পুকুর বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে বাড়ি। চাপড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
পুকুর বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে বাড়ি। কোনওটা পুরো তৈরি হয়ে গিয়েছে। আবার কোনওটার নির্মাণ কাজ চলছে। সবটাই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। কী ভাবে দিনের পর দিন এভাবে পুকুর বুজিয়ে বাড়ি তৈরি সম্ভব হচ্ছে তা নিয়ে এলাকার মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পক্ষ থেকে দু’একটি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে দেখা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে চাপড়ার বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন দ্বীপচন্দ্রপুর মৌজায় একটি পুকুর বুজিয়ে একাধিক বাড়ি তৈরির ঘটনায় দফতরের কর্তাদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। পুকুরের পাশে মাস কয়েক আগে থেকে একটি বাড়ি তৈরি শুরু হয়। অভিযোগ, জমিটির শ্রেণি চরিত্র পুকুর হওয়া সত্ত্বেও জমির মালিক বাগবুল মণ্ডল বাড়ি তৈরি করছেন। বিষয়টি জানার পর ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পক্ষ থেকে তাঁকে নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি চাপড়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। আর এখানেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ ওই নির্মাণের কাছেই একই ভাবে বেআইনি আরও একাধিক বাড়ি তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ জানানোর পরও দফতরের ‘উদাসীনতা’য় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ, বাগবুলের জমির পাশের দাগেই রাজু সিংহ নামে আরও এক ব্যক্তি বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করেছেন। সেই জমির শ্রেণি চরিত্র আবার ‘পুকুরপাড়’। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের জেলা কর্তারা জানাচ্ছেন, কোনও ভাবেই ‘ভিটে’ শ্রেণির জমি ছাড়া বাড়ি তৈরি করা যায় না। পুকুর বা পুকুরপাড় শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা শাসকের (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) কাছ থেকে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অথবা জমির শ্রেণি চরিত্র বদল ঘটিয়ে বাড়ি তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে কেউই শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি না নিয়ে বা শ্রেণি চরিত্র না বদলেই বাড়ি তৈরি করেছে। যা বেআইনি বলে জানিয়েছেন জেলার কর্তারা।
বাগবুলের কথায়, “আমার অন্যায় হয়েছে। আমি অন্যায় করলে রাজু সিংহও অন্যায় করেছে। তাহলে কেন রাজু সিংহকে কিছু বলা হচ্ছে না। এক যাত্রায় যখন পৃথক ফল হয় তখন ধরে নিতে হবে ভিতরে অন্য গল্প আছে।” রাজুর দাবি, “ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে আমাকে কিছু বলা হয়নি।”চাপড়া ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকরিক গোকুলানন্দ মণ্ডলের যুক্তি, ‘‘রাজু সিংহের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমি রেভিনিউ ইনস্পেক্টরকে তদন্ত করতে পাঠিয়েছিলাম। দেখা গিয়েছে ওই জমির শ্রেণি চরিত্র পুকুরপাড়। শ্রেণি চরিত্র বদল না করে অনুমতি ছাড়াই বাড়িটি তৈরি হয়েছে। যেটা বেআইনি। রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, “বেআইনি নির্মাণ হলে সকলের বিরুদ্ধেই আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”