বিরাট কোহলি (বাঁ দিকে) এবং রোহিত শর্মা। — ফাইল চিত্র।
শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় ২০০৭ সালে। তার পরে ১৭ বছর কেটে গিয়েছে। হয়ে গিয়েছে আরও সাতটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আর এক বারও ট্রফি জেতেনি ভারত। এক বার ফাইনালে ওঠা ছাড়া বলার মতো কিছু নেই। সেই অধরা লক্ষ্য কি পূরণ হবে এ বার? সম্ভবত রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। শেষ অভিযানে দলকে কি বিশ্বজয়ী করতে পারবেন তাঁরা?
একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলে রোহিত ছিলেন। কোহলি জিতেছেন এক দিনের বিশ্বকাপ। কিন্তু দু’জন মিলে শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছাড়া আর কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতা জেতেননি। আধুনিক সময়ে ভারতের অন্যতম সেরা দুই খেলোয়াড়ের থেকে ‘ওয়ান লাস্ট ডান্স’ দেখবে ক্রিকেটবিশ্ব?
বুধবার আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ বারের বিশ্বকাপে অভিযান শুরু ভারতের। তার আগে এই প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০২৬ সালে। হবে এ দেশেই। তত দিনে রোহিত ৪০ এবং কোহলি ৩৮ হয়ে যাবেন। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আরও এক বছর পরে। দু’জনের পক্ষে কি তত দিন খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? ভাবলে হয়তো একটু বাড়াবাড়িই করা হবে।
রোহিত-কোহলি নিজেরাও সে কারণে প্রাণপণ একটা চেষ্টা করবেন আর এক বার বিশ্বজয়ীর পদক গলায় ঝোলানোর। ১৭ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করে চলা দুই ক্রিকেটারের কাছে সেটাই হবে সেরা উপহার।
মাঠের বাইরে রোহিত, কোহলি মোটেই বন্ধু নন। অতীতে সাজঘরে তাঁদের ঝামেলা থেকে শুরু করে দলের মধ্যে বিভাজন হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। দু’জনেই তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, পরস্পরের প্রতি সমীহ এবং ভালবাসা ঈর্ষা করার মতোই।
মানুষ এবং ক্রিকেটার হিসাবে দু’জনে একে অপরের বিপরীত। কোহলির খেলা এবং মেজাজ দুটোতেই আগ্রাসন থাকে। রোহিত সেখানে মেজাজের দিক থেকে ধীরস্থির। কিন্তু খেলার মাঠে আগ্রাসী। সাদা বলের ক্রিকেটার হিসাবে পরিচিত রোহিত টেস্ট ঘরানার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন অনেকটাই পরের দিকে। সেখানে কোহলি নিজেকে তিন ফরম্যাটেই বিশ্বসেরা করে তুলেছেন। বিশ্বের সর্বত্র রান রয়েছে তাঁর।
১৯৮২ এবং ১৯৮৬ ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিল দল বিশ্বের অন্যতম সেরা ছিল। সক্রেটিস, জিকো, কারেকা, ফালকাও, আলেমাওয়ের মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার ছিলেন দলে। সেই দল বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। রোহিত, কোহলির মতো বিশ্বসেরা ব্যাটার থাকার পরেও ভারতকে বিশ্বকাপ দিতে না পারলে তাদের সঙ্গে ব্রাজিলকে আলাদা চোখে দেখা যাবে না।
এই অবস্থায় ভারতীয় দলকে তাতাতে পারে সাত মাস আগের স্মৃতি। আমদাবাদে নভেম্বরের সেই রাতের কথা অনেকেই ভুলে যাননি। অস্ট্রেলিয়ার কাছে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে হেরে রোহিত, কোহলির মতো ক্রিকেটারের চোখেও দেখা গিয়েছিল জল। সেটাই তাতানোর পক্ষে যথেষ্ট।
বুধবার উল্টো দিকে থাকা আয়ারল্যান্ড অবশ্য সহজ পরীক্ষা নয়। পল স্টারলিং, জশ লিটল, হ্যারি টেক্টর, অ্যান্ডি বালবির্নির মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারেরা রয়েছেন। মন্থর পিচ এবং খারাপ আউটফিল্ড ভারতের কাজ কঠিন করতে পারে। বাঁ হাতি স্পিনার জর্জ ডকরেলকে ভারতীয়েরা কেমন খেলেন তার দিকে অনেকের নজর থাকবে।
স্পিন বিভাগে ভারত প্রতিপক্ষের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। পেস বিভাগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে আমেরিকার মাঠে স্পিনের থেকে পেস বেশি সাহায্য করেছে। এই অবস্থায় আয়ারল্যান্ডের বাঁ হাতি পেসারদের সামলাতে হবে ভারতীয়দের।
অতীতে আয়ারল্যান্ডের মতো দলকে দুর্বল বলে দেগে দেওয়া যেত। কিন্তু তারা সম্প্রতি পাকিস্তানকে হারিয়েছে। কিছু দিন আগে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকেও। লিটলের মতো ক্রিকেটার আইপিএলে খেলে। এখন কোনও ভাবেই তাদের দুর্বল বলা চলে না।
রোহিতদের এখন লক্ষ্য ভাল শুরু। পচা শামুকে যাতে পা না কাটে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।