শ্রেয়স ও রাহুলের জুটিতে সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে দু’বার একশোর বেশি রান যোগ হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
গত কয়েক বছর ধরে একদিনের ক্রিকেটে টপ অর্ডারের উপর নির্ভরশীল ছিল ভারতীয় ব্যাটিং। কিন্তু, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হতে হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে মিডল অর্ডার। লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়স আয়ারের ধারাবাহিকতা ভরসা জোগাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
হালফিল ভারতের মিডল অর্ডার হয়ে উঠেছিল গবেষণাগার। অনেক ক্রিকেটারকে সুযোগ দিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু, বেশির ভাগ ক্রিকেটারই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। কেউ বাদ পড়েছেন, কেউ বাদ পড়ার পরও ফের ডাক পেয়েছেন আর একদফা সুযোগের জন্য। বাস্তবে যদিও ব্যাটিং অর্ডারের চার ও পাঁচ নম্বর স্লট নিয়ে পরীক্ষা থামেনি। কারণ, কেউই দিতে পারেননি নির্ভরতা। আর সেই প্রেক্ষিতেই কিউয়িদের কাছে একদিনের সিরিজ ০-৩ হারলেও তা হয়ে উঠছে ইতিবাচক এক ইঙ্গিত।
রোহিত শর্মা ও শিখর ধওয়ন, দুই নিয়মিত ওপেনার ছিলেন না এই সিরিজে। ফলে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল পৃথ্বী শ ও ময়াঙ্ক আগরওয়ালের। কিন্তু দুই ওপেনারের কেউই বড় রান পাননি। বিরাট কোহালি আবার তিন ইনিংসে করেন মোটে ৭৫। যা অধিনায়ক হিসেবে কোনও একদিনের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তাঁর সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স।
আরও পড়ুন: বুমরার উইকেট না-পাওয়া কিন্তু চিন্তায় রাখছে
আরও পড়ুন: কোহালি: ওদের এই জয়ই প্রাপ্য, আমাদের এই হার
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় ব্যাটিং নির্ভরশীল ছিল রাহুল-শ্রেয়সের উপরে। ১০২ গড়ে তিন ইনিংসে রাহুল করেন ২০২ রান। যা, এই সিরিজে সর্বাধিক রানের তালিকায় দুইয়ে রয়েছে। এর মধ্যে একটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। পাঁচ নম্বরে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় ঋষভ পন্থকে অনেক পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন রাহুল।
সদ্যসমাপ্ত সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড আর এক ভারতীয়ের। শ্রেয়স আইয়ার ৭২.৩৩ গড়ে করেছেন ২১৭ রান। যার মধ্যে একটি সেঞ্চুরি ও দুটো হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। চার নম্বরে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন তিনি। ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ধরলে চার নম্বরে মোট ১৩জন ব্যাটসম্যানকে খেলানো হয়েছিল। এই ১৩জনের সম্মিলিত গড় ৩৫.১৪। তাঁরা মিলিত ভাবে তিন সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন। অন্যদিকে, শ্রেয়াস চার নম্বরে নেমে আট ইনিংসে করেছেন একটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ-সেঞ্চুরি। এবং তাঁর গড় ৫৬.৮৫।
এই সিরিজে শ্রেয়স-রাহুলের মিলিত রান ৪২১। অন্যদিকে, বাকি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মিলিত রান ৪২৩। শ্রেয়স-রাহুল জুটিতে এই সিরিজে দু’বার একশোর বেশি রান যোগ হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ধরলে ভারতের চার ও পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যানের জুটিতে কোনও একদিনের সিরিজে দু’বার সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ হয়নি। শেষবার ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুবরাজ সিংহ ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জুটিতে এটা হয়েছিল। ফের যা হল রাহুল-শ্রেয়সের জুটিতে, এক যুগ পর।
মিডল অর্ডারে আর একটা জায়গা নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে বলে মনে করছে ক্রিকেটমহল। প্রথম দুই ম্যাচে ছয় নম্বরে নেমে কেদার যাদব করেছিলেন ৩৫ রান। শেষ ম্যাচে মণীশ পাণ্ডে ছয় নম্বরে নেমে করেন গুরুত্বপূর্ণ ৪২। এবং রাহুলের সঙ্গে ১০৭ রানের জুটিও গড়ে তোলেন। কেদারকে যে হেতু পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে ভাবা হচ্ছে না বয়সের জন্য, তাই মণীশকে নিয়মিত খেলানো উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।