যুজ়বেন্দ্র চহাল
পঞ্জাবকে সহজে হারানোর পরে এ বার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সামনে একটাই লক্ষ্য। আজ, বুধবার, ছন্দহীন সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদকে হারিয়ে প্রথম দু’দলের মধ্যে থেকে লিগ পর্ব শেষ করা। এই ম্যাচটা জিতলে চেন্নাই সুপার কিংসকে ধরে ফেলবে ওরা। দু’দলের হাতে তখন থাকবে একটা করে ম্যাচ। আরসিবিকে শেষ ম্যাচটা খেলতে হবে দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে। যেটা ফাইনালের আগে একটা ফাইনাল হয়ে উঠতে পারে।
এ বারের নিলাম থেকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নেওয়াটা সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছে ব্যাঙ্গালোরের। আর ম্যাক্সওয়েলও সেই আস্থার মর্যাদা দিয়েছে। চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করেছে। আগের মতো আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল না ও। হয়তো ওর উপরে সে রকম প্রত্যাশাও ছিল না। যে কারণে খোলা মনে খেলে নিজের সেরাটা বার করে আনতে পেরেছে অস্ট্রেলীয় ব্যাটার। অনেক দিন বাদে খেলার সময় ম্যাক্সওয়েলের মুখে এ রকম হাসি দেখা গেল। আর ও যখন এই রকম বিধ্বংসী ব্যাট করে, তখন দর্শকদের মুখেও হাসি ফোটে। সেই সব দর্শক বিপক্ষ শিবিরেরও হতে পারে।
আরসিবির হয়ে ওপেন করতে নেমে অধিনায়ক বিরাট কোহালিও দলকে এটা ভাল মঞ্চ তৈরি করে দিচ্ছে। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচে এ বি ডিভিলিয়ার্সের ব্যাট থেকে নিখুঁত টাইমিং দেখা গেল। সব মিলিয়ে আরসিবির ব্যাটিংকে কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী দেখাচ্ছে।
ব্যাঙ্গালোর আর একটা ব্যাপার খুব ভাল করছে। মাঝের ওভারগুলোয় প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের দ্রুত রান তুলতে দিচ্ছে না। আর এর জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য লেগস্পিনার যুজ়বেন্দ্র চহালের। ওর স্পিনের মায়াজালে আটকে যাচ্ছে ব্যাটাররা। ওরা বুঝতেই পারছে না কী ভাবে খেলবে চহালকে। এই রকম উচ্চমানের লেগস্পিন বোলিং দেখার পরে একটা প্রশ্নই মনে জাগে। কী ভাবে চহালকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়া হল? তবে এটাও বলতে হবে, যে সব স্পিনার ভারতের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছে, তারা কিন্তু আইপিএলের এই পর্বে যথেষ্ট ভাল খেলছে। যেমন, রবীন্দ্র জাডেজা, সি ভি বরুণ, আর অশ্বিন, অক্ষর পটেল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে যত খেলা গড়াচ্ছে, পিচও কিন্তু তত মন্থর হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বকাপে ভারতের চিন্তা হতে পারে ওদের পেসাররা। আইপিএলে কিন্তু বেশ নিষ্প্রভ দেখিয়েছে ভারতীয় পেসারদের। এর পরে যদি হার্দিক পাণ্ড্য বিশ্বকাপের আগে বল করতে না শুরু করে, তা হলে কিন্তু দলের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হবে।
মনে করা হচ্ছিল, প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে হায়দরাবাদ খোলা মনে খেলতে পারবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না ওরা। যে কারণে লিগ টেবলের একেবারে শেষে থাকতে হচ্ছে ওদের। কোনও দ্রুত গতির বোলার না থাকা ভুগিয়েছে হায়দরাবাদকে। আগের ম্যাচে নবাগত উমরান মালিক ভাল গতিতে বল করেছে। কিন্তু ও এখনও অনভিজ্ঞ। ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে ওর আরও কিছু দিন সময় লাগবে। হায়দরাবাদের তরুণ ক্রিকেটারেরাও কিন্তু নিজেদের প্রতিভার উপরে সুবিচার করতে পারেনি। এটা আরও একটা ব্যাপার বুঝিয়ে দেয়। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটের খেলা দেখে মাতামাতি করাটা সহজ। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, সেখানে ওদের প্রতিপক্ষও কিন্তু সমান অনভিজ্ঞ। এর পরে যখন আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় ওরা খেলতে নামে, তখন হাবুডুবু খায়। নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সময় লাগে ওদের।
খুব কমই আছে, যারা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে এসে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্যের মুখ দেখেছে। একটা উজ্জ্বল উদাহরণ অবশ্যই ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে সফল হওয়ার পরে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শাসন করেছে। কিন্তু বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই সে কথাটা খাটে না।
এই প্রতিযোগিতার স্লোগান হচ্ছে— ‘যেখানে প্রতিভাদের জন্য সুযোগ অপেক্ষা করে থাকে।’ কিন্তু হায়দরাবাদের ক্ষেত্রে বলা যায়, ওদের জন্য সুযোগের পর সুযোগ এসেছে। কিন্তু সে রকম প্রতিভা দেখা যায়নি। (টিসিএম)