যাঁদের বিরুদ্ধে খেলেছেন, এমন ভারতীয়দের মধ্যে থেকে সর্বকালের সেরা দল বেছে নিলেন শেন ওয়ার্ন। কিংবদন্তি অজি লেগস্পিনারের বেছে নেওয়া তারকাখচিত সেই দল সাড়া ফেলেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। অধিনায়ক হিসেবে এই দলে ওয়ার্ন বেছে নিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। আর এই বাছাইটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল বলে জানিয়েছেন স্বয়ং ওয়ার্ন।
ওয়ার্নের দলে রয়েছেন একজন বিশেষজ্ঞ পেসার। অবশ্য দলে রয়েছেন কপিল দেবের মতো অলরাউন্ডারও। ওয়ার্ন জোর দিয়েছেন ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানোয়। সাত জন ব্যাটসম্যান, এক জন উইকেটকিপার, এক জন অলরাউন্ডার, দু’জন স্পিনার আর একজন বিশেষজ্ঞ পেসারকে দলে রেখেছেন ওয়ার্ন।
দলের ওপেনার বীরেন্দ্র সহবাগ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়েও বেশ কিছু মনে রাখার মতো ইনিংস রয়েছে নজফগড়ের সচিনের। ১০৪ টেস্টে ৮৫৮৬ রান করেছেন তিনি। টেস্টে সর্বাধিক ৩১৯। ২৩ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
সহবাগের সঙ্গী ওপেনার হলেন নভজ্যোৎ সিংহ সিধু। যাঁকে নেওয়ায় ক্রিকেটমহলের অনেকেই অবাক। তবে ওয়ার্নদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সম্ভবত সেই কারণেই তাঁকে দলে রেখেছেন ওয়ার্ন। ৫১ টেস্টে ৪২.১৩ গড়ে ৩২০২ রান করেছিলেন তিনি। সর্বাধিক ২০১। শতরানের সংখ্যা ৯।
তিনে অবশ্যই রাহুল ‘দ্য ওয়াল’ দ্রাবিড়। ১৬৪ টেস্টে ৫২.৩১ গড়ে ১৩২৮৮ রান করেছেন দ্রাবিড়। সর্বাধিক ২৭০। ৩৬ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ২০০১ সালের সেই ইডেন টেস্টে লক্ষ্মণের সঙ্গে দ্রাবিড়ের জুটিই ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল।
চারে অবধারিত ভাবেই সচিন তেন্ডুলকর। যাঁকে বাদ দিয়ে ভারতের কোনও সেরা দল হতেই পারে না। ২০০ টেস্টে ১৫৯২১ রান করেছেন মুম্বইকর। লিটল চ্যাম্পিয়নের গড় ৫৩.৭৮। সেঞ্চুরির সংখ্যা ৫১। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টই হোক বা ওয়ানডে, সব সময় জ্বলে উঠেছেন সচিন।
ওয়ার্নের দলে পাঁচে নামবেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ৯৯ টেস্টে ৪৫.০৩ গড়ে ৬২১৫ রান করেছেন আজহার। শতরানের সংখ্যা ২২। সর্বাধিক হল ১৯৯। একদিনের ক্রিকেটে ৩৩৪ ম্যাচে নয় হাজারেরও বেশি রান এসেছে তাঁর ব্যাটে। তবে অধিনায়ক নয়, তিনি দলে থাকছেন ব্যাটসম্যান হিসাবেই।
ছয়ে নামবেন অধিনায়ক সৌরভ। অজিদের চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের বার্তা তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন। ইডেনে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় এসেছিল তাঁর নেতৃত্বেই। ১১৩ টেস্টে ৪২.১৭ গড়ে ৭২১২ রান করেছেন সৌরভ। রয়েছে ১৬ সেঞ্চুরি। সর্বাধিক ২৩৯।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের অধিনায়ক কপিল দেব হলেন ওয়ার্নের দলের একমাত্র অলরাউন্ডার। ১৩১ টেস্ট খেলেছেন কপিল। ৩১.০৫ গড়ে করেছেন ৫২৪৮ রান। রয়েছে আট সেঞ্চুরি। সর্বাধিক ১৬৩। এর সঙ্গেই নিয়েছেন ৪৩৪ উইকেট। ২৩ বার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট বা তার বেশি। ম্যাচে দু’বার নিয়েছেন ১০ উইকেট। ৮৩ রানে নয় উইকেট হল তাঁর কোনও ইনিংসে সেরা বোলিং।
ওয়ার্নের দলের উইকেটকিপার হলেন নয়ন মোঙ্গিয়া। ৪৪ টেস্টে ২৪.০৩ গড়ে ১৪৪২ রান করেছেন তিনি। সর্বাধিক ১৫২। টেস্টে এই একটিই সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। নিয়েছেন ৯৯ ক্যাচ। স্টাম্পিংয়ের সংখ্যা আট।
ওয়ার্নের দলের অফস্পিনার হলেন হরভজন সিংহ। ১০৩ টেস্টে ৪১৭ উইকেট নিয়েছেন জালন্ধরের অফস্পিনার। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ২৫ বার। টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েছেন পাঁচ বার। ৮৪ রানে আট উইকেট হল তাঁর ইনিংসে সেরা বোলিং। টেস্টে ২১৭ রানে ১৫ উইকেট হল তাঁর ম্যাচে সেরা বোলিং।
ওয়ার্নের দলের জোড়া স্পিনারের অন্যতম হলেন অনিল কুম্বলে। ১৩২ টেস্টে ৬১৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ভারতীয়দের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট তাঁরই। ৩৫ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি। টেস্টে আট বার দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন। অবশ্য এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার নজিরও রয়েছে তাঁর।
ওয়ার্নের দলের একমাত্র পেসার হলেন জাভাগল শ্রীনাথ। ৬৭ টেস্টে ২৩৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ১০বার। টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন এক বার। ৮৬ রানে আট উইকেট ইনিংসে তাঁর সেরা বোলিং। আর ১৩২ রানে ১৩ উইকেট টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে তাঁর সেরা বোলিং।
ওয়ার্নের সেরা একাদশে জায়গা পাননি এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বার বার জ্বলে উঠেছেন তিনি। ইডেনে ঐতিহাসিক সেই টেস্টে ২৮১ রান করেছিলেন লক্ষ্মণ। ওয়ার্নের যুক্তি, সৌরভকে দলে রাখতে গিয়েই লক্ষ্মণকে বাদ দিতে হয়েছে।