প্রেরণা: অধিনায়ক হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটকে তিনি দিয়েছিলেন নতুন দিশা। এ বার সিন্ধুদের পদক জয়ের মন্ত্র দেবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
অলিম্পিক্সে পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধুদের উদ্বুদ্ধ করতে আসরে নামতে পারেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক। তিনি আবার বর্তমান বোর্ড প্রেসিডেন্টও। নাম, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
আসন্ন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতীয় দলের ‘গুডউইল অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে ভাবা হচ্ছে সৌরভের নাম। শনিবার রাতের দিকে জানা গেল, বিরাট কোহালিদের বোর্ড প্রেসিডেন্টকে গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও পাঠিয়ে দিয়েছে ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (আইওএ)। তাতে সবিনয়ে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার সেক্রেটারি জেনারাল রাজীব মেহতা এমনও লিখেছেন যে, সৌরভ দেশের সমস্ত ক্রীড়াবিদের কাছে উদাহরণ। বিরাট এক অনুপ্রেরণা। ভারত অধিনায়ক হিসেবে তাঁর অবদানের কথা মাথায় রেখে এমনও লিখেছেন রাজীব মেহতা যে, এরকম একজন দৃষ্টান্তমূলক নেতাকে দূত হিসেবে পেলে ভারতীয় অলিম্পিক দলই উপকৃত হবে। বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে সৌরভকে যে, তিনি যেন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
সৌরভ এখনও পর্যন্ত ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থাকে জবাব পাঠাননি। তবে সম্মতি জানিয়েই যে তিনি উত্তর দেবেন, এ ব্যাপারে বিশেষ সংশয়ের অবকাশ নেই। অলিম্পিক্সে ভারতীয় সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হওয়া যথেষ্ট সম্মানের ব্যাপার। গত বার রিয়ো অলিম্পিক্সে শুভেচ্ছা দূত করা হয়েছিল সচিন তেন্ডুলকর, অভিনব বিন্দ্রা, সলমন খান এবং এ আর রহমানকে। এ বার সৌরভের সঙ্গে বাকি কারা থাকবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে বলিউড এবং সঙ্গীতের জগত থেকে বড় নামেরা যুক্ত হলে অবাক
হওয়ার নেই।
ভারতীয় অলিম্পিক দল এ বারে যথেষ্ট বড় মাপের। নানা খেলার প্রতিনিধি নিয়ে প্রায় ১২০জনের দল হতে পারে। আইওএ সূত্রের খবর, টোকিয়ো রওনা হওয়ার আগে সবাইকে একত্রিত করে ‘মোটিভেশনাল টক’ দেওয়া হতে পারে। আলোচনা প্রাথমিক স্তরে থাকলেও মনে করা হচ্ছে, ওই অনুষ্ঠানে অবশ্যই ডাকা হতে পারে সৌরভকে। তার সঙ্গে অন্যান্য যে শুভেচ্ছা দূতরা থাকবেন, তাঁদেরও বক্তব্য রাখার জন্য ডাকা হতে পারে।
এ বারে সৌরভকে বেছে নেওয়ার কারণ কি? ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার কয়েকজন কর্তার সঙ্গে কথা বলে যে ইঙ্গিত পাওয়া গেল, অধিনায়ক সৌরভের সেই আগ্রাসী নেতৃত্বের ভঙ্গি এবং তিনি যে তরুণ খেলোয়াড়দের তুলে এনেছিলেন, সেটাকেই উদাহরণ করতে চাওয়া হচ্ছে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে। এ বারের অলিম্পিক্সে ভারতীয় দলে তরুণ রক্তের উপস্থিতি বেশ ভাল পরিমাণেই রয়েছে। তাঁদের নিয়ে স্বপ্নও দেখছেন ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা। অলিম্পিক কর্তারা মনে রেখেছেন যে, অধিনায়ক হিসেবে সৌরভ কী ভাবে সহবাগ, হরভজন, যুবরাজ, জাহির খানের মতো তরুণদের তুলে এনেছিলেন। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে তাই অধিনায়ক সৌরভকে তারা উদাহরণ করতে চাইছে।
ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা এ বার খুবই আশায় আছে যে, টোকিয়োতে সম্মানজনক ফল করবেন সিন্ধুরা। একাধিক বিভাগে ভারতের তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন। বক্সিংয়ে পদকের আশা করছেন কর্তারা। ব্যাডমিন্টনে আছেন সিন্ধু। জ্যাভলিনে নীরজ কুমার। কুস্তিতে বিনেশ ফোগত, বজরং পুনিয়া পদক আনবেন বলে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন। হকিতে খারাপ খেলছে না ভারতের মহিলা এবং পুরুষ দলও। শুটিং, তিরন্দাজি নিয়েও ইতিবাচক অনেকে। বলাবলি হচ্ছে, রিয়ো অলিম্পিক্সে সিন্ধু, সাক্ষী মালিকেরা যে উদ্দীপনার স্রোত তুলেছিলেন, তা অনেক জোরালো হয়ে দেখা দেবে টোকিয়োতে। রিয়োতে সিন্ধু যখন ক্যারোলিনা মারিনের সঙ্গে ফাইনাল খেলছিলেন, অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে বীরেন্দ্র সহবাগ—প্রত্যেকে টুইট করছিলেন। আর এ বারে যদি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জেতা সিন্ধু ফাইনালে উঠতে পারেন, তা হলে টুইটারে কী রকম বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, তা ভেবে এখন থেকেই শিহরিত অনেকে। আর ন্যাটওয়েস্ট জিতে ঐতিহ্যের লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা খুলে ওড়াচ্ছেন ভারত অধিনায়ক। এর চেয়ে স্মরণীয় ‘ফাইনাল দৃশ্য’ খুব কমই এসেছে ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে।
সেই অধিনায়কই এ বার সিন্ধুদের অলিম্পিক্স অভিযানের প্রেরণা।