দুরন্ত: ব্রেন্ডনের সেই অপরাজিত ১৫৮ রান আজও সমীহ জাগায়।
এক যুগ আগে ১৮ এপ্রিল বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে প্রথম আইপিএলের প্রথম ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের যে ম্যাচে আমি খেলেছিলাম কেকেআরের জার্সি গায়ে। আর সেই ম্যাচে ৭৩ বলে অপরাজিত ১৫৮ রান করে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম একাই উড়িয়ে দিয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়, বিরাট কোহালিদের আরসিবিকে।
ম্যাকালামের সেই ১৩টা ছক্কা ও ১০টি চারের ইনিংসটার কথা মনে করলে আজও উত্তেজিত হয়ে পড়ি। আইপিএলের আগেই শুরু হয়েছিল আইসিএল। প্রচুর অর্থের হাতছানি ছিল। কিন্তু আমি আইপিএল বেছেছিলাম। তবে মনে সন্দেহ ছিল, স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক কি থাকবে? কিন্তু এই প্রথম ম্যাচটার পরে আমরা বুঝে যাই দুর্গাপুজো, দিওয়ালি, হোলির উন্মাদনা একত্র করে দেশে একটা ক্রিকেট কার্নিভ্যাল শুরু হল। আর সেই উন্মাদনার সলতেয় আগুন ধরিয়েছিল ম্যাকালামের ইনিংসটা।
সে বার আমাদের দলে ছিল বিশ্বের সেরা দুই ক্রিকেট মস্তিষ্ক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রিকি পন্টিং। এই দু’জনে মিলেই ম্যাচের ঠিক আগে সিদ্ধান্ত নেনে, ওপেন করবে ম্যাকালাম। সঙ্গে সৌরভ। তিন নম্বরে পন্টিং। যে ব্যাটিং অর্ডার দেখে অনেক প্রতিপক্ষই চাপে থাকত।
১২ বছর আগের সেই ১৮ এপ্রিল রাতে ড্রেসিংরুমে ঠিক হয়েছিল, প্রথম ছয় ওভারে ৪০ রান দরকার। উইকেট পড়া চলবে না। ম্যাকালামকে বলা হয়েছিল ধরে খেলতে। কিন্তু সে সব তোয়াক্কা না করেই দ্বিতীয় ওভারেই জাহির খানকে মেরে ম্যাকালাম ১৮ রান তুলতেই আমরা সবাই নড়েচড়ে বসি। ছয় ওভারে উঠছিল ৬১ রান। তখনই ড্রেসিংরুম জয়ের গন্ধ পেয়ে গিয়েছে। দেখলাম, দল মালিক শাহরুখ খান পাগলের মতো নাচতে শুরু করেছেন। ২০ ওভারে আমরা করি ২২২-৩। ম্যাকালাম অপরাজিত। আরসিবি হারে ১৪০ রানে।
সেই ম্যাচের পরে সারা রাত পার্টি হয়েছিল। শাহরুখ খান সেখানে ম্যাকালামকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো নাচছিলেন। আর বার বার বলছিলেন, ‘তুমিই এ বার আমার ঘোড়া। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, তুমি একাই তো আমাদের চ্যাম্পিয়ন করবে।’ কিন্তু ক্রিকেট এমনই এক মহান অনিশ্চয়তার খেলা যে সে বার ও রকম দুর্দান্ত সূচনা করেও আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি।
সেই রাতের পার্টিতে ওই আনন্দের মাঝেও ম্যাকালাম একটা শিক্ষা দিয়েছিল। ও নিজে জ্যাকি চ্যানের ভক্ত। দারুণ নাচে। সব সময়েই উৎফুল্ল থাকে। কিন্তু গোটা রাতের সেই চূড়ান্ত উচ্ছ্বাসেও এক বিন্দু মদ্যপান করেনি ও। নুন, লেবু দিয়ে জল পান করছিল বার বার। রাজকীয় ওই ইনিংসের সঙ্গে ওর এই সংযমও শিক্ষণীয়।