তৃপ্ত হাসি। শ্যুটিংয়ের ডাবল ট্র্যাপে রুপো জিতে শ্রেয়সী। ছবি: এএফপি।
কুড়িতম কমনওয়েলথ গেমসের চতুর্থ দিনও ভারতকে পদক তালিকায় রেখে দিল ডান্ডির ব্যারি বাডন সেন্টার শ্যুটিং রেঞ্জ। রবিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতের ঝুলিতে আসা তিনটে পদকের (১ রুপো, ২ ব্রোঞ্জ) দু’টি শু্যটারদের দৌলতেই। আর সেই রুপোজয়ী দিল্লির শ্রেয়সী সিংহ (মেয়েদের ডাবল ট্র্যাপ) আর ব্রোঞ্জজয়ী মেরঠের মহম্মদ আসাব (পুরুষদের ডাবল ট্র্যাপ) তাঁদের পদকের জন্য কৃতজ্ঞ ইতালির কাছে! দু’জনই গলায় পদক ঝুলিয়ে বলেছেন, “গেমসের আগে ইতালির অত্যাধুনিক শ্যুটিং আবহে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাওয়াটা প্রচুর সাহায্য করেছে।” শ্রেয়সী আবার এর সঙ্গে যোগ করেছেন, “আমার দুই সিনিয়র পার্টনার মানবজিত্ আর মানশের সিংহ আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছেন আর উত্সাহ দিয়েছেন। ভারতীয় শ্যুটিং ফেডারেশন আর ভারত সরকারকেও আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
তৃতীয় পদকটি ৬৩ কেজি ক্যাটেগরির ভারোত্তোলন থেকে পান বারাণসীর পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চির টিনএজার পুনম যাদব। দুই নাইজিরিয়ানের পিছনে থেকে ২০২ কেজি তুলে পুনম ব্রোঞ্জ জেতেন।
তবে শ্যুটিং বছর কয়েক আগে অলিম্পিক থেকে ভারতকে স্বর্ণ পদক এনে দেওয়া ইস্তক দেশে বিশেষ করে উত্তর ভারতে এই ব্যক্তিগত ইভেন্টের চর্চা আর সাফল্যর অবিশ্বাস্য রকমের উন্নতি ঘটেছে। গ্লাসগো গেমসেও ভারতের এখন পর্যন্ত জেতা ২০ পদকের মধ্যে ৯টাই শ্যুটাররা দিয়েছেন। বাইশ বছরের শ্রেয়সী জানাচ্ছেন, সদ্য স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এখন থেকে তিনি শ্যুটিংয়ে আরও সময় দিতে পারবেন। তাঁর পরিবারেরও পূর্ণ উত্সাহ আছে এ ব্যাপারে। চার বছর আগে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিততে ব্যর্থ শ্রেয়সী বলেছেন, “এখানে যদিও আমার পদকটা রুপো, কিন্তু আগের গেমসে ঘরের মাঠে কোনও পদক না জেতায় এই রুপোর পদকটাই আমাকে দারুণ আনন্দ দিচ্ছে।” ১০০ মধ্যে ৯২ স্কোর করা শ্রেয়সী মাত্র দু’টো শটের জন্য ইংল্যান্ডের সোনাজয়ী শার্লট কেরউডের এক ধাপ পিছনে থাকেন। “সোনার পদকের প্লে-অফে থাকতেই পারতাম। যদি আমি ফাইনাল রাউন্ডে কয়েকটা বিশ্রী মিস না করতাম,” বলেছেন শ্রেয়সী।
কমনওয়েলথ গেমসে
রবিবারের ভারত
• শ্রেয়সী সিংহ শ্যুটিং রুপো
• মহঃ আসাদ শ্যুটিং ব্রোঞ্জ
• পুনম যাদব ভারোত্তোলন ব্রোঞ্জ
• মেয়েদের হকি ভারত-০ : নিউজিল্যান্ড-৩
• মেয়েদের টিটি ব্রোঞ্জের ম্যাচে ভারত-১ : অস্ট্রেলিয়া-৩
• ব্যাডমিন্টন দলগত কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত-৩ : কানাডা-১
• বক্সিং মনোজকুমার শেষ আটে
মোট পদক ২০ (সোনা ৫, রুপো ৮, ব্রোঞ্জ ৭)
ছাব্বিশ বছরের আসাদ আবার দুই ইংরেজ স্টিভন স্কট (সোনা) আর ম্যাথু ফ্রেঞ্চের (রুপো) সঙ্গে ১৫ জোড়া টার্গেট শেষে ২৭ পয়েন্টে ‘টাই’ করলেও শ্যুট-অফে মাত্র এক বার টার্গেটে লাগিয়ে সোনার পদকের প্লে-অফ থেকে একচুলের জন্য ছিটকে পড়েন। দুই ইংরেজই দু’বার করে টার্গেটে লাগান। কিন্তু ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে মাল্টার নাথন জুয়েরেবের বিরুদ্ধে আসাদ আবার ফর্মে ফিরে ২৬-২৪ পয়েন্টে জেতেন। পরে আসাদ স্বীকার করেন, “সোনার লড়াইয়ে ঢোকার শ্যুট-অফে নার্ভাস ছিলাম। কমনওয়েলথ গেমসের মতো এত বড় মঞ্চে প্রথম নেমেই শ্যুট-অফের চাপে একটু ঘাবড়ে যাই। তবে প্রথম বার গেমসে নেমেই পদক জিততে পেরে আমি খুশি।”
টেবল টেনিসে মেয়েদের দলগত বিভাগে ভারত কিন্তু দিল্লিতে জেতা পদক হাতছাড়া করল গ্লাসগোতে। চার বছর আগের রুপো জয়ী ভারতীয় মেয়ে টিটি দল এ বার ব্রোঞ্জের লড়াইয়েও হেরে গেল অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-৩ ম্যাচে। কে শামিনি, মাধুরিকা পাটকারদের সিঙ্গলস-ডাবলস সর্বত্র হারের দিনে একমাত্র সান্ত্বনার জয় মণিকা বাত্রার। ব্যাডমিন্টনের মিক্সড টিম ইভেন্টেও সেরা বাজি পি ভি সিন্ধু হেরে বিপদের আবহ সৃষ্টি করলেও পারুপল্লি কাশ্যপ, কে শ্রীকান্ত ও জ্বালা গাট্টার সৌজন্যে কানাডাকে ৩-১ হারিয়ে ভারত সেমিফাইনালে উঠে পদকের প্রায় দোড়গোড়ায় পৌঁছেছে।