বার্তা: মেয়েদের এগিয়ে আসার আহ্বান সানিয়ার। ফাইল চিত্র।
বিদ্রোহী তিনি কোনও দিনই নন। চর্চায় উঠে আসতেও পছন্দ করেন না। নিজের মতো থাকতে পছন্দ করেন সানিয়া মির্জা। টেনিস দুনিয়াকে বিদায় জানানোর আগে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের মনের কথা তুলে ধরলেন সানিয়া। তিনি জানিয়েছেন, কথার উপরে ভিত্তি করে কোনও ব্যক্তিকেই ভাল অথবা খারাপ বলা যায় না।
সানিয়া বলেছেন, ‘‘আমি কখনও নিয়ম ভেঙে কোনও কাজ করেছি বলে মনে করি না। নিয়ম কারা-ই বা তৈরি করে? তাদের কথা অনুযায়ী কেন চলব আমি?’’ যোগ করেছেন, ‘‘আমি মনে করি, প্রত্যেকে আলাদা ব্যক্তি। সবার মতামত আলাদা। সকলের নিজের মতো থাকার অধিকার আছে। নিজে কী ভাবছে, তা বলার অধিকার আছে। তার উপরে ভিত্তি করে খারাপ, ভাল বিচার করার আমরা কে?’’
কেউ আলাদা কিছু করছে বলে সমাজ তাদের খারাপ তকমা দিতে পারে না বলেই মত তাঁর। সানিয়ার কথায়, ‘‘এই সমাজকে আমরা আরও ভাল করে তুলতে পারি। কেউ কিছু আলাদা কাজ করলেই আমরা তাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করি। আমরা ভুলে যাই সেই ব্যক্তি আমাদের চেয়ে আলাদা। সকলে এক রকম কাজ করবে, সেটা তো হয় না। অন্য রকম কোনও কাজ দেখেই আমরা যদি খারাপ তকমা দিয়ে দিই, সেটা তো সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক।’’
সানিয়া জানিয়েছেন, তিনি শুধুমাত্র নিজের মতো জীবনযাপন করছেন। সমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে ওঠার কোনও প্রয়োজন নেই তাঁর। ভারতীয় টেনিস তারকার কথায়, ‘‘আমার জীবনযাপন দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হতে পারেন। তাই বলে আমি কারও উদাহরণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি, এটা ভেবে নেওয়াও ভুল। আমার কোনও কাজ যদি কারও ভাল লাগে, তিনি অনুপ্রাণিত হতেই পারেন। তাই বলে আমি কারও উদাহরণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘যদি এক বার ভাবতে শুরু করি যে, আমরা প্রত্যেকে আলাদা। আমাদের সকলের কাজ আলাদা। এটা যদি আমরা ধরে নিতে পারি, তা হলে সমাজে একসঙ্গে বাঁচতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।’’
সানিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভারতীয় টেনিসকে তিনি আন্তর্জাতিক উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার পরেও নিজেকে উদাহরণ হিসেবে কেন মনে করেন না? সানিয়ার জবাব, ‘‘টেনিস জীবন নিয়ে আমি সত্যি গর্ববোধ করি। আমি যা পেয়েছি, তা কখনও ভাবতেও পারিনি। এত কিছুর আদৌ আমি যোগ্য? সকলের ভালবাসা পেয়েছি। সকলের সম্মান পেয়েছি। এই টেনিস জীবন আমাকে সব কিছু দিয়েছে। কিন্তু আজীবন তো আর খেলা যায় না। সব কিছুরই ইতি টানতে হয়। আমার ছেলে বড় হচ্ছে। ওর সঙ্গে অনেক সময় কাটানোর দরকার আমার। ছেলে কী হতে চায়, ওকেই বুঝতে হবে। তাই ওকে বাড়তি সময় দিতে হবে আমার।’’
সানিয়া জানিয়েছেন, মেয়ে হয়ে খেলাধুলো করতে গেলে এই সমাজে অনেক কথা শুনতে হবে। তা উপেক্ষা করেই এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলছিলেন, ‘‘যে কোনও ধর্মের নারীদেরই খেলাধুলো করতে গেলে অনেক কথা শুনতে হয়। তবে সমাজের কথায় পিছিয়ে পড়লে চলবে না। এগিয়ে আসতে হবে।’’