অভিজ্ঞ: অস্ট্রেলিয়া, পকিস্তানের বিরুদ্ধে সফল ডিকওয়েলা। ফাইল চিত্র
তিনি সেই বিরল প্রজাতির ক্রিকেটারদের একজন, যিনি একটা নয়, দুটো নয়, তিন-তিনটে দিনরাতের টেস্ট খেলে ফেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিরোশান ডিকওয়েলা বলছেন, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু খেলার রং বদলে যেতে পারে।
মরুশহর আবু ধাবিতে টি-টেন লিগ খেলতে ব্যস্ত এখন দেশ-বিদেশের ক্রিকেটারেরা। সেখানকার টিম আবু ধাবির অন্যতম ভরসা শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটসম্যান আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘লাল বল আর গোলাপি বলের মধ্যে তফাত তো অবশ্যই আছে। লাল বলের চেয়ে সুইংটা বেশি হয় গোলাপি বলে। তা ছাড়া এও দেখেছি, বলটা সেলাইয়ে (সিম) পড়ার পরে হাওয়ায় একটু কেঁপে যায়। ঠিক সুইং নয়, কিন্তু বলের গতিপথ একটু এ-দিক ও-দিক হয়ে যায়।’’
যে তিনটে টেস্ট খেলেছেন ডিকওয়েলা, তার মধ্যে দুটিতেই হাফসেঞ্চুরি করেছেন তিনি। যে দুটি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ একবার ছিল পাকিস্তান, অন্য বার অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় টেস্ট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। শুধু বাইশ গজে সময় কাটানোর ফলেই যে তিনি গোলাপি বলের চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তা কিন্তু নয়। উইকেটকিপার হওয়ার সুবাদে খুব ভাল ভাবে গোলাপি বলের নড়াচড়া দেখতে পেয়েছেন তিনি।
গোলাপি বল ও দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে এগুলো জানেন?
ইতিহাসের ইডেন গার্ডেন্স সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?
আরও পড়ুন: হাতে টিকিট, ঘর খুঁজছেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা
এক জন ব্যাটসম্যান এবং এক জন কিপার হিসেবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে এই গোলাপি বলে? ডিকওয়েলা বলছিলেন, ‘‘রাতের আলোয় খেলা কিন্তু বেশ কঠিন। সে আপনি ব্যাটসম্যানই হোন কি কিপার। বল শুধু সুইংই করে না, হাওয়ায় মাঝে মাঝে কেঁপেও যায়। সেটাই সমস্যার বড় কারণ। আপনি হয়তো ভাবলেন বলটা এই লাইনে সুইং করবে। সেই মতো লাইনেও এলেন। কিন্তু হঠাৎ করে একটু কেঁপে গেল। তখনই আপনার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে স্লিপ বা কিপারের কাছে চলে যাবে। উইকেটকিপার হিসেবেও দেখেছি একই সমস্যা। বল শেষ মুহূর্তে গতিপথ বদলে ফেলে।’’
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন কোচ ট্রেভর বেলিস একটা কথা বলেছিলেন। গোলাপি বলে ইংল্যান্ডের অভিষেক টেস্টের কোচের মন্তব্য ছিল, ‘‘গোলাপি বলে পেসাররাও জানে না, বল কোন দিকে সুইং করবে।’’ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারের মতে, কৃত্রিম আলো জ্বলে উঠলেই সমস্যাটা আরও বেশি করে ফুটে ওঠে।
আরও পড়ুন: বলের রংই বুঝছেন না, লিটনকে নিয়ে উৎকণ্ঠা
গোলাপি বলের টেস্ট নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ অনেক কথা বলছেন। তবে বেশির ভাগেরই মত, গোধূলির সময়টা ব্যাটসম্যানদের সব চেয়ে সমস্যা হবে। তিনটে দিনরাতের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা থেকে ডিকওয়েলা একটু অন্য রকম বলছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব চেয়ে বেশি সমস্যা হবে রাতে। বিশেষ করে যারা প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে খেলছে, তাদের জন্য। রাতে, কৃত্রিম আলোয় কিন্তু গোলাপি বলটা ঠিক মতো বুঝতে পারা কঠিন।’’ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারএ-ও মনে করিয়ে দিতে চান, ‘‘সবাই ব্যাটসম্যানদের কথা বলছেন। আমি কিন্তু ফিল্ডারদের কথাটাও বলব। রাতে, গোলাপি বলে ফিল্ডিং করাও কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে যদি উঁচুতে ক্যাচ ওঠে, তা হলে কিন্তু কালো আকাশে গোলাপি বল মাঝে মাঝেই হারিয়ে যাবে।’’
দুবাই, ব্রিসবেন এবং ব্রিজটাউন। তিন দেশের তিন শহরে দিনরাতের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে ডিকওয়েলার। কোন বোলাররা বেশি সুবিধে পেয়েছেন গোলাপি বলে? বল কি বেশি বাউন্স করত? প্রশ্নের জবাবে ডিকওয়েলা বলেছেন, ‘‘আমি তিনটে দেশের তিন রকম পিচে দিনরাতের টেস্ট খেলেছি। পিচের চরিত্রের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। ব্রিসবেনে স্বাভাবিক ভাবেই বাকি দুটো টেস্ট কেন্দ্রের চেয়ে বেশি বাউন্স ছিল।’’
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টিতে শামি, থেকে গেলেন ঋষভ
আপনি ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের মতো পেসারকে খেলেছেন। দুবাইয়ে আপনার প্রতিপক্ষ ছিল মহম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ, ইয়াসির শাহের মতো বোলার। আবার ব্রিসবেনে এই বছরের শুরুতেই খেলে এসেছেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, নেথান লায়নদের। এঁদের মধ্যে গোলাপি বলে আপনাকে সব চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন কে? বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ডিকওয়েলা বলে দিচ্ছেন, ‘‘অবশ্যই মিচেল স্টার্ক। রাতের বেলায়, কৃত্রিম আলোয় স্টার্কের বল খেলা কিন্তু সত্যিই খুব কঠিন কাজ। ওই গতিতে ও রকম সুইং যে কোনও ব্যাটসম্যানকে ঝামেলায় ফেলে দেবে।’’
তিন রকম পিচে, তিনটে সেরা বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে খেলে আপনি রান করেছেন। গোলাপি বলে খেলার মন্ত্র কী ছিল আপনার? ডিকওয়েলা বলে গেলেন, ‘‘বলটা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখতে হবে। শরীরের খুব কাছে এলে শট খেলতে হবে। আমি এই নীতি মেনেই ব্যাট করে গিয়েছি।’’