হোটেলে পৌঁছে ভাংড়ায় মেতে উঠলেন রোহিত শর্মা। ছবি: এক্স।
ভারতীয় সময় বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ বার্বাডোজ় থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন রোহিত শর্মারা। ১৬ ঘণ্টা পর সেই বিমান নামল দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তখন সকাল ৬.০৭ মিনিট। প্রায় ৪০ মিনিট পর বিমানবন্দর থেকে বার হয়ে বাসে উঠলেন রোহিতেরা। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে দিল্লির হোটেলে। যেটুকু সময় ভারতীয় দলকে দেখা গেল তাতে মনে হতেই পারে, এখনই আরও একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নামতে তৈরি গোটা দল। কারও চোখেমুখে ক্লান্তির কোনও ছাপ নেই। চনমনে রোহিতেরা তৈরি বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে মেতে উঠতে।
সমর্থকেরা অবাক হয়ে যেতে পারেন অধিনায়ক রোহিতকে দেখেই। হোটেলে পৌঁছে বাস থেকে মাটিতে পা দিয়েই নেচে উঠলেন বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। ভাংড়ার তালে নাচলেন মুম্বইয়ের রোহিত। গলায় দুলছে সোনার পদক। এক হাতে ধরে রেখেছেন ব্যাগ। কিন্তু নাচে খামতি নেই। একগাল হাসি নিয়ে নেচে চলেছেন অক্লেশে।
দিল্লির হোটেলে উপস্থিত ছিল ব্যান্ড। রোহিতদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিতেরা যে সেখানে নাচতে শুরু করে দেবেন, তা ভাবা যায়নি। শুধু রোহিত নন, নাচের তালে পা মেলালেন সূর্যকুমার যাদব, যশস্বী জয়সওয়াল, হার্দিক পাণ্ড্যেরাও। হার্দিককে নাচতে দেখে মিটিমিটি হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন বিরাট কোহলি। তার পিছনে কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তাঁরা না নাচলেও কারও মুখে ক্লান্তির কোনও ছাপ ছিল না।
শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৭ রানে জিতেছিল ভারত। তার পর থেকে বার্বাডোজ়েই আটকে থাকতে হয়েছিল রোহিত শর্মাদের। ঘূর্ণিঝড় বেরিলের কারণে বিমান পরিষেবা বন্ধ ছিল সে দেশে। তাই পরিবার-সহ ক্যারবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আটকে ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। অবশেষে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে। সেই বিমানেই ১৬ ঘণ্টার যাত্রা। তাতেও কোনও ক্লান্তি নেই বিরাটদের।
বিমানে আসার সময়ও নানা মেজাজে কাটিয়েছেন ক্রিকেটারেরা। একই বিমানে ছিলেন সাংবাদিকেরা। কখনও তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন, কখনও ট্রফি নিয়ে আনন্দ করেছেন। বিমানের ভিতরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিশ্বকাপের ট্রফি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্রিকেটারদের হাতে ঘুরেছে সেই ট্রফি। কেউই পোজ় দিয়ে ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। প্রথমে ঋষভ পন্থ ট্রফি হাতে নিয়ে নাচাতে থাকেন। এর পর যশপ্রীত বুমরা সন্তানকে কোলে নিয়ে ট্রফি দেখাতে থাকেন।
অক্ষর পটেল এবং মহম্মদ সিরাজকে দেখা যায় ট্রফি নিজেদের আসনের পাশে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে। সিরাজ বলেন, “অসাধারণ একটা অনুভূতি হচ্ছে। এই ট্রফির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। অবশেষে ট্রফিটা হাতে এসেছে। আমি আপ্লুত। ১৫ জনের এই দলে থাকতে পেরে খুশি।”
ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌরকে দেখা যায় একটি জার্সিতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সই নিতে। রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে তাঁর মেয়াদও সম্ভবত শেষ হচ্ছে। তাই বিদায়ী মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন তিনিও।
এত কিছুর পরেও দেশে ফিরেই ফুরফুরে রোহিতেরা। বিমানবন্দর থেকে প্রথমে বেরিয়ে আসেন সিরাজ। তার পর একে একে বাকি ক্রিকেটারেরা বাসে ওঠেন। রাত তিনটে থেকে বিশ্বজয়ীদের দেখার জন্য ভিড় জমেছিল ছিল বিমানবন্দরে। যদিও সমর্থকদের থেকে অনেক দূরে ছিল দলের বাস। সেই বাসের প্রথম আসনে বসেছিলেন বিরাট। বিমানবন্দর ছেড়ে বাস বেরিয়ে আসার সময় তিনি দেখতে পান অপেক্ষারত সমর্থকদের। যাঁদের দেখে অবাক হয়ে যান বিরাট। তাঁর মুখে তখন হাসি। বাসের মধ্যে থেকে কাউকে ডেকে দেখালেন সমর্থকদের ভিড়।
বিরাটদের প্রথম বাস বেরিয়ে যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন রোহিত। তাঁর হাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সমর্থকদের দেখতে পেয়ে ট্রফি তুলে ধরেন। যেন বলতে চাইলেন, ‘এটা তোমাদের জন্য’।
হোটেলে ফিরে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বদলে ফেললেন জার্সি। রোহিতদের গায়ে এখন ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা ভারতীয় জার্সি। যাতে রয়েছে দু’টি তারা। ২০০৭ সালের পর আরও এক বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের চিহ্ন। হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কেক কাটলেন রোহিত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একটি মডেল বসানো সেই কেকের উপর। এই প্রতিযোগিতা খেলতে যাওয়ার আগে কেক কেটেছিল ভারতীয় দল। সেই সময় রোহিত কেক খেতে চাননি। বলেছিলেন, কাপ জেতার পর খাবেন। কথা রেখেছেন রোহিত।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে ভারতীয় দল। সঙ্গে রয়েছেন বোর্ড সচিব জয় শাহ। দিল্লি থেকে এর পর মুম্বই যাবেন তাঁরা। সেখানে ট্রফি জয়ের উৎসবে মেতে উঠবে দল। কিন্তু রোহিতেরা বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা তৈরি। কোনও ক্লান্তি নেই তাঁদের। সারা দিন মেতে থাকবেন রোহিতেরা।