রাহুল দ্রাবিড়। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপ জিততে না পারার যন্ত্রণাটা এত দিন ধরে বুকে চেপে রেখেছিলেন। খেলোয়াড়জীবনে পারেননি। কোচ হিসাবেও গত ১২ মাসে দু’বার কাছাকাছি পৌঁছে ঘোচাতে পারেননি চায়ের কাপ আর ঠোঁটের দূরত্ব। এত দিনে একটা বিশ্বকাপের সঙ্গে জুড়ে গেল তাঁর নাম। রোহিত শর্মার দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কথায় ফুটে উঠল সেই অব্যক্ত যন্ত্রণা।
১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল দ্রাবিড়ের। একটা বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হল ২৮ বছর। তাই শনিবার ছাত্রদের বিশ্বজয় দেখে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি। প্রকাশ্যে ধরা দিয়েছেন অচেনা রূপে। পরে তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘দু’বছরের একটা যাত্রা শেষ হল এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। একটা ভারসাম্য যুক্ত দল তৈরি করতে চেয়েছিলাম। খেলোয়াড়দের মধ্যে নির্দিষ্ট মানের দক্ষতা চেয়েছিলাম। প্রয়োজনীয় কিছু ক্রিকেটারকে চেয়েছিলাম। ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকেই দলে আলোচনা শুরু হয়েছিল, কী ভাবে বিশ্বকাপ জেতা যায়। আমরা কিন্তু এই বিশ্বকাপের জন্য পরিশ্রম করিনি। গত দু’বছরের পরিশ্রমের ফল এই ট্রফি।’’
এটুকু বলার পরই দ্রাবিড়ের মুখে শোনা গিয়েছে তাঁর আক্ষেপ, যন্ত্রণার কথা। অনেকটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মতো করে দ্রাবিড় বলেছেন, ‘‘নিজের সেরাটা দিলেও খেলোয়াড় হিসাবে একটা ট্রফি জেতার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমি ভাগ্যবান এই দলের কোচ হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। একদল দুর্দান্ত ছেলে আমার বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছে। দুর্দান্ত অনুভূতি। আমি কোনও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাজ করিনি। শুধু নিজের কাজটা করার চেষ্টা করেছি। সত্যি, দুর্দান্ত একটা যাত্রা শেষ হল।’’
শনিবারই ছিল ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে দ্রাবিড়ের শেষ ম্যাচ। সেই হিসাবে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য দ্বিতীয় সুযোগ পেতেন না। ভরসা রেখেছিলেন ক্রিকেটারদের উপর। দ্রাবিড় বলেছেন, ‘‘এখন ভারতীয় দলে যে ক্রিকেটারেরা খেলছে, তারা দারুণ প্রতিভাবান। ওদের আত্মবিশ্বাস, লড়াই করার ক্ষমতা অসাধারণ। খুবই উঁচু মানের। আমি নিশ্চিত আগামী ৫-৬ বছরে ভারত আরও অনেক ট্রফি জিতবে।’’
বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা একসঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর ঘোষণা করায় একটু হতাশ তিনি। এই দলের সঙ্গে আর থাকতে পারবেন না বলে বিশ্বজয়ের মাঝেও দ্রাবিড়ের মনখারাপ। তিনি বলেছেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে রোহিত, কোহলির অভাব অনুভব করব। মানুষ হিসাবে আমাকে বার বার বিস্মিত করেছে ওরা। সব সময় সম্মান পেয়েছি। যত্ন পেয়েছি। ক্রিকেটের প্রতি ওদের দায়বদ্ধতা দুর্দান্ত। সব সময় তরতাজা থাকে। ওদের থেকে দূরে থাকতে ব্যক্তিগত ভাবে একটু খারাপই লাগবে।’’
ভারতীয় দলের সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিচ্ছেদ হচ্ছে দ্রাবিড়ের। অভিজ্ঞ, শান্ত স্বভাবের প্রাক্তন ক্রিকেটারের সামনে এখন অবসর। বিশ্রাম নেওয়ার অনেক সময় পাবেন। দল গঠন, পরিকল্পনা তৈরি, ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতে হবে না। তবু ক্রিকেটের থেকে দূরে থাকতে পারবেন কি বিশ্বকাপজয়ী কোচ?