Bridge

বাংলাকে এশিয়াডের সোনা দিয়েও লাভ হল না! হতাশায় ভেঙে পড়েছেন সালকিয়ার শিবনাথ

এশিয়ান গেমসে সোনা জেতার পর চেয়েছিলেন নিজের অ্যাকাডেমি গড়তে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও এগোতে পারেননি। পাশাপাশি, বাংলায় ব্রিজের প্রসার না ঘটাতেও হতাশা গ্রাস করছে শিবনাথ দে সরকারকে।

Advertisement

সৌরাংশু দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:১৯
Share:

সুখের সেদিন। এশিয়ান গেমসে সোনা জেতার পর শিবনাথ। ছবি: পিটিআই।

হুস করে কেটে গিয়েছে এক বছর। কেটেই গিয়েছে শুধু। জীবন এগোয়নি প্রত্যাশামাফিক। বরং থমকেই গিয়েছে। আর তাই এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ের বর্ষপূর্তিতে শিবনাথ দে সরকারের সঙ্গী হচ্ছে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা।

Advertisement

ছুটির অবকাশে তাস হাতে আড্ডায় মেতে ওঠা বাঙালির মননে গত সেপ্টেম্বরে ধাক্কা মেরেছিলেন দুই প্রৌঢ়। এশিয়ান গেমসের ব্রিজে ৬০ বছর বয়সি প্রণব বর্ধন ও ৫৬ বছর বয়সি শিবনাথের সোনা জেতা বদলে দিয়েছিল প্রচলিত ধারণা। তাস-দাবা-পাশার অন্য রকম পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দু’জনে। ব্রিজকে লজিকের খেলা, মগজাস্ত্রের লড়াই হিসেবে তুলে ধরেছিলেন বাঙালি চেতনায়।

এশিয়ান পর্যায়ে সোনা জেতার পর শিবনাথ চেয়েছিলেন এই সাফল্যকে খেলার প্রসারে ব্যবহার করতে। সংবর্ধনা, ফুল, মিষ্টি, উত্তরীয়, আর্থিক পুরস্কার, খেলাশ্রী— পেয়েছিলেন অনেক কিছু। কিন্তু সেটাতেই থেমে থাকতে চাননি। চেয়েছিলেন একটু জায়গা, যাতে নিজের অ্যাকাডেমিতে আগামী দিনের সাফল্যের বীজ বুনতে পারেন। আন্তর্জাতিক স্তরে দেশকে গর্বিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারেন। চোখে ছিল স্বপ্ন, মনে ছিল আশা। ছিল কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার আকুলতা। কিন্তু তা এখনও বিশ বাঁও জলেই!

Advertisement

হাওড়ার সালকিয়ার শিবনাথের বাড়িতে অনেক দিন ধরেই নিয়মিত বসে ব্রিজ শেখানোর আসর। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ৪৮ রাউন্ডের খেলা শেষ হতে হতে সন্ধে ছ’টা। ছাত্রের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলেই অ্যাকাডেমি গড়ার ভাবনা ক্রমশ স্বপ্নের চেহারা নেয়। উন্নত মানের ট্রেনিং, বিশ্লেষণ, প্র্যাকটিস চলাকালীন ভিডিয়ো কনফারেন্সে বিদেশি কোচকে আনা— পরিকল্পনা ছিল, আছেও অনেক। আধুনিকতম প্রযুক্তির সঙ্গে ব্রিজ-শিক্ষার্থীদের সখ্যতা গড়ে তোলাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন: মেসি আর আমি মোটেও বন্ধু নই, ওর থেকে বেশি ব্যালন ডি’অর জিততে চাই, বললেন রোনাল্ডো

দরকার ছিল সালকিয়ায় একটা হলঘর। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তা থাকলেই নিজের দায়িত্বে ল্যাপটপ-সহ প্রযুক্তির ব্যবস্থা করে ফেলার আত্মবিশ্বাস এখনও তুঙ্গে। কিন্তু, ব্যাপারটা ওই পরিকল্পনার পর্যায়েই দাঁড়িয়ে এখনও। প্রশাসনিক স্তরে সেই ভাবে যোগাযোগই করে উঠতে পারছেন না। সরকারি মহলে কাউকে বলেননি এমন নয়। সরকারি সংবর্ধনার সময় সরাসরি রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লর সঙ্গেই কথা হয়েছিল। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, তা বাস্তবায়িত হয়নি।

কেন্দ্রীয় স্তরে যদিও উৎসাহ টের পাচ্ছেন শিবনাথ। সাইয়ের তরফেও আগ্রহ রয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু, রাজ্য সরকারের তরফে সাড়াশব্দ পাচ্ছেন না। আনন্দবাজার ডিজিটালকে শিবনাথ সাফ বললেন, “না, এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে কোনও উৎসাহ পাইনি। লক্ষ্মীকে বলেছিলাম অ্যাকাডেমির কথা। ও উৎসাহও দেখিয়েছিল। তারপর হয়তো ভুলে গিয়েছে। তবে আমি জমি চাইনি। সালকিয়াতে সরকারের প্রচুর বিল্ডিং হচ্ছে। বলেছিলাম, সেখানে আমাকে কিছুটা জায়গা দেওয়া হোক। অনেক জিনিসপত্র থাকবে তো, সেগুলো যাতে নিরাপদ থাকে, সেটা শুধু নিশ্চিত করতে হবে। একটা পরিকাঠামো গড়ার পর ছেলেরা যেন সেটা ব্যবহার করতে পারে, তালাবন্ধ হয়ে পড়ে না থাকে।”

যোগাযোগ করা হলে লক্ষ্মীরতনের দাবি, “সরকারি পর্যায়ে নয়, আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা হয়েছিল। উনি জায়গা চেয়েছেন। আমি এখনও পর্যন্ত উপযুক্ত জায়গা পাইনি। জায়গা খুঁজে পেলে নিশ্চয়ই জানাব। ব্যাপারটা আমার নজরে আছে।”

হতাশার আর একটা দিক হল, ব্রিজের প্রসারে ভাটার টান। বিশেষ করে এই বাংলায়। সোনা জয়ের বর্ষপূর্তিতে বাংলায় ব্রিজের ভবিষ্যৎ কী? শিবনাথের গলায় যন্ত্রণা, “দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশে দেখলাম খেলাটা অনেক এগিয়েছে, পিছিয়েছে শুধু আমাদের রাজ্যে। আমরা নিজের রাজ্যেই সাপোর্ট পাইনি। বলা যায়, সোনা জেতার সুযোগটা অন্য রাজ্য নিয়েছে। লাভ ওদের হয়েছে। বাংলায় ঠিকমতো কিছু হল না।”

আরও পড়ুন: বিরাট-রোহিতের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ শিখর, বলছেন প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার​

বাংলায় উৎসাহ যে নেই, তা অবশ্য নয়। বিভিন্ন স্থানীয় ক্লাবে একদিনের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সেটাকে ঠিক ভাবে কাজে লাগানোর ইচ্ছা রয়েছে। ঠিক করেছেন, অ্যাকাডেমি গড়তে পারলে জুনিয়রদের সপ্তাহে দু’দিন ডাকবেন বিকেলে। আর যাঁরা প্রবীণ, সারা দিনের কাজকর্ম শেষ করে তারপর ব্রিজের দুনিয়ায় আসতে চান, তাঁদের জন্য সপ্তাহের অন্য দিন সন্ধেয় রাখবেন সময়। বাড়ির বড়রা খেললে তবেই তো নতুন প্রজন্ম ঝুঁকবে। পাশাপাশি, এটা যেন আড্ডার আসর না হয়ে ওঠে, জোর দিতে চাইছেন সেখানেও।

অ্যাকাডেমিকে উন্নত মানের করে তোলার জন্য রয়েছে অনেক ভাবনা। শিবনাথের মতে, “ছাত্রদের বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলিংয়ের ব্যবস্থা না করলে কিছু হবে না। সেই প্রযুক্তি সিঙ্গাপুর, চিন অনেক দিন আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছে। আমাদের এখানে এটা খুব কম। বিদেশি কোচের ফি অনেক বেশি। তবু সেই ব্যবস্থা আনতে চাইছি অ্যাকাডেমিতে। কারণ, এটা দরকার।”

এই এক বছরে বাংলাদেশের জাতীয় দলকে অনলাইনে কোচিং করিয়েছেন কিছুদিন। আর তাই পদ্মাপারের দেশের অগ্রগতি চমকে দিচ্ছে না। গত মাসে জর্ডনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে এক যুগ পরে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দু’দিন আগেও চিনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ হারিয়েছে ভারতকে। শিবনাথের কথায়, “এশিয়ান স্তরে ভারত একসময় সেরা ছিল। কিন্তু এখন ভারতকে টপকে এগিয়ে আসছে অন্য দেশগুলো। বাঙালির তো একসময় হাতের মুঠোয় ছিল তাস খেলা, কিন্তু এখন তা শূন্যে নেমে এসেছে। এগোচ্ছে না তো বটেই, বরং পিছিয়ে যাচ্ছে। খেলার জায়গা নেই, টুর্নামেন্টের জায়গা নেই। সমস্ত জিনিসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজের কাজ হচ্ছে না। হতাশা তাই তৈরি হচ্ছেই।”

বর্ষপূর্তিতে সঙ্গী হওয়া হতাশা কি দীর্ঘায়িত হবে? নাকি আগমনী সুরে ভেসে আসবে আশা? উত্তর আপাতত সময়ের গর্ভেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement