ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে আইএসএলে খেলতে রাজি হলেও লগ্নিকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? ক্লাব ও লগ্নিকারী সংস্থার মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি। আদৌ হবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তা হলে কি এই ‘সন্ধি’ সাময়িক? অষ্টম আইএসএল শেষ হওয়ার পরে কি ফের সংঘাত শুরু হবে? একাধিক প্রশ্ন উঠছে।
লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের বিবাদের সূত্রপাত চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের একাধিক শর্ত নিয়ে। জট খুলতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়া লাল-হলুদের প্রাক্তন সচিব ও আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত বলছিলেন, “চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের অধিকাংশ শর্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নমনীয় হয়েছিলেন লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা। সমস্যা তৈরি হয় ক্লাব তাঁবু ব্যবহারের অধিকার নিয়ে।” তিনি যোগ করেন, “লগ্নিকারী সংস্থার তরফে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ক্লাবের সভাপতি ও সচিবের জন্য ঘর দেওয়া হবে। কিন্তু ক্লাব কর্তারা খেলার মাঠ ছাড়া আর কোনও কিছু ছাড়তে রাজি হননি। লগ্নিকারী বাধ্য হয়ে অর্থ বিনিয়োগ করবে, বিনিময়ে কিছুই পাবে না, এ তো হতে পারে না! তবে আমি খুশি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে খেলবে।”
লাল-হলুদের প্রাক্তন সচিব প্রশ্ন তুলছেন ইস্টবেঙ্গলের সদস্যপদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও। তিনি বললেন, “ইস্টবেঙ্গলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কর্মসমিতিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সুপারিশ ছাড়া কেউ সদস্য হতে পারেন না। এই কারণেই দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধীশূন্য নির্বাচন হচ্ছে। আমার মতে, খবরের কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সদস্য করা উচিত। তা হলেই
স্বচ্ছতা থাকবে।”
ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাঁরা শতাব্দী প্রাচীন ইস্টবেঙ্গলের স্বার্থের কথা না ভেবে নিজেদের গোঁ ধরে বসে রয়েছেন। গত মরসুমে আইএসএলে নবম হয়েছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। এ বারও শক্তিশালী দল গড়া কঠিন। মাঠি স্টেনম্যান, ব্রাইট এনোবাখারে-সহ প্রায় সব ফুটবলারই অন্য ক্লাবে সই করেছেন। সেখানে চিরশত্রু এটিকে-মোহনবাগান দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছে। যা নিয়ে ময়দানে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরাও ক্ষুব্ধ। কর্তারা বলছেন, ক্লাব বিক্রি করব না। পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, ক্লাব বিক্রি কোথায় হচ্ছে? লগ্নিকারীর মাধ্যমেই ক্লাব চলবে। তারা ক্লাব তাঁবুতে ঘরও দিতে চাইছে। তা হলে আপত্তি কীসের?
এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কিছুটা স্বস্তি ফিরল লাল-হলুদ শিবিরে। রক্ষিত ডাগার ও আভাস থাপার বকেয়া ক্লাব মিটিয়ে দিয়েছে। তাই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন নির্বাসন (ট্রান্সফার ব্যান) তুলে নিয়েছে। হীরা মণ্ডল ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছেন। পছন্দের তালিকায় রয়েছে, আদিল খান, আব্দুল হাকু। কোচ রবি ফাওলারের কাছে ফুটবলারদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশি নির্বাচনও করবেন তিনি। পাশাপাশি লগ্নিকারী সংস্থার তরফে ক্লাব কর্তাদের চিঠি দিয়ে তাঁদের বাছাই করা ফুটবলারদের নামের তালিকা পাঠাতে অনুরোধ করেছে। তবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ফাওলার-ই!
গত মরসুমে দল গড়তে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল লাল-হলুদের লগ্নিকারী সংস্থা। এ বারও প্রায় একই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে তাদের। লগ্নিকারীদের ঘনিষ্ঠ মহলে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যদি আমাদের কথা না শোনা হয়, চুক্তি না করা হয়, তা হলে কত দিন আমরা বিনিয়োগ করব? মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানার্থে এই মরসুমে লগ্নি করলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন
থেকেই গেল।