহ যিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রশিক্ষণ নিতে ব্যস্ত। আগামী বছর আন্তর্জাতিক খেলোধুলোয় ঠাসা সূচি। তার প্রস্তুতিতেই নীরজ এখন সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন।
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের এত দিন পরে প্রশিক্ষণ নিতে নেমে সমস্যার মুখেও পড়তে হয়েছে নীরজকে। অলিম্পিক্সের জন্য তাঁর খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ করতে হত। সোনা জেতার পরে নীরজ খাওয়াদাওয়ায় কোনও নিয়ন্ত্রণ রাখেননি। বিশেষ করে মিষ্টির ক্ষেত্রে। তাই ওজন বেড়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সাংবাদিকদের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নীরজ বলেছেন, ‘‘যা মনে হয়েছে খেয়েছি টোকিয়ো অলিম্পিক্স থেকে ফেরার পরে। তার আগে প্রচুর নিয়ন্ত্রণ করেছি খাওয়াদাওয়ায়। তাই আর নিজেকে ধরে রাখিনি। ফলে ১২-১৩ কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছিল।’’ তবে তিন সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে প্রায় ৫.৫ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন। ‘‘প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রথম কয়েক দিন খুব কঠিন গিয়েছে। ব্যথা হচ্ছিল শরীরে। প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। তবু প্রশিক্ষণ চালিয়ে গিয়েছি। খুব খাটছিও।’’
নীরজের লক্ষ্য, শুধু নিজেকে লড়াই করার জায়গায় নিয়ে আসা নয়, ৯০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করা, ‘‘পদক একটা ব্যাপার, দূরত্ব আর একটা। ৯০ মিটার দূরত্ব পার করলে আমি বিশ্বের সেরা থ্রোয়ারদের মধ্যে উঠে আসব। কাছাকাছিই আছি। তবে এটা নিয়ে বেশি ভাবছি না। আমার উপরে কোনও চাপ নেই।’’ নীরজ আত্মবিশ্বাসী তিনি লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন এবং তার জন্য টেকনিকে সামান্য হয়তো পরিবর্তন করতে হবে। বলেছেন, ‘‘৯০ মিটার দূরত্ব পার করতে আমাকে আরও ২ মিটার বেশি জ্যাভলিন ছুড়তে হবে। সেটা অসম্ভব কিছু নয়। কারণ আমি দারুণ ভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। খুব বেশি এটা নিয়ে ভাবছি না। তবে এই লক্ষ্যটা আগামী বছরেই পূরণ করতে চাই।’’ তার জন্য টেকনিকে তাঁকে কী খুব পরিবর্তন আনতে হবে? নীরজ বলেছেন, ‘‘বিরাট কিছু না। যেটা করছি, সেটাই উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি শক্তি বাড়ানোর অনুশীলনও দরকার, গতিও বাড়াতে হবে। তা হলেই লক্ষ্য
পূরণ সম্ভব।’’
কী ভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তা-ও জানিয়েছেন নীরজ, ‘‘এখানে খুব সহজ জীবন। সকাল সাড়ে সাতটায় প্রাতরাশ সেরে ফেলি। এর পরে সেন্টারে চলে যাই দু’ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিতে। ওখানেই মধ্যাহ্নভোজ সেরে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরি।’’ যোগ করেছেন, ‘‘বিকেল চারটে থেকে আবার ক্লাস শুরু হয়। ডিনার করে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা হয়। সত্যি বলতে, আমি এখানকার সব ব্যবস্থায় দারুণ খুশি।’’
২০২২-এ কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ডায়মন্ড লিগ রয়েছে। নীরজ জানেন লড়াইটা সহজ হবে না। ‘‘অনেকেইইতিমধ্যেই ৯০ মিটার দূরত্ব পার করে ফেলেছে। এমনকি জুনিয়র পর্যায়েও অ্যাথলিটরা সেই জায়গায় প্রায় পৌঁছে গিয়েছে। যেমন গ্রেনাডার অ্যান্ডারসন পিটার্স। ও প্রায় ৯০ মিটার স্পর্শ করে ফেলেছে। জোহানেস ভেটার (জার্মানি) দারুণ পারফর্ম করছে। তাই লড়াইটা খুব কঠিন। দেখা যাক মরসুম শুরু হওয়ার পরে কী দাঁড়ায়।’’
ভারতীয় খেলাধুলোয় আরও উন্নতির জন্য কী করা উচিত জানতে চাওয়া হলে ২৪ বছর বয়সি অ্যাথলিটের মন্তব্য, ‘‘ভাল অ্যাথলিটদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার খুব প্রয়োজন। যারা উঠে আসছে, তাদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেরাদের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। এক বার সেটা পারলে, অন্যদের দেখে ওরা আরও উৎসাহ পাবে।’’
তাঁর সাফল্য দেশে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্ম কতটা উৎসাহ পেয়েছে? এমন প্রশ্নে নীরজের জবাব, ‘‘অনেককেই দেখছি জ্যাভলিন হাতে তুলে নিতে। এমনকি বাচ্চাদেরও দেখছি।’’ নীরজ মনে করেন আরও সুযোগ পেলে ছোটদের মধ্যে জ্যাভলিনের জনপ্রিয়তা বাড়বে, ‘‘যে সব বাচ্চারা এই খেলায় আসছে, তাদের জন্য সাধারণ মাঠেও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। জ্যাভলিন দামি সরঞ্জাম। তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কোচ প্রয়োজন। এগুলো যত বেশি হবে, দেশে খেলাধুলোর ভবিষ্যত তত উজ্জ্বল হবে।’’