তৃপ্ত: ইংল্যান্ডকে চতুর্থ টেস্টে ইনিংস ও ২৫ রানে হারিয়ে সিরিজে ৩-১ জয়ের পরে ট্রফি-সহ সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস ভারত অধিনায়ক বিরাটের। শনিবার। পিটিআই
গত কয়েক মাসে বিশ্বের সেরা দুটো টেস্ট খেলিয়ে দেশকে হারিয়ে ভারত একটা কথা বুঝিয়ে দিল। এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর দল কিন্তু ওরাই। যোগ্য দল হিসেবেই জুন মাসে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট ফাইনাল খেলতে নামবে বিরাট কোহালিরা। আর সেখানে কিন্তু এই ভারতকে হারানো কঠিন হবে।
শুক্রবার ঋষভ পন্থের দুরন্ত সেঞ্চুরির পরেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, মোতেরায় ভারত শেষ টেস্টে ভাল জায়গায় চলে গিয়েছে। শনিবার ওয়াশিংটন সুন্দরের দুরন্ত ইনিংস ভারতের জয় নিশ্চিত করে দেয়। দেখার ছিল, ইংল্যান্ড চতুর্থ দিনে ম্যাচটা নিয়ে যেতে পারে কি না। কিন্তু এই ইংল্যান্ড দলটা ড্রেসিংরুম থেকেই আউট হয়ে আসছে। মাঠে নেমে আর কী খেলবে! আরও একটা টেস্ট আড়াই দিনে শেষ হয়ে গেল। কিন্তু এখানে পিচের দোষ দেওয়ার কোনও জায়গাই নেই। ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা বিনা লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ করে বসল ভারতীয় স্পিনারদের সামনে। দ্বিতীয় ইনিংসে আর অশ্বিন পেল ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট। অক্ষর পটেলের সংগ্রহ ৪৮ রানে পাঁচ। অফস্পিনার ও বাঁ-হাতি স্পিনারের যুগলবন্দিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড শেষ হয়ে গেল মাত্র ১৩৫ রানে। হারল এক ইনিংস ও ২৫ রানে। ভারত সিরিজ
জিতল ৩-১।
অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জিতে ভারত বুঝিয়ে দিল, এই মুহূর্তে সেরা রিজার্ভ বেঞ্চ বিরাটদেরই। কোচ রবি শাস্ত্রী এবং ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে অভিনন্দন, এ রকম একটা রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি করার জন্য। অস্ট্রেলিয়ায় তিনটে টেস্টে কোহালি ছিল না। প্রথম দুটো টেস্টে রোহিত শর্মা ছিল না। রবীন্দ্র জাডেজা ছিটকে যায়। অশ্বিন শেষ টেস্ট খেলেনি। চোট পেয়েছিল যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবরা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও জাডেজা ছিল না। শামি ফেরেনি। বুমরা শেষ দুটো টেস্ট খেলেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের জিততে কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ এই মহাশক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ।
জাডেজার জায়গায় অক্ষর পটেল। অফস্পিনার-অলরাউন্ডার হিসেবে ওয়াশিংটন সুন্দরের উত্থান। ঋষভ পন্থের চমকপ্রদ ব্যাটিং। মহম্মদ সিরাজের দুরন্ত সুইং বোলিং। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শার্দূল ঠাকুরের পারফরম্যান্স। এ সবই ভারতকে এ রকম শক্তিশালী একটা দলে পরিণত করে তুলেছে। যাদের হারানো ক্রমে কঠিন হয়ে পড়ছে।
ভারতের ব্যাটিংয়ের গভীরতার কাছে এখন সম্ভবত কোনও দল আসবে না। ছয়ে ঋষভ পন্থ। যে একাই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। সাতে অশ্বিন— পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। আটে ওয়াশিংটন সুন্দর। দুটো টেস্ট সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়ে গেল সঙ্গীর অভাবে। এই ছেলেটা কিন্তু ভবিষ্যতে দারুণ এক ব্যাটসম্যান-অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে পারে। নয়ে অক্ষর পটেল। এর পরে জাডেজা এসে গেলে ভাবুন কী হবে। এ ছাড়া হার্দিক পাণ্ড্যও অপেক্ষা করে আছে।
এ দিন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়া নিশ্চিত ছিল ওয়াশিংটনের। ওর সব চেয়ে বড় গুণ, বল বুঝে খেলে। শট মারার বলটায় মারে। অহেতুক ব্যাট চালায় না। ব্যাকফুটে খুব শক্তিশালী। এ দিন অক্ষরের সঙ্গে জুটিটা দারুণ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। অক্ষর নিজের দোষে রান আউট হল। ও রকম ভাবে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসা উচিত হয়নি। এর পরে বেন স্টোকস তো এক ওভারে শেষ দুটো উইকেট তুলে নিল। ওয়াশিংটনকে ৯৬ রানে দাঁড়িয়ে হতাশ হয়ে সে দৃশ্য দেখতে হল। তবে ও যে ভাবে খেলছে, টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়া বেশি দূরে নয়।
টেবলে এক নম্বর দল হিসেবেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে যাবে ভারত। ইংল্যান্ডের পরিবেশ, পরিস্থিতি হয়তো অন্য রকম। কিন্তু তাও বলব, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতই ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে। এর কারণ একটাই। সব রকম পরিবেশে খেলার মতো ক্রিকেটার আছে আমাদের দলে। এর সঙ্গে যদি ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটিং দাঁড়িয়ে যায়, তা হলে কিন্তু অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়বে টিম ইন্ডিয়া।