দুই-গ্রহ: দর্শকদের বিদ্রুপের জবাব ওয়ার্নারের। (ডান দিকে) স্মিথের চোট পরীক্ষা করছেন ফিজিয়ো। এএফপি
অ্যাশেজের লড়াই শুধু বাইশ গজেই হচ্ছে না, হচ্ছে বাইশ গজের বাইরেও। যেমন বল বিকৃতি কাণ্ডের তিন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার বনাম এজবাস্টনের দর্শক।
প্রথম দিন বিদ্রুপের শিকার হয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথরা। শনিবার আবার সেই ঘটনার মুখে পড়লেন ওয়ার্নার। ইংল্যান্ডের শেষ দুই ব্যাটসম্যান তখন স্কোরবোর্ডে রান যোগ করে চলেছেন। ওই সময় বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে থাকা ওয়ার্নার ক্রমাগত বিদ্রুপের শিকার হতে থাকেন। গ্যালারির ওই অংশের দর্শকরা গান গাইতে থাকেন, ‘‘ওর কাছে সিরিশ কাগজ আছে...!’’ তবে এই বিদ্রুপের জবাব ছিল রসিক ওয়ার্নারের কাছে। নিজের প্যান্টের দুটো পকেট টেনে ধরে ওয়ার্নার দেখিয়ে দেন, একেবারে ফাঁকা। সিরিশ কাগজের চিহ্নও নেই তাঁর পকেটে। ওয়ার্নারের এই রসিকতায় অবশ্য মজাই পেয়েছেন দর্শকরা।
দর্শকদের বিদ্রুপের জবাব ওয়ার্নারের কাছে থাকলেও স্টুয়ার্ট ব্রডের সুইংয়ের জবাব ছিল না ওয়ার্নারের কাছে। প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ওয়ার্নারের উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ব্রডের অফস্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বল সামান্য বেশি বাউন্স করে ওয়ার্নারের (৮) ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টোর হাতে চলে যায়। প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি। তার পরে ইংল্যান্ড ডিআরএস নেওয়ায় দেখা যায় বল ওয়ার্নারের ব্যাটে লেগেই বেয়ারস্টোর হাতে গিয়েছে। ব্রডের সাড়ে চারশো উইকেটেও হয়ে যায় একই সঙ্গে। তৃতীয় দিনে খারাপ আলোর জন্য যখন ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়, অস্ট্রেলিয়ার রান তিন উইকেটে ১২৪। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের চেয়ে মাত্র ৩৪ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। হাতে সাত উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসেও অস্ট্রেলিয়ার ভরসা সেই স্টিভ স্মিথের ব্যাট। দিনের শেষে তিনি অপরাজিত ৪৬ রানে। এ দিন ব্যাট করার সময় আবার বেন স্টোকসের বলে হেলমেটে আছড়ে পড়ে স্মিথের। মাঠের মধ্যে এসে তাঁর চোট পরীক্ষা করে যান অস্ট্রেলিয়ার মেডিক্যাল স্টাফ। সেই অবস্থায় ব্যাট করে যাচ্ছেন নির্বাসন থেকে ফিরে আসা এই ক্রিকেটার। এজবাস্টন টেস্টের ভাগ্যও এখন সেই স্মিথেরই হাতে।
তৃতীয় দিনের শুরুতে কয়েকটা উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন দলের বোলাররা। কিন্তু নবম উইকেটে ৬৫ রান যোগ করেন ক্রিস ওকস এবং ব্রড। যে কারণে প্রথম ইনিংসে প্রায় একশো রানে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি করে উইকেট পান প্যাট কামিন্স এবং নেথান লায়ন। দুটো করে উইকেট নিয়েছেন জেমস প্যাটিনসন এবং পিটার সিডল। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান রোরি বার্নসের (১৩৩)। হাফসেঞ্চুরি করে যান বিশ্বকাপে দুরন্ত ফর্মে থাকা বেন স্টোকসও (৫০)।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুতেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। এক বছর পরে টেস্টে এক সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছেন ওয়ার্নার এবং ক্যামেরন ব্যানক্রফ্ট। কিন্তু দু’জনেরই প্রথম টেস্ট খুব খারাপ গেল। এ দিন ওয়ার্নার ফেরার কিছু পরেই ফিরে যান ব্যানক্রফ্টও (৭)। উইকেটে জমে গিয়েও ফিরে যান উসমান খোয়াজা (৪০)।
ব্যাটিংয়ের মতোই সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণও। পেস বিভাগের দুই অভিজ্ঞ অস্ত্রকে বাইরে রেখেই অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘদিন বাদে দলে ফেরা প্যাটিনসনের সঙ্গে রয়েছেন সিডল। কিন্তু বাইরে মিচেল স্টার্ক, জশ হেজলউড। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং মনে করেন, বোলিং নয়, ব্যাটিংয়ের জন্যই সমস্যায় পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। পন্টিং বলেছেন, ‘‘প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং কিন্তু দলকে ডুবিয়ে দিল। স্টিভ স্মিথের ইনিংসটা সরিয়ে নিলে কিছুই থাকে না।’’
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ২৮৪ এবং ১২৪-৩
ইংল্যান্ড ৩৭৪ (১৩৫.৫)
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)
(শুক্রবার ২৬৭-৪ পর)
বার্নস ক পেন বো লায়ন ১৩৩•৩১২
স্টোকস ক পেন বো কামিন্স ৫০•৯৬
বেয়ারস্টো ক ওয়ার্নার বো সিডল ৮•৩৫
মইন বো লায়ন ০•৫
ওকস ন. আ. ৩৭•৯৫
ব্রড ক প্যাটিনসন বো কামিন্স ২৯•৬৭
অ্যান্ডারসন ক কামিন্স বো লায়ন ৩•১৯
অতিরিক্ত ২৪ মোট ৩৭৪ (১৩৫.৫)
পতন: ৫-২৮২ (স্টোকস, ৯৭.১), ৬-২৯৬ (বার্নস, ১০৪.১), ৭-৩০০ (মইন, ১০৪.৬), ৮-৩০০ (বেয়ারস্টো, ১০৫.৫), ৯-৩৬৫ (ব্রড, ১২৯.৬), ১০-৩৭৪ (অ্যান্ডারসন, ১৩৫.৫)।
বোলিং: প্যাট কামিন্স ৩৩-৯-৮৪-৩, জেমস প্যাটিনসন ২৭-৩-৮২-২, পিটার সিডল ২৭-৮-৫২-২, নেথান লায়ন ৪৩.৫-৮-১১২-৩, ম্যাথু ওয়েড ১-০-৭-০, ট্রাভিস হেড ২-১-৭-০, স্টিভ স্মিথ ২-০-৯-০।
অস্ট্রেলিয়া (দ্বিতীয় ইনিংস)
ব্যানক্রফট ক বাটলার বো মইন ৭•৩১
ওয়ার্নার ক বেয়ারস্টো বো ব্রড ৮•৮
খোয়াজা ক বেয়ারস্টো বো স্টোকস ৪০•৪৮
স্মিথ ন. আ. ৪৬•৬১
হেড ন. আ. ২১•৩৯
অতিরিক্ত ২ মোট ১২৪-৩ (৩১)
পতন: ১-১৩ (ওয়ার্নার, ২.৬), ২-২৭ (ব্যানক্রফট, ৯.১), ৩-৭৫ (খোয়াজা, ১৮.২)।
বোলিং: স্টুয়ার্ট ব্রড ৬-০-২৬-১, ক্রিস ওকস ৬-১-২০-০, মইন আলি ৯-০-৪৭-১, জো রুট ৩-০-১২-০, বেন স্টোকস ৭-২-১৮-১।