টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল বেছে নেওয়ার কাজ শেষ। ইংল্যান্ডে লাল বলের ক্রিকেটে দুরন্ত পারফরম্যান্সের পর এ বার লক্ষ্য বিশ্বকাপ। কোহলীর নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফির খরা কি এ বার কাটবে? ভারত কি পারবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেতাব ঘরে আনতে? অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকদিনের।
বিরাট কোহলী: সাদা বল কিংবা লাল বল, ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক এবং তর্কাতীত ভাবে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলী। কিন্তু বর্ণময় কেরিয়ারে একমাত্র কালো দাগ, কোনও আইসিসি ট্রফি জিততে না পারা। এ বার কি খরা কাটবে?
রোহিত শর্মা: ওপেনার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে যোগ্যতা প্রমাণ শেষ। লাল বলের ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে শতরানও করে ফেলেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত নিজের সামনে বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য রেখেছেন। ওপেনারের দায়িত্ব বর্তাবে তাঁর উপর।
সূর্যকুমার যাদব: আইপিএল-এ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে বাইশ গজে আগুন জ্বেলেছেন বার বার। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় আন্তর্জাতিক মঞ্চেও একই ভাবে বিপক্ষ বোলিংকে কচুকাটা করেছেন সূর্যকুমার যাদব। পারফরম্যান্সের জেরে ইংল্যান্ড সফরকারী দলেও জায়গা করে নেন সূর্যকুমার। বিশ্বকাপে কোহলীর তুরুপের তাস হয়ে ওঠার সমস্ত গোলা বারুদ মজুত তাঁর মধ্যে।
হার্দিক পাণ্ড্য: সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একটা সময় জাতীয় দলে তাঁর বিকল্প ছিল না। তার পর ফর্ম হারিয়েছেন, ফের ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অলরাউন্ডার হার্দিককে আইপিএল-এর ফর্মে চান কোহলী।
ঋষভ পন্থ: উইকেটের পিছনে এবং সামনে, কোহলীর ভরসা বাড়াতে ঋষভ পন্থ নির্বিকল্প। ইদানীং সাদা বলের পাশাপাশি লাল বলের ক্রিকেটেও জাত চেনাচ্ছেন পন্থ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের সামনে নতুন লক্ষ্য সাজাচ্ছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের অন্যতম স্তম্ভ।
শার্দুল ঠাকুর: একটা সময় বলা হয়েছিল, শার্দুল শুধু মাত্র সাদা বলের খেলোয়াড়। কিন্তু লাল বলেও নিজের জাত চিনিয়েছেন। এ বার ব্যাটে-বলে শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার পালা। শার্দূলের পেসের সামনে বিপাকে পড়েছেন বিপক্ষের ব্যাটসম্যানেরা। ২০ ওভারের ক্রিকেটেও শার্দূলের কাছ থেকে তারই পুনরাবৃত্তি চান কোহলী-রোহিতরা। বিশ্বকাপে তিনি রয়েছেন রিজার্ভ ক্রিকেটার হিসেবে।
যশপ্রীত বুমরা: লাল বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডে নিজের জাদু দেখানোর পর এ বার টি-টোয়েন্টি মোকাবিলা। এই ধারার ক্রিকেটে যশপ্রীত বুমরাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক বোলার বললেও কম বলা হয়। শুরুতে এবং শেষে বুমরার বিষাক্ত ইয়র্কার ও স্লোয়ার বাউন্সার দুই দলের মধ্যে তফাৎ গড়ে দিতে যথেষ্ট।
দীপক চহার: আইপিএল-এ ধোনির নেতৃত্বে খেলেন। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন কোহলীর নেতৃত্বে। জাতীয় দলে ইতিমধ্যেই জাত চিনিয়েছেন মিডিয়াম পেসার। যে কোনও সময় খেলার মোড় ঘোরাতে কোহলী ভরসা রাখতেই পারেন দীপকের উপর। তিনিও দলে রয়েছে রিজার্ভ হিসেবে।
মহম্মদ শামি: দেশের পেসারদের মধ্য়ে একে বারে সামনের সারিতে মহম্মদ শামি। ডান হাতের এই পেসার ছন্দে থাকলে বিপক্ষের ঘুম উড়তে বাধ্য। একদিনের আন্তর্জাতিক এবং টেস্টে ইতিমধ্য়েই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চকে নিজেকে প্রমাণ করতে বেছে নিলে বিপক্ষের মাথাব্যথা বাড়বে, বলাই বাহুল্য।
ঈশান কিষাণ: আইপিএল-এ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে উইকেট সামলানোর পাশাপাশি ব্যাটেও সফল। সাফল্যের এমনই দাপট যে শ্রীলঙ্কাগামী ভারতীয় দলে পর্যন্ত তাঁকে জায়গা দিতে দ্বিধা করেননি নির্বাচকরা। বাঁহাতি বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান প্রথম আন্তর্জাতিকে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলই স্টেডিয়ামে পাঠিয়ে মনোভাব স্পষ্ট করেছিলেন। এ বার ঈশানকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবতে বাধ্য বিপক্ষ দল।
কেএল রাহুল: ওপেনিং নিয়ে সমস্যায় ভোগা ভারতকে বাড়তি নির্ভরতা দিয়েছেন কেএল রাহুল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রাহুলের ব্যাট যে ভাবে চলে, তাতে বিপক্ষের রাতের ঘুম অনেকাংশেই উড়তে বাধ্য। ২০ ওভারের ক্রিকেটে রাহুলের ধ্বংসলীলা দেখতে উদগ্রীব দেশ।
শ্রেয়স আইয়ার: চোটের কারণে বিশ্রামে রয়েছেন বেশ কিছু দিন। চোট সারিয়ে ফিরে এসে দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে আছেন। এক দিকে দুরন্ত ব্যাটের হাত অন্য দিকে তুখোড় উপস্থিত বুদ্ধি, শ্রেয়স আইয়ার হয়ে উঠতে পারেন টি টোয়েন্টি-তে কোহলীর তুরুপের অন্যতম তাস। তিনিও রিজার্ভ দলে রয়েছেন।
রবীন্দ্র জাডেজা: তর্কাতীত ভাবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভাল ফিল্ডার। প্রয়োজনে ব্যাট হাতে যেমন সংহার করতে পারেন বিপক্ষ বোলারদের, তেমনই বল হাতে দুমদাম তুলে নিতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে রবীন্দ্র জাডেজা অটোম্যাটিক চয়েস, সেটা বলাই যায়।
বরুণ চক্রবর্তী: বিস্ময় স্পিনারকে চিনতে ভুল করেন তাবড় ব্যাটসম্যানেরা। ১২০ বলের খেলায় বরুণের ৪ ওভার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বহু ম্যাচেই। আইপিএল-এ কলকাতার হয়ে খেলা এই বিস্ময় স্পিনার বিশ্বকাপে হয়ে উঠতে পারেন কোহলীর অন্যতম ব্রহ্মাস্ত্র।
ভুবনেশ্বর কুমার: এই মুহূর্তে টি টোয়েন্টি বা একদিনের আন্তর্জাতিক, ভুবনেশ্বর কুমারের বদলি পাওয়া কঠিন। বলের উপর যেমন নিয়ন্ত্রণ, তেমনই ধারাবাহিক ভাবে স্লোয়ার দিয়ে ব্যাটসম্যানের ছন্দ নষ্ট করা, ভুবি ভারতের অন্যতম সেরা বোলার। তাঁর দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
রাহুল চাহার: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ইতিমধ্যেই আইপিএল-এ জাত চিনিয়েছেন। জাতীয় দলের হয়েও শ্রীলঙ্কা সফরে ভাল খেলেছেন তিনি।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: এই দলের সব থেকে বড় চমক। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে তাঁকে এখনও দলে নেওয়া হয়নি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি কোহলীদের দলে।
অক্ষর পটেল: বছরের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ইতিমধ্যেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জাদু দেখানোর পালা।