দুর্গাপুর ব্যারাজের সেতুতে যানবাহন। ছবি: বিকাশ মশান।
বয়স বাড়ছে। তার উপরে দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন চলার সংখ্যা। ফলে, দুর্গাপুর ব্যারাজের বিকল্প হিসেবে দামোদরের উপরে দ্বিতীয় সেতুর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে বলে দাবি পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন বণিক সংগঠনের। সম্প্রতি বণিকসভার প্রতিনিধিরা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) সঙ্গে বৈঠক করে এই দাবি জানিয়েছেন। এডিডিএ-রতরফে বণিক সংগঠনগুলিকে যৌথ কমিটি গড়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে এ বিষয়ে দরবার করার পরামর্শদেওয়া হয়েছে।
ডিভিসি-র এই ব্যারাজের উপর দিয়ে গিয়েছে দুর্গাপুর থেকে ওড়িশার নয়াগ্রাম সীমান্তগামী ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক। ফলে, ব্যারাজের মাধ্যমে দুর্গাপুরের সঙ্গে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামজেলার যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া, এই রাজ্য সড়ক উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের একাংশের যোগাযোগও সহজ করেছে।বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাজার, ব্যবসা-সহ নানা প্রয়োজনে দুর্গাপুরে যাতায়াত করতে ব্যারাজের সেতু ব্যবহার করতে হয়। ব্যারাজের উপর দিয়ে বড়জোড়া শিল্পতালুকের কারখানার ভারী ট্রাক, ডাম্পার থেকে যাত্রিবাহী বাস, মিনিবাস, অন্য গাড়ির যাতায়াত লেগেই থাকে। যানবাহনের চাপে মাঝে মাঝে ব্যারাজের উপরেররাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে। তাতে যানজট হয়। ফলে, চাপ আরও বাড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরাসরি বাঁকুড়ার সঙ্গে দুর্গাপুরের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হল ব্যারাজের এই সেতু। কোনওকারণে সেতু বন্ধ হয়ে গেলে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর সরাসরি যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, ব্যারাজের উপরে চাপ কমিয়ে দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার মাঝে দামোদরে নতুন সেতু গড়ে তোলার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। ট্রাক চালক থেকে শুরু করে বাইক আরোহী, সবারইএই দাবি। তাঁদের মতে, নতুন সেতু তৈরি করে ভারী যানবাহন সেই দিক দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হোক। গাড়ি, মোটরবাইক, সাইকেল, পথচারীদের ব্যারাজের সেতু দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাক। তাহলে যেমন ব্যারাজের সেতুর উপরেচাপ কমবে, তেমনই নতুন সেতুতেও যানজট কম হবে। অনেকেরদাবি, ব্যারাজের সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, সেটিকে এবার বিশ্রাম দেওয়া দরকার,সেক্ষেত্রে ব্যারাজের উপর দিয়ে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়াও যেতে পারে।
বাঁকুড়ার বণিক সংগঠনের কর্তারা জানান, মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাটি শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলির ক্ষেত্রে দামোদর পারাপারের জন্য জাতীয় সড়কে বিকল্প সেতু রয়েছে। তবে রানিগঞ্জে যানজটের জন্য ওইপথ দিয়েও শিল্পাঞ্চলের গাড়ি যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। দুর্গাপুরহয়ে নতুন সেতু তৈরি হলে বড়জোড়ার সঙ্গে মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাটি শিল্পাঞ্চলও উপকৃত হবে।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাঁকুড়ার ‘পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজ়’, ‘দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, উখড়া ও পানাগড়ের বণিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা দামোদরের উপরে দ্বিতীয় সেতুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান কবি দত্তের সঙ্গে আলোচনা করেন। একটি নতুন সেতু গড়ে তোলার দাবি জানান তাঁরা। কবি জানান, সেতু নির্মাণের বিষয়টি এডিডিএ-র এক্তিয়ারে নেই। তিনি সব বণিকসভা থেকে দু’তিন জন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে বিষয়টি নিয়ে দরবার করার পরামর্শ দেন।
‘পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর তরফে সহ-সভাপতি আশিস কুণ্ডু বলেন, “ব্যারাজে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকলে রানিগঞ্জ হয়ে ঘুরে যেতে হয়। দ্বিতীয় সেতু তৈরি হলে তবেই সমস্যা মিটবে। এডিডিএ-র পরামর্শ মতো আমরা বিষয়টি নিয়ে এগোব।” ওই বণিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “পুরনো ব্যারাজের উপরে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। অবিলম্বে নতুন সেতু গড়া দরকার। আমরা বহু বার এই দাবি রাজ্য সরকার-সহ বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছি।’’ তিনি আরও জানান, শিল্পপতিদের একাধিক সংগঠনএকত্র হয়ে একটি ফোরাম গড়ে বিকল্প সেতু গড়ার দাবিতে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশাসনিক বৈঠকে আগেই জানিয়েছি। আগামী অধিবেশনে ফের বিষয়টি তুলব।”
ব্যারাজ দিয়ে যাতায়াত সব রকম যানবাহনের। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যারাজে ভার
তৈরি: ১৯৫৫ সালে।
দৈর্ঘ্য: প্রায় ৬৯২ মিটার।
যোগাযোগ: বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানের মধ্যে সরাসরি যাতায়াত এর উপর দিয়ে। এ ছাড়া, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের সঙ্গে দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া, বীরভূমের যোগ। দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
চাপ: ব্যারাজের রাস্তায় দিনে প্রায় দশ হাজার নানা রকম যানবাহন চলে।
ভরসা: বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পতালুকের প্রায় ৪৫টি কারখানার মালপত্র আনা-নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম ব্যারাজের রাস্তা। দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ ও আসানসোলের অসংখ্য কারখানা ও খনির জিনিসপত্রও পরিবহণ হয় এর উপর দিয়ে।
সমস্যা: মাঝে মাঝেই বেহাল হয়ে পড়ে রাস্তা। যানজটও হয়। বিকল্প না থাকায় এই রাস্তাই ধরতে বাধ্য হন সব ধরনের গাড়ির চালকেরা।
প্রস্তাব: বাঁকুড়া ও দুর্গাপুরের মধ্যে দামোদরে দ্বিতীয় সেতু তৈরি করা হোক।
ব্যারাজে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকলে রানিগঞ্জ হয়ে ঘুরে যেতে হয়। দ্বিতীয় সেতু তৈরি হলে তবেই সমস্যা মিটবে।
আশিস কুণ্ডু (সহ-সভাপতি, পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজ়)
সেতু নির্মাণের বিষয়টি এডিডিএ-র এক্তিয়ারে নেই। সব বণিক সভা থেকে দু’তিন জন করে প্রতিনিধি নিয়ে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করে রাজ্য ও কেন্দ্রেরকাছে বিষয়টি নিয়ে দরবার করা যেতে পারে।
কবি দত্ত (চেয়ারম্যান, এডিডিএ)