ধোনির দলে বাড়ছে উদ্বেগের কালো মেঘ
CSK

আচমকাই দেশে ফিরলেন রায়না, নেই আইপিএলে

সিএসকে ম্যানেজমেন্ট এবং অধিনায়ক ধোনির কাছেও তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন রায়না, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ০৪:০৬
Share:

 নজরে: ধোনি এ বার পাশে পাচ্ছেন না সফল সতীর্থ রায়নাকেও। ফাইল চিত্র

করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের অন্দরমহলে ফের বিস্ফোরণ ঘটল চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই। এ বার আইপিএলে তাদের সব চেয়ে সফল ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না আচমকা ফিরে এলেন দেশে। সরকারি ভাবে কেউ এ নিয়ে মুখ না খুললেও জানা গিয়েছে, রায়নার এমন আচমকা ফিরে আসার পিছনে রয়েছে চেন্নাই শিবিরে করোনা হানা নিয়ে তৈরি হওয়া ভয়।

Advertisement

সিএসকে ম্যানেজমেন্ট এবং অধিনায়ক ধোনির কাছেও তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন রায়না, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। সিএসকে হোটেল কার্যত হটস্পটে পরিণত। এক সঙ্গে ১৩ জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে অনেকেই বেসামাল। রায়নাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি শান্ত হননি বলেই বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। মানসিক ভাবে তিনি করোনা আক্রান্ত শিবিরে থাকার সাহস পাচ্ছেন না, এমনটাই না কি ম্যানেজমেন্টকে জানান।

সিএসকে যদিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রায়নাকে এ বারের আইপিএলে আর পাওয়া যাবে না এবং তাঁর দেশে ফিরে যাওয়ার কারণ ব্যক্তিগত। সিএসকে ম্যানেজমেন্ট তাঁর সেই ব্যক্তিগত কারণকে সম্মান করে এবং পরিবারের পাশে থাকছে। ভারতীয় বোর্ড থেকে রায়না নিয়ে কিছুই জানানো হয়নি।

Advertisement

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই চাউর হয়ে যায় একটি খবর যে, পাঠানকোটে রায়নার এক কাকার বাড়িতে ডাকাতের দল হানা দিয়েছে। ডাকাতদের আক্রমণে নিহত হয়েছেন কাকা, গুরুতর জখম কাকিমা। ভাইবোনেরাও আহত হয়েছেন। এই ভয়াবহ ঘটনায় ভীষণ ভাবে কম্পিত রায়না পরিবার। অনেকে ভাবতে থাকেন, সেই কারণেই হয়তো তড়িঘড়ি ফিরে আসছেন রায়না।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গোটা টুর্নামেন্ট থেকে কেন সরে দাঁড়ালেন রায়না? আইপিএল শুরু হতে এখনও দেরি আছে। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের খেলার কথা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সর সঙ্গে। চেন্নাই শিবিরে করোনার হানার জেরে সূচিতে উদ্বোধনী ম্যাচে তাদের রাখা যাবে কি না, সেটাও দেখার। তার উপরে আইপিএল চলবে প্রায় দু’মাস। এত আগে থাকতে সম্পূর্ণ টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত কি নেবেন কেউ? চেন্নাই শিবির থেকে কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও করোনার হানায় যে ধোনিদের দলে উদ্বেগের হাওয়া ছড়াতে শুরু করেছে, তা আর গোপন থাকছে না। রায়না সেই অশান্ত হাওয়ার প্রথম শিকার হয়ে থাকলে অবাক হওয়ার নেই।

কাকার বাড়িতে ডাকাতের হানার ভয়ঙ্কর ঘটনার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের ভয়ে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান চেন্নাই শিবির ত্যাগ করতে চাইলেন কি না, সেই প্রশ্নও সারা দিন ধরে ঘুরল ক্রিকেট মহলে। চেন্নাইয়ের যে শিবির থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ, তাতে ধোনির সঙ্গে ছিলেন রায়নাও। সেই শিবিরেই থাকা দুই ক্রিকেটারের করোনা পরীক্ষার ফল ‘পজ়িটিভ’ এসেছে বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে আমিরশাহিতে গিয়ে আইপিএলে অংশ নেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে ক্রিকেটারদের কারও কারও উপরে পারিবারিক চাপ থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দু’টি ছোট মেয়ের বাবা রায়না ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা জানার অপেক্ষায় ক্রিকেট মহল। তবে এটা জানার জন্য অপেক্ষার কোনও দরকার নেই যে, আইপিএলের ইতিহাসে সব চেয়ে সফল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক জন রায়না। তাঁর অনুপস্থিতি বিরাট ধাক্কা হতে যাচ্ছে ধোনির দলের জন্য।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড শনিবার পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে নীরব। শুক্রবার সারা দিন ধোনির দলে করোনার হানা নিয়ে আশ্চর্যজনক ভাবে চুপচাপ থাকার পরে শনিবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড করোনা হানার কথা স্বীকার করেছে। তারা জানায়, ১৩ জন কোভিড-১৯ পজ়িটিভ হয়েছেন। কিন্তু কোন কোন দলের সদস্য এই ১৩ জন, তার কোনও উল্লেখ নেই। তবে যা খবর, ১৩ জনের প্রত্যেকেই সিএসকে সদস্য। এঁদের মধ্যে দু’জন ক্রিকেটার। বাকিরা কোচিং দল এবং অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের প্রত্যেককেই অন্য হোটেলে নিভৃতবাস পর্বে পাঠানো হয়েছে। ১৪ দিন সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে দু’বার করোনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ হয়ে তাঁরা ফের দলে যোগ দিতে পারবেন।

দুবাই আসার আগে সিএসকে যে প্রস্তুতি শিবির করেছিল, তা এখন ভীষণ ভাবেই চর্চায়। চেন্নাইয়ের অন্যতম ‘হটস্পট’ ছিল চিদম্বরম স্টেডিয়াম সন্নিহিত অঞ্চল। সেখানেই ধোনিদের শিবির হয়েছিল। করোনার থাবা দু’জন ক্রিকেটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না কি আরও সংক্রমণের খবর আসবে, সেটা নিয়েই এখন উদ্বেগের প্রহর চলছে সিএসকে এবং আইপিএলের অন্দরমহলে। তেমনই নজরে উঠে এসেছে সিএসকে-র ভ্রমণ ভঙ্গি। বিমানবন্দরের ভিতরে, উড়ানের মধ্যে খুবই উদাসীন ভাবে দেখা গিয়েছে তাঁদের। অনেক ছবিতেই তার প্রমাণ মিলেছে। এমনকি, অনেক সময় ‘মাস্ক’ পর্যন্ত পরেননি তাঁরা। কারও কারও মনে হচ্ছে, ভারতীয় বোর্ড এখনই জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে কড়া মনোভাব না নিলে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। তখন আইপিএল হওয়া নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন উঠে যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement