Ashok Malhotra

সুইপেই লেগের ফাঁদ থেকে মুক্ত স্মিথ, মার্নাসরা

স্মিথের শেষ চার ইনিংসের মোট রান দশ। ভারতের বিরুদ্ধে সফরের শুরুই করেছিল দু'টি সেঞ্চুরি দিয়ে।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৭
Share:

হুঙ্কার: প্রথম দুই টেস্টে রানের খরা চলছিল। প্রিয় মাঠ সিডনিতে সেঞ্চুরির পরে স্বমেজাজে স্মিথ। শুক্রবার। রয়টার্স

ক্রিকেটে একটা কথা আছে, "ফর্ম ইজ় টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ় পার্মানেন্ট"। সেই বিখ্যাত উক্তি আরও এক বার প্রমাণ করল স্টিভ স্মিথ। শেষ চার ইনিংসে এক বারও যে দশের গণ্ডি পেরোতে পারেনি, শুক্রবার তার ব্যাট থেকেই এল অস্ট্রেলিয়ার সেরা ইনিংস। ১৩১ রান করে ভারতকে বড় পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিল টেস্ট ক্রিকেটে দশক সেরা ব্যাটসম্যান। স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেনের ইনিংসের (৯১) সৌজন্যে ৩৩৮ রান করল অস্ট্রেলিয়া। দিনের শেষে ভারত দুই উইকেট হারিয়ে ৯৬।

Advertisement

স্মিথের শেষ চার ইনিংসের মোট রান দশ। ভারতের বিরুদ্ধে সফরের শুরুই করেছিল দু'টি সেঞ্চুরি দিয়ে। টেস্টে কেন ব্যর্থতা গ্রাস করে ওকে? শুরুতেই বলি, স্মিথ প্রথম দুই টেস্ট খেলেছে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। কোনও ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার প্রবণতা ছিল না। এমনকি মারার বলও মারতে সাহস পাচ্ছিল না। সিডনি টেস্টে কিন্তু এক আগ্রাসী স্মিথের আবির্ভাব ঘটে। ইনিংসের চতুর্থ বলে অফড্রাইভে বাউন্ডারি মারার পরেই ছন্দে ফেরে স্মিথ। সেই গতিটাই বজায় রাখার চেষ্টা করে ইনিংস জুড়ে। তাই তৃতীয় টেস্টে স্মিথকে দেখে মনে হয়নি, ওর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল।

স্মিথের ব্যর্থ হওয়ার দ্বিতীয় কারণ, অশ্বিনকে সমীহ করা ও লেগসাইডে সাজানো ফিল্ডিংকে অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া। অশ্বিনের প্রথম দুই টেস্টের বোলিং দেখে বুঝতে পেরেছি, স্মিথকে লেগ স্লিপ ও ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ অঞ্চলে খেলানোর ফাঁদ পেতেছিল। রান আটকানোর সঙ্গেই অনায়াসে চাপে ফেলতে পারছিল ওকে। তৃতীয় টেস্টে স্মিথ সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয় পাল্টা আগ্রাসী ভঙ্গি অবলম্বন করে।

Advertisement

ও ব্যাট করতে আসার পরেই অশ্বিনের হাতে বল তুলে দেয় অজিঙ্ক রাহানে। একই ভাবে স্মিথের পা লক্ষ্য করে বল করতে শুরু করে অশ্বিন। দু'টি বল দেখার পরেই ক্রিজে নড়াচড়া করতে শুরু করে স্মিথ। যাতে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ক্রমাগত বল করে যেতে না পারে অশ্বিন। স্টেপআউট করে অশ্বিনের মাথার উপর দিয়ে দু'টি চার মারার পরেই মিড-অন অঞ্চলের ফিল্ডার পিছিয়ে লং-অন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য বাউন্ডারি আটকানো। মিড-অনের ফিল্ডার পিছিয়ে দেওয়ায় খুচরো রান বার করার সুযোগ পেয়ে যায় স্মিথ। সেটা কাজে লাগিয়ে ইনিংস সাজানোর রাস্তাও সহজ করে ফেলে।

প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, লেগের ফাঁদ কী করে ভাঙল স্মিথ? আমার উত্তর, সুইপ শটের ব্যবহার করে। প্রথম দুই টেস্টে যা একেবারে দেখা যায়নি। তৃতীয় দিনও অশ্বিন বল করতে শুরু করে শর্ট ফাইন-লেগ, লেগস্লিপ ও ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ অঞ্চলে ফিল্ডার নিয়ে। স্মিথ তাকে স্বাগত জানায় সুইপ শটের সাহায্যে। দু'টি সফল সুইপ মারার পরে রাহানে বাধ্য হয় শর্ট ফাইন লেগ অঞ্চলের ফিল্ডার পিছিয়ে দিতে। বাউন্ডারি আটকানোর জন্যই সুইপার অঞ্চলে ফিল্ডার রাখতে বাধ্য হয় রাহানে। তাতে ভেঙে যায় লেগট্র্যাপ। সহজেই আসতে থাকে খুচরো রান। স্মিথের রণনীতি মেনে ব্যাট করে মার্নাস লাবুশেনও। তাই সিডনির মন্থর পিচে একশো রান যোগ করতে সমস্যায় পড়েনি এই জুটি।

রবীন্দ্র জাডেজার সৌজন্যে বহু প্রতীক্ষিত উইকেট আসে ভারতীয় শিবিরে। ক্রমাগত উইকেটের সোজাসুজি গতির সাহায্যে বল করে জাডেজা। তাই ওর বিরুদ্ধে রান বার করা কঠিন। লাবুশেন যে বলে আউট হয়েছে, সেটা পিচে পড়ে সামান্য বাইরের দিকে ঘোরে। লাবুশেন চেয়েছিল মিড-উইকেট অঞ্চলে বল ঠেলে রান কুড়িয়ে নিতে। কিন্তু পিচ সেই পরিকল্পনায় কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।

জাডেজা যদিও পরের তিনটি উইকেট পেয়েছে গতির বৈচিত্র কাজে লাগিয়ে। প্যাট কামিন্স ও নেথান লায়ন পরাস্ত হয় জাডেজার গতিতে। ম্যাথু ওয়েড স্টেপ আউট করে কব্জির মোচড়ে ব্যাট ঘোরাতে গিয়ে সমস্যা ডেকে আনে। এই জাডেজাকেই প্রথম দিন মাত্র তিন ওভার বল করিয়েছে রাহানে। আরও বেশি ওভার করানো হলে রান কিছুটা কম হত বিপক্ষের।

৩৩৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুরন্ত শুরু করে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই আগ্রাসী ভারতীয় ওপেনিং জুটি দেখার আশায় ছিলাম। রোহিত ২৬ রান করে আউট হলেও হাফ সেঞ্চুরি করল শুভমন। আরও বড় ইনিংস খেলার দক্ষতা যে ওর রয়েছে, তা দেখিয়ে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement