nপ্রস্তুতি: টোকিয়োয় অনুশীলনে ডুবে রয়েছেন প্রবীণ। টুইটার
নতুন করে করোনা সংক্রমণের জন্য কি শেষমুহূর্তে বাতিল হয়ে যেতে পারে টোকিয়ো অলিম্পিক্স?
তেমন ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্স কমিটির প্রধান তোশিরো মুতো। নিশ্ছিদ্র জৈব সুরক্ষা বলয় ভেদ করে ইতিমধ্যে গেমস ভিলেজে ঢুকে পড়েছে মারণ ভাইরাস। ফলে অনেকের মধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে, শেষ পর্যন্ত ২৩ জুলাই অলিম্পিক্সের উদ্বোধন হবে তো?
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে মুতো বলেছেন, “যে হারে সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে, তার পরে ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বলা সম্ভব নয়। আমাদের একটি বিশেষ দল ভাইরাসের সংক্রমণের দিকে কড়া নজর রাখছে। তেমন কিছু হলে শেষ মুহূর্তে অলিম্পিক্স বাতিলও হতে পারে।” মুতো স্বীকার করেছেন, এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, “শেষ মুহূর্তে এই ধরনের পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে হতাশা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েও সতর্ক থাকতে হচ্ছে আমাদের। ফলে কিছুই জোর দিয়ে বলতে পারছি না।”
এমনই অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতীয় খেলোয়াড়দের টোকিয়ো থেকে পদক নিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করলেন সচিন তেন্ডুলকর। তিনি বলেছেন, ‘চাপ উপভোগ করে পদকের জন্য মরিয়া চেষ্টা করো।’
জাতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থা টোকিয়োগামী অ্যাথলিটদের উদ্বুদ্ধ করতে সচিনের বার্তাই পৌঁছে দিল। ‘অনলাইনে’ এই প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা বললেন, ‘‘অনেকেই বলেন খেলায় হার-জিত আছে। কিন্তু আমার বার্তা একটাই। হারের ব্যাপারটা যেন প্রতিপক্ষের জন্যই তোলা থাকে। জিতবে তোমরাই। তোমাদের কিন্তু শুধু পদকের জন্যই টোকিয়োয় যাওয়া উচিত।’’ যোগ করেছেন, ‘‘কখনও স্বপ্নকে তাড়া করার চেষ্টা থেকে সরে আসবে না। স্বপ্ন হতে হবে একটাই। গলায় পদক ঝোলানো। যেন জাতীয় সঙ্গীত বাজতে থাকে আর জাতীয় পতাকা ওড়ে।’’
সচিন আরও মনে করেন, চাপ খেলাধুলোর অঙ্গ। তবে সেটা যেন ভাল পারফরম্যান্সের দিকেই এগিয়ে দেয়। ‘‘তোমরা এখন আগের থেকেও ভাল ফল করছ। তাই তোমাদের নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এটা খুব ভাল একটা ব্যাপার। আমি নিজে কিন্তু এই প্রত্যাশার চাপটা সবসময় উপভোগ করতাম। এই চাপটাকেই তোমাদের ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে হবে,’’ ভারতীয় অ্যাথলিটদের পরামর্শ
দিয়েছেন সচিন।
টোকিয়ো অলিম্পিক্স শুরু হচ্ছে ২৩ জুলাই, শুক্রবার। প্রথম দিনই জীবনের সব চেয়ে বড় মঞ্চে পরীক্ষা দিতে নামছেন প্রবীণ যাদব। তিরন্দাজিতে। পুরুষদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা অর্জন পর্বের রাউন্ডে প্রবীণকে দেখা যাবে অতনু দাস, তরুণদীপ রাইদের সঙ্গে।
আক্ষরিক অর্থেই অলিম্পিক্স প্রবীণের কাছে স্বপ্নের প্রতিযোগিতা। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তিনি উঠে এসেছেন। বাবা দিনমজুর। সংসারে প্রবল দারিদ্র্যের জন্য সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তাঁর প্রায় স্কুল ছেড়ে বাবার সঙ্গে নির্মাণ শিল্পের কাজে নেমে পড়ার অবস্থা হয়েছিল। কিন্তু স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক তাঁকে একরকম জোর করেই অ্যাথলেটিক্সের দিকে ঠেলে দেন। প্রবীণ দৌড়তেন ৪০০ ও ৮০০ মিটারে। সেখান থেকে কাকতালীয় ভাবে তিরন্দাজির গ্রহে পা রাখা! একবার বার্ষিক ক্রীড়ার সময় ড্রিলে ১০ বারের মধ্যে ১০ বারই লক্ষ্যে বল রেখে চমকে দেন প্রবীণ। যা দেখে তাঁকে নিয়ে নেওয়া হয় তিরন্দাজিতে। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য উত্তরণ।
প্রবীণকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কোচ মিম বাহাদুর গুরুং। বলেছেন, ‘‘ছেলেটার মধ্যে অসম্ভব প্রতিভা লুকিয়ে আছে। ওর সব চেয়ে বড় গুণ, যে কোনও পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে। যা একজন তিরন্দাজকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে।’’ আর টোকিয়োয় নামার ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রবীণ বলছেন, ‘‘শুধু আমিই নই, এখানে সবাই চাপে থাকবে। ভাল কিছু করতেই হবে।’’