পরিশ্রমী: কঠোর অনুশীলন ও ফিটনেস মন্ত্রে সফল রাহুল। ফাইল চিত্র
টি-টোয়েন্টি সিরিজের চার ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পরে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। ২০৫ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পরে ক্রুণাল পাণ্ড্যের সঙ্গে জুটি গড়ে ভারতীয় দলকে ৩১৭ রানে পৌঁছে দেন কে এল রাহুল। ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারদের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, রাহুলের ছন্দে ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা। রাহুল নিজেও একই আস্থা নিয়ে অনুশীলন করে গিয়েছেন।
যদিও অস্ট্রেলীয় সফরে কব্জিতে চোট পাওয়ার পরে টানা তিন মাস ম্যাচের বাইরে থাকায় তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়েছিল। হতাশ রাহুল বুঝতে পারতেন না কী করলে তিনি রান পাবেন? নেটে নিজের প্রতি বেশি সময় দিতে শুরু করেন। ফিটনেস বৃদ্ধির অনুশীলনেও কোনও ফাঁকি ছিল না। রাহুল উপলব্ধি করেন, সব কিছু যখন নিয়ম অনুযায়ী করছেন, তবুও তার ফল না পাওয়ার মানে ভাগ্য সঙ্গ দিচ্ছে না। নিজের উপর আস্থা না হারিয়ে রানে ফেরার প্রস্তুতি চালিয়ে যান। প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচেই যার ফল পান হাতেনাতে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে রাহুল বলেন, ‘‘রান না পাওয়ার মুহূর্তগুলো ক্রিকেট জীবনের অন্যতম অঙ্গ। তিন মাস মাঠের বাইরে থাকার কারণে হতাশা গ্রাস করছিল। সুযোগ পাওয়ার পরেও ব্যর্থ হওয়ায় ভাবতে শুরু করি আমার ভুলটা কোথায়? এমন কিছু মনে পড়েনি যা নিয়ে দুশ্চিন্তা হতে পারে। কারণ, অনুশীলনে ফাঁকি দিইনি। নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ করেছি। উপলব্ধি করি, সব সিরিজে রান পাব এ রকম নাও হতে পারে। যখনই দলের প্রয়োজন ছিল রান করার চেষ্টা করেছি। আগামী সুযোগেও সেই চেষ্টা করব।’’
তিন ম্যাচের ওয়ান সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে ১-০ এগিয়ে ভারত। শুক্রবার পুণেয় দ্বিতীয় ওয়ান ডে। জিতলেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলবে বিরাট-বাহিনী। কাঁধে চোট পেয়ে সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন শ্রেয়স আয়ার। তাঁর পরিবর্তে অভিষেক হতে পারে সূর্যকুমার যাদবের। রোহিত শর্মার চোট কতটা গুরুতর সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। রোহিতকে বিশ্রাম দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে শুভমন গিলকে দিয়ে ওপেন করানো হতে পারে। কুলদীপ যাদবের পরিবর্তে দেখা যেতে পারে যুজ়বেন্দ্র চহালকেও। রাহুল যদিও সে সব সম্ভাবনা নিয়ে মুখ খোলেননি। তিনি মনে করেন, নিজের উপর আস্থা ও আত্মবিশ্বাসই তাঁকে ছন্দে ফিরিয়ে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুলের ব্যাটিং নিয়ে এত সমালোচনার ঝড় তাঁকে দমাতে পারেনি। বলছিলেন, ‘‘আত্মবিশ্বাস ও নিজের প্রতি আস্থাই এত দূর পৌঁছে দিয়েছে। কখনও আমরা নিজেকে উজাড় করে দিলেও সেরাটা বেরিয়ে আসে না। তাই নেটে বেশি করে সময় ব্যয় করি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাঠে ফিরি।’’ শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচেও এই ছন্দ ধরে রাখার চেষ্টা করবেন তিনি।
রাহুল এমন একজন ক্রিকেটার যাঁকে বিভিন্ন দায়িত্বে দেখা গিয়েছে। অস্ট্রেলীয় সফরের শুরুতে তিনিই ছিলেন দলের মূল উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাঁর পরিবর্তে কিপিং করেন পন্থ। ওপেনারের ভূমিকা নেভাতে হয় রাহুলকে। ওয়ান ডে সিরিজে তিনি আবার মাঝের সারির ব্যাটসম্যান। বিভিন্ন দায়িত্ব সামলাতে সমস্যা হয় না? রাহুলের উত্তর, ‘‘বিভিন্ন দায়িত্ব সামলাতে কোনও সমস্যা নেই। সেটা পারি বলেই এই জায়গায় আছি। তা ছাড়া ভারতীয় দলে সব সময় সুযোগের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। না হলে ভাল কিছু করার তাগিদ তৈরি হবে কী করে? এই নিয়মের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারলে কোনও সমস্যা নেই।’’ এমনকি ফর্ম্যাটের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়াও একজন ক্রিকেটারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যা রাহুল আরও এক বার উল্লেখ করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফর্ম্যাটের পরিবর্তনের জন্য রান পেয়েছি কি না বলতে পারব না। তবে পিচে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে চেয়েছিলাম। ক্রুণালের সঙ্গে জুটি গড়তে পেরে ভাল লাগছে। দু'টি ভাল শটই আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’
রানের খরা কাটাতে বিশেষ কিছু করেছেন? রাহুলের জবাব, ‘‘বিশেষ কী আর করতাম? নেটে মনোনিবেশ করেছি। অনুশীলন করেছি ঠিক মতো। বাইরের আলোচনায় কান দিইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি মনে করি, ম্যাচের মধ্যে থাকলে ছন্দপতনের সুযোগ কমে যায়। যত ম্যাচের মধ্যে থাকা যায় ততই আত্মবিশ্বাস থাকে। কয়েকটি ম্যাচ পেয়েছি, তাই রানে ফিরতেও কোনও সমস্যা হয়নি।’’
রাহুলের রাজ্য কর্নাটক থেকে উঠে এসে অভিষেক ম্যাচেই চমক দিয়েছেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। রাহুলের সঙ্গে জুনিয়র স্তরেও খেলেছেন প্রসিদ্ধ। তাঁর মনে হয়েছিল, কর্নাটক থেকে ভারতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ প্রসিদ্ধ পাবেন। তরুণ পেসারের ছন্দে তাই অবাক নন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকেই ওর গতি ও বাউন্স পার্থক্য গড়ে দিত। ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ ও নিশ্চয়ই পেত। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে ও।’’ যোগ করেন, ‘‘প্রসিদ্ধ, সূর্য, ঈশানরা আইপিএল খেলেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। টানা তিন-চার বছর ধরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাচ্ছে ওরা।’’