চ্যাম্পিয়নদের উৎসব।
এক জন করে গেলেন হ্যাটট্রিক। অন্য জন একটাই গোল। কিন্তু দিনের শেষে হ্যাটট্রিক চাপা পড়ে গেল চ্যাম্পিয়নদের উল্লাসে। লা লিগায় এ এই মরসুমের সপ্তম হ্যাটট্রিক করেও নায়ক হতে পারলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। পারলেন না, কারণ লিওনেল মেসির একটা গোলেই যে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বার্সেলোনা।
ঠিক এক মরসুম আগেই কাম্প ন্যুতে লা লিগার শেষ ম্যাচে আটলেটিকো মাদ্রিদ ১-১ ড্র করে বার্সার লা লিগা জেতার স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছিল। মেসি-নেইমারদের হাতে উঠতে দেয়নি কোনও ট্রফি। সেই আটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠেই এক বছরের মধ্যে তাদের সিংহাসনচ্যুত করল বার্সা। শুরুর ল্যাপে একটু-আধটু ধাক্কা খেলেও লিগ যত এগিয়েছে, বার্সা তত নিজের আধিপত্য ফিরে পেয়েছে।
বার্সার ফের সিংহাসনে ফেরার পিছনে সবথেকে বেশি অবদান অবশ্যই সেই ছোটখাটো ফুটবলারটির। যার বাঁ পা আটকাতে গিয়ে অনেক কোচ হোঁচট খেয়েছেন। শেষ ম্যাচ বাকি থাকতে এখনও পর্যন্ত লা লিগায় ৪১ গোল আর ১৮ অ্যাসিস্ট। সুয়ারেজ ও নেইমার সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছেন ঠিকই, তবে রিংমাস্টারের কাজটা করে গেলেন এলএম টেন। গত কাল ম্যাচের শেষে আটলেটিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনেও বলছিলেন, ‘‘মেসি একজন জিনিয়াস। ভাবলাম হয়তো ড্র হবে ম্যাচটা। তখনই হঠাত্ করে মেসির একটা ম্যাজিক পুরো বদলে দিল ছবিটা।’’
মরসুমের শুরুর দিকে ছবিটা অবশ্য বার্সার পক্ষে খুব সুখকর কিছু ছিল না। রিয়াল তখন পরপর ম্যাচ জিতছে। বার্সেলোনা ড্র করছে, হারছে। ডিসেম্বরের আগে অবধি মাঠের বাইরের ঘটনায় বিদ্ধ হতে হয় বার্সাকে। কখনও এনরিকে-মেসির দ্বন্দ্ব। কখনও আবার নেইমারকে সই করানোয় বার্সার বিরুদ্ধে মামলা। মনে হয়েছিল আর মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না কাতালানরা। তবে সুয়ারেজ ফর্মে ফেরার পরে ছবিটা বদলাতে থাকে। তৈরি হয় এমএসএন— মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার ত্রিভুজ। বিশ্বফুটবলের অন্যতম সফল ত্রিফলা। এল ক্লাসিকোর ফিরতি ম্যাচে রিয়ালকে ২-১ হারিয়ে তখনই এক রকম খেতাবটা ব্যাগে পুড়ে নেন এনরিকে।
২৩ নম্বর লা লিগা খেতাব জেতার পর বার্সার রাস্তায় শুরু হয়ে যায় সমর্থকদের উত্সব। বার্সা ফ্ল্যাগ হাতে সমর্থকদের গর্জন, ‘‘মাদ্রিদে বেশিদিন রাখতে দিলাম না ট্রফিটা।’’ বার্সা টিমও মাদ্রিদ থেকে ফেরার পথে মেতে উঠেছিল উৎসবে। ট্রেনে গোটা দলের সেল্ফি তোলা ছাড়াও মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের চিত্কার ‘‘ক্যাম্পিওনেস ক্যাম্পিওনেস।’’ গত ছ’বছরে চারটে ট্রফি জেতার পরে এলএম টেন নিজের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পোস্ট করেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন। লা লিগা আমাদের। গোটা দল দারুণ খেলেছে। ধন্যবাদ সমর্থকদের।’’ শুধু রাস্তায় কেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটও বার্সা সমর্থকরা দখল করে নেন। কেউ মিশরের পিরামিডের সামনে বার্সা ফ্ল্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে। কেউ আবার রিওর রিডিমারের সামনে মেসির জার্সি পরে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশেই চলছে মেসি বন্দনা।
মাঠে এবং মাদ্রিদ ছাড়ার পথে ট্রেনে।
২০০৮-০৯ পেপ গুয়ার্দিওলাও তাঁর অভিষেক মরসুমে স্প্যানিশ ত্রিমুকুট জিতেছিলেন। সেই মাইলস্টোনের থেকে মাত্র কয়েক ম্যাচ দূরে এনরিকে। সামনে এখন কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। তবে বার্সার নতুন প্রজন্ম তৈরি করা এনরিকে তাঁর ফুটবল কেরিয়ারে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেই জনপ্রিয় হয়েছিলেন। লস ব্ল্যাঙ্কোসদের হয়ে খেলা ১৫৭ ম্যাচে ক্লাবকে জিততে সাহায্য করেছিলেন লা লিগা। কিন্তু ঝামেলায় জড়িয়ে বার্সায় সই করেন। রিয়ালের বিরুদ্ধে সেই রাগ যেন আজও ভুলতে পারেননি এনরিকে। এই কারণেই হয়তো বলছেন, ‘‘লা লিগা জেতার থেকেও ভাল লাগছে এই ভেবে যে দৌড়ে রিয়াল মাদ্রিদকে পিছনে ফেলে দিয়েছি।’’ সঙ্গে আবার যোগ করছেন, ‘‘লা লিগা জিতে এ বার বাকি দুটো ট্রফিও জিততে হবে।’’
সাম্প্রতিককালে মেসি যাই করেছেন তাঁর সঙ্গে তুলনায় বরাবর আনা হয়েছে রোনাল্ডোকে। এ বারও সেই এক তর্ক। ২০০৯-এ রিয়ালে সই করার পরে মাত্র একটা লা লিগা ট্রফি জিততে পেরেছেন রোনাল্ডো। এলএম টেন সেখানে চারটে। ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে হয়তো অনেক বার মেসিকে পিছনে ফেলেছেন রোনাল্ডো। তাতে কী? ট্রফির পর ট্রফি ঠিক তুলে গিয়েছেন মেসি। এ বারও হয়তো সোনার বুট (লা লিগার সর্বোচ্চ স্কোরার) জিতবেন সিআর সেভেন।
তবে পরের বছরের ব্যালন ডি’অরে হয়তো এখন থেকেই মেসির নামটা লেখার ভাবনা শুরু হয়ে গেল।
ছবি: এএফপি।