প্রশ্ন: সস্ত্রীক আন্দ্রে রাসেল। এ বারের আইপিএলে কি প্রথম থেকে খেলতে দেখা যাবে ক্যারিবিয়ান তারকাকে? ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাসের জেরে আইপিএল ২৯ মার্চেই শুরু করা যাবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে বিদেশি ক্রিকেটারদের ভাগ্যের উপরে। বৃহস্পতিবার সরকারের স্বাস্থ্য দফতর থেকে নতুন নির্দেশিকা আসার পরে বিদেশের ফুটবল লিগের মতো ভারতেও সব খেলা তড়িঘড়ি ফাঁকা স্টেডিয়ামে করার ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু আইপিএল হবে কি হবে না, তা শুধুই ফাঁকা স্টেডিয়ামে ম্যাচ করার উপর নির্ভরশীল নয়। বিদেশিদের ভিসা নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তা সব চেয়ে জোরে ধাক্কা দিতে চলেছে আইপিএলকেই।
সরকার থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে বিদেশিদের শুধু কূটনৈতিক বা কাজের ভিসার আবেদন মঞ্জুর করা হবে। এই নির্দেশ বহাল থাকলে আইপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের ভিসা পাওয়া কঠিন হতে পারে। আর কে না জানে, বিশ্বের সব চেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগে যে আটটি দেশ খেলে, তাতে অন্তত তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ বিদেশিদের উপস্থিতি রয়েছে। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, এমনিতেই প্রত্যেক ম্যাচে চার জন করে বিদেশি খেলানো যায়। আদতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিদেশিদের মিশ্রণে তৈরি হওয়া শক্তিই আইপিএলের সেরা আকর্ষণ এবং জনপ্রিয়তার মূলে।
শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের নিউক্লিয়াস যেমন বিদেশিরা। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারাইন। অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স এবং ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অইন মর্গ্যানকে কেনা হয়েছে এ বারের নিলাম থেকে। এ ছাড়াও রয়েছেন ক্রিস গ্রিন, টম ব্যান্টন, হ্যারি গার্নি, লকি ফার্গুসনের মতো ক্রিকেটারেরা। শুধু তা-ই নয়, নাইট সংসারে কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফের মধ্যেও নব্বই শতাংশ বিদেশি। হেড কোচ নিউজ়িল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, মেন্টর অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড হাসি, বোলিং কোচ নিউজ়িল্যান্ডের প্রাক্তন মিডিয়াম পেসার কাইল মিলস। নাইট সংসারে খুব পরিচিত কোনও সহকারী কোচই নেই। তাই বিদেশিদের আসা আটকে গেলে জোরাল ধাক্কা খেতে পারে কেকেআর।
তবে শুধু কেকেআর নয়, বিদেশিদের ভিসা নিয়ে উদ্বিগ্ন সব দলই। ১৫ এপ্রিল নাগাদ যদি নিষেধাজ্ঞা ওঠেও, তত দিনে দু’সপ্তাহের বেশি খেলা হয়ে যাবে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে বিদেশিদের মধ্যে আছেন কায়রন পোলার্ড, লাসিথ মালিঙ্গা, কুইন্টন ডি’কক, ট্রেন্ট বোল্ট, কেকেআর থেকে যোগ দেওয়া ক্রিস লিন-রা। মুম্বইয়ের অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিভাগও যথেষ্ট শক্তিশালী। রোহিত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্যর মতো ম্যাচউইনাররা সব রয়েছেন। তেমনই ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিভাগে খুবই শক্তিশালী মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। বিদেশি ক্রিকেটারদের আসা আটকে গেলে ধাক্কা খেতে পারে বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। তাদের দলে রয়েছে এবি ডিভিলিয়ার্স, অ্যারন ফিঞ্চ, ক্রিস মরিস, ডেল স্টেনরা। দিল্লি ক্যাপিটালসে আছেন কাগিসো রাবাডা, কিমো পল, জেসন রয়, ক্রিস ওকস, বিশাল অর্থে কেনা ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিমরন হেটমায়ার। রাজস্থান রয়্যালসে অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। সঙ্গে বেন স্টোকস, জস বাটলার, ডেভিড মিলার। চোট থাকা জোফ্রা আর্চারকেও খেলানোর চেষ্টা করছিল তারা। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের প্রধান শক্তি তাদের দুই বিদেশি ওপেনার, ডেভিড ওয়ার্নার এবং জনি বেয়ারস্টো। তিন নম্বরে কেন উইলিয়ামসন। বোলিংয়ে তুরুপের তাস আফগান লেগস্পিনার রশিদ খান। বেশির ভাগ দলের হেড কোচ এবং প্রধান সহকারী কোচও বিদেশি। দিল্লিতে রিকি পন্টিং, রাজস্থানে মেন্টর শেন ওয়ার্ন, হায়দরাবাদে বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডের কোচ ট্রেভর বেলিস, চেন্নাইয়ে স্টিভন ফ্লেমিং, বেঙ্গালুরুর মাইক হেসন। কিংস ইলেভেনে ফিল্ডিং কোচ জন্টি রোডস। বেশির ভাগ দলে ফিজিয়ো, ট্রেনার বিদেশি। ২০ মার্চ নাগাদ এদের শিবির শুরুও হওয়ার কথা ছিল। এখন সব কিছুই স্থগিত রাখতে হচ্ছে। ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের ক্রিকেটারেরা ইতিমধ্যে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন। তাঁদের প্র্যাক্টিস চালু রাখা হচ্ছে।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আজ, শুক্রবারই মুম্বই পৌঁছে জরুরি বৈঠকে বসছেন সচিব জয় শাহ, আইপিএল চেয়ারম্যান ব্রিজেশ পটেলদের নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ সব বোর্ড কর্তার এই বৈঠকে থাকার কথা। শীর্ষ কর্তারা নিজেদের মধ্যে এক দফা আলোচনা করার পরে শনিবার আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক। সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি ক্রিকেটারদের ভিসার অনুমতি দেওয়া হয় কি না, সেটাই এখন মুখ্য চর্চার বিষয়। যদি ভিসা মঞ্জুর করে দেওয়া হয়, তা হলে নির্ধারিত দিনে অর্থাৎ, ২৯ মার্চেই ফাঁকা স্টেডিয়াম করে দিয়ে শুরু হতে পারে আইপিএল। ওয়াকিবহাল মহলে কথা বলে মনে হল, সকলেই বুঝতে পারছেন এক) করোনাভাইরাসের জেরে আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাই খেলারও আগে আসছে সাবধানতা। দুই) আইপিএলের প্রধান আয় হয় টিভি সম্প্রচার থেকে। স্টেডিয়ামের টিকিট বিক্রি থেকে খুব বেশি টাকা আসে না, তাই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে না।
আইপিএলের রাজ্যগুলির মধ্যে কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এই দুই রাজ্যে ম্যাচ করা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের প্রধান চিন্তা এখন বিদেশি ক্রিকেটারদের ভিসা নিয়ে। বিদেশিহীন হয়ে গেলে আইপিএলের জৌলুস তো কমবেই, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিও দাবি তুলতে পারে, টুর্নামেন্ট পিছিয়ে দেওয়া হোক। কারও কারও মত, ম্যাচ কমিয়ে পরে ছোট পরিসরে করা হোক কিন্তু বিদেশিদের নিয়ে হোক। এই প্রস্তাব ভারতীয় বোর্ড বা সম্প্রচারকারী চ্যানেলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় কি না, তা দেখার। সূত্রের খবর, বোর্ড চেষ্টা করবে বিদেশি ক্রিকেটারদের ভিসার অনুমতি জোগাড় করার। সারা বিশ্বে উদ্বেগের আবহে সেই চেষ্টা কি সফল হবে? শনিবারের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।