কণিকা রাইফেল পান সোনুর থেকে।
আত্মহত্যা করলেন জাতীয়স্তরের মহিলা শ্যুটার কণিকা লায়েক। বালির এক গেস্ট হাউসে বুধবার দুপুরে ২৮ বছরের কণিকার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত চার মাসে দেশে এই নিয়ে চারজন শ্যুটারের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল।
কলকাতায় জয়দীপ কর্মকারের শ্যুটিং অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতেন কণিকা। প্রাক্তন অলিম্পিয়ান এবং অর্জুন পুরস্কারজয়ী বাংলার এই শ্যুটারের ছাত্রী ছিলেন তিনি। গত জুলাইতে জয়দীপের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। শোকস্তব্ধ জয়দীপ আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘ভাবতে পারছি না কণিকা আত্মহত্যা করেছে। সব সময় মুখে হাসি লেগে থাকত। অতিরিক্ত কথা বলত না, আবার খুব চাপা স্বভাবের ছিল, সেটাও নয়।’’
গত চার মাসে ভারতে এই নিয়ে চারজন শ্যুটার আত্মহত্যা করলেন। সেপ্টেম্বরে নমনবীর সিংহ ব্রার মোহালিতে আত্মহত্যা করেন। তিনি বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। অক্টোবরে রাজ্যস্তরের আর এক শ্যুটার হুনারদীপ সিংহ সোহালও আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া খুশসিরাত কউর গত সপ্তাহে আত্মহত্যা করেন।
পর পর শ্যুটারদের আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জয়দীপ। বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে এই নিয়ে চারজন শ্যুটার আত্মহত্যা করল। ভারতীয় শ্যুটিংয়ে সত্যিই খারাপ সময় যাচ্ছে। হয়ত মনোবিদরা এই ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারবেন।’’
কণিকা ঝাড়খন্ডের মহিলা হলেও সেখানে পরিকাঠামোর তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় জয়দীপের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। সেই গল্প জানিয়ে জয়দীপ বললেন, ‘‘গত মার্চে সংবাদপত্রে দেখলাম কণিকা লায়েক নামে এক মহিলা শ্যুটার বলেছে, তার নিজের রাইফেল নেই। সেই জন্য ঠিক মতো অনুশীলন করতে পারছে না। ঠিকঠাক রাইফেল পেলে সে কলকাতায় আমার অ্যাকাডেমিতে নাকি ভর্তি হতে চায়। এরপর দেখলাম অভিনেতা সোনু সুদ ওর জন্য রাইফেল জোগাড় করে দিয়েছেন। তখন মনে হল আমারও কিছু করা উচিত ওর জন্য। যোগাযোগ করা হল। ওকে ভর্তি নিলাম। ভর্তি হওয়ার সময় ওকে কোনও টাকা দিতে হয়নি। ওর মাসিক অনুশীলনের খরচও আমরা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিলাম।’’
শ্যুটার হিসেবে কণিকা কী রকম ছিলেন জানতে চাইলে জয়দীপ বললেন, ‘‘শুরুতে খুব কাঁচা ছিল। কিন্তু উন্নতি করতে থাকে। তিন মাসের মধ্যে অনেকটা উন্নতি করে।’’
গত অক্টোবরের একটি ঘটনার কথা তুলে ধরে জয়দীপ বলেন, ‘‘আমদাবাদে প্রি-ন্যাশনাল প্রতিযোগিতা ছিল। সেখানে কণিকা অংশ নিয়েছিল। ফেরার পর বলল, ও প্রতিযোগিতা থেকে বাতিল হয়ে গিয়েছে। একটু অদ্ভুত লেগেছিল। কারণ জানতে চাইলাম। সেটা আরও অদ্ভুত ছিল। বলল, লক্ষ্য বিকৃতি (টার্গেট ট্যাম্পারিং) করার জন্য ওকে বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ শ্যুটিংয়ে লক্ষ্যের যে বৃত্ত থাকে, সেটা নিজে থেকে বা়ড়িয়ে দেওয়া।’’ এই ঘটনায় এখনও বিস্মিত জয়দীপ। বললেন, ‘‘আমার ২৫ বছরের শ্যুটিং জীবনে এরকম কখনও শুনিনি। ৩০ বছর আগে না কি কোনও একজনের ক্ষেত্রে এরকম ঘটেছিল। তাঁকে দু’ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছিল।’’
জয়দীপ জানালেন, ‘‘কণিকার মুখ থেকে তখন যেটুকু শুনি, দাবি করেছিল, ও নির্দোষ। কিন্তু ওকে না কি জোর করে দোষ স্বীকার করতে বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মুচলেকা দিতে হবে। এগুলোর কোনওটারই সত্যতা আমার জানা নেই। আমার পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। পুরোটাই ওর মুখ থেকে শোনা। যাই হোক, ওকে বোঝালাম। মনে হল, বুঝেছে। অনুশীলনও শুরু করল। স্বাভাবিকই লেগেছিল সব কিছু। তারপর এই ঘটনা।’’
জয়দীপ মেনে নিতে পারছেন না আত্মহত্যার ঘটনা। বললেন, ‘‘কী কারণে ও এই পথ বেছে নিল, জানি না। ওর বাবা-মা, পুলিশ ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু যে কারণই থাকুক না কেন, এই পথ বেছে নেওয়া মানা যায় না। কার ভিতরে কী চলছে, বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। কিন্তু কণিকাকে দেখে কখনও মনে হয়নি অবসাদে ভুগছে। আমদবাদের ঘটনাও তো দু’ মাস আগের।’’