সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই স্তম্ভ। টেস্ট ক্রিকেটে দু’জনের পথ চলা শুরু হয়েছিল একই সঙ্গে। দুই নবীন তার পর হয়ে উঠেছেন টিম ইন্ডিয়ার ভরসা। এক জন আগ্রাসন আর আক্রমণাত্মক মানসিকতা আমদানি করেছিলেন দলে। ছিনিয়ে এনেছিলেন একের পর এক জয়, গর্বের মুহূর্ত। অন্য জন আবার কঠিন মুহূর্তে হয়ে উঠেছেন সুরক্ষা বিমা। প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেছেন দলকে।
১৯৯৬ সালের ২০ জুন লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল সৌরভ ও দ্রাবিড়ের। তার চার বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সৌরভের। কিন্তু তা সুখের হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালের ১১ জানুয়ারি ছয় নম্বরে নেমে তিন রান করেছিলেন তিনি। কামিন্সের বলে হয়েছিলেন এলবিডব্লিউ।
জাতীয় দলের দরজা পরের চার বছর বন্ধ ছিল সেই থেকে। ১৯৯৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে ফের জাতীয় দলে এলেন সৌরভ। যা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ইংল্যান্ড ঘুরতে যাচ্ছেন সৌরভ। কিন্তু, সেই সফরে ফের এক দিনের ক্রিকেটে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ২৬ মে ম্যাঞ্চেস্টারে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তিনে নেমে করেছিলেন ৪৬।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে দলে জায়গা না পেলেও লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টের এগারোয় আসেন সৌরভ। এবং নেমেই উপহার দেন ১৩১ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ৪৩৫ মিনিট ক্রিজে থেকে ৩০১ বল খেলেন তিনি। মারেন ২০টি বাউন্ডারি। মুলালির বলে বোল্ড হওয়ার আগেই সুরভিত রূপকথা জন্ম নিয়েছিল তাঁর ব্যাটে।
সেই টেস্টেই অভিষেক হয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়ের। অভিষেক টেস্টে শতরানের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সাতে নেমে থেমেছিলেন ৯৫ রানে। ৩৬৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ২৬৭ বল খেলেছিলেন। ইনিংসে ছিল ছয়টি বাউন্ডারি। সৌরভের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে ৯৪ রান যোগ করেছিলেন শ্রীযুক্ত নির্ভরযোগ্য।
সেই সিরিজের সেরা হয়েছিলেন সৌরভ। পরের টেস্টে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও করেন সেঞ্চুরি। দুই টেস্টের তিন ইনিংসে করেন ৩১৫ রান। গড় ছিল ১০৫। সর্বোচ্চ ১৩৬। অন্য দিকে, তিন ইনিংসে দ্রাবিড়ের ব্যাটে এসেছিল ১৮৭ রান। গড় ৬২.৩৩। সেই সিরিজে দু’বার পঞ্চাশ পেরিয়েছিলেন তিনি।
সেই সময় থেকে জাতীয় দলের অপরিহার্য দুই সদস্য হয়ে উঠেছিলেন সৌরভ ও দ্রাবিড়। সৌরভ সেঞ্চুরি করেছেন, অথচ ভারত টেস্ট হেরেছে, এমন কখনও হয়নি। টেস্ট কেরিয়ারে সৌরভের শতরানের সংখ্যা ১৬, অর্ধশতরানের সংখ্যা ৩৫।
টেস্টে দ্রাবিড়ের শতরানের সংখ্যা ৩৬। তার মধ্যে ভারত হেরেছে চার টেস্ট। এর মধ্যে তিনটি টেস্টই হল ২০১১ সালে ইংল্যান্ড সফরের। সেই সিরিজ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত হেরেছিল ৪-০ ফলে। লম্বা কেরিয়ারে দ্রাবিড়ের ব্যাটে এসেছে ৬৩ হাফ-সেঞ্চুরি।
১৬ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে মাত্র তিন টেস্টে খেলতে পারেননি দ্রাবিড়। যার প্রথমটা ২০০৫ সালে আমদাবাদে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। সেই টেস্টে ২৫৯ রানে জিতেছিল ভারত। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে পর পর দুই টেস্টে খেলতে পারেননি তিনি। যার একটি ছিল নাগপুরে, অন্যটি কলকাতায়। ভারত নাগপুরে হারলেও কলকাতায় জিতেছিল।
সৌরভের কেরিয়ার আবার চড়াই-উতরাইয়ে ভরা ছিল। গ্রেগ চ্যাপেল জমানায় টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা দেখিয়ে ফিরেছিলেন দলে। এবং প্রত্যাবর্তনেই পেয়েছিলেন সাফল্য। ফর্ম খারাপ হলেও টেস্টের গড় কখনও ৪০-এর নীচে নামেনি সৌরভের।
ক্রিকেট কেরিয়ারে সৌরভ খেলেছেন ১১৩ টেস্ট। ৪২.১৭ গড়ে করেছেন ৭২১২ রান। ২০০৮ সালে অবসর নেন তিনি। অন্য দিকে, ২০১২ সালে অবসর নেওয়া দ্রাবিড় ১৬৪ টেস্টে ৫২.৩১ গড়ে করেছেন ১৩২৮৮ রান। মজার তথ্য হল, সৌরভের কেরিয়ারের প্রতিটি টেস্টেই খেলেছিলেন দ্রাবিড়।