Sangita Basfore

বিস্ময় গোলেও না জেতায় মন খারাপ সঙ্গীতার

সঙ্গীতার ফুটবল শুরু দশ বছর বয়সে মামা বিজয় বাঁশফোরকে দেখে। অসুস্থতার কারণে বাবা দীর্ঘ দিন ধরেই গৃহবন্দি।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:০২
Share:

ছন্দে: দূরপাল্লার শটে গোল করতে পছন্দ করেন সঙ্গীতা। ফাইল চিত্র।

ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি তিনি। তাসখন্দে বৃহস্পতিবার বেলারুশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে ভারত ১-২ হেরে গেলেও প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে করা বিস্ময় গোলে ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন সঙ্গীতা বাঁশফোর।

Advertisement

সঙ্গীতার ফুটবল শুরু দশ বছর বয়সে মামা বিজয় বাঁশফোরকে দেখে। অসুস্থতার কারণে বাবা দীর্ঘ দিন ধরেই গৃহবন্দি। মা কল্যাণীর একটি হাসপাতালের সাফাইকর্মী। প্রবল দারিদ্রের মধ্যেও ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নপূরণ করতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। কল্যাণী থেকে সপ্তাহে তিন দিন সল্টলেক সাইয়ে অনুশীলন করতে আসতেন সঙ্গীতা। তখন তাঁর বয়স চোদ্দো। সঙ্গীতার শৈশবের কোচ প্রতিমা বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘২০০৬ অথবা ’০৭ সালে সাই ও আইএফএ-র যৌথ উদ্যোগে মেয়েদের ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছিল। সাইয়ের কোচ পুলক দাস আমার সঙ্গেই অনুশীলন করাতেন। উনি আমাকে সঙ্গীতার কথা প্রথম বলেছিলেন। অনুশীলনে ওকে দেখেই ভাল লেগে গিয়েছিল।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘সে বছরই অনূর্ধ্ব-১৬ বাংলা দলে ডাক পায় সঙ্গীতা। জাতীয় ফুটবলে মণিপুরকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা। অসাধারণ খেলেছিল ও।’’ সঙ্গীতার জাতীয় দলে অভিষেকের নেপথ্যেও প্রতিমাদেবী। বলছিলেন, ‘‘অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের কোচ তখন ছিল শুক্লা দত্ত। ওকে আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম সঙ্গীতাকে নেওয়ার জন্য। তার পরে আর ওকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ভারতের সিনিয়র দলেও ডাক পায়।’’ গত বছর জাতীয় দলের অধিনায়কও হয়েছিলেন বঙ্গকন্যা।

শুক্রবার বিকেলেই তাসখন্দ থেকে দিল্লি পৌঁছয় ভারতীয় দল। অধিকাংশ সতীর্থ বাড়ি ফিরে গেলেও সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-র কর্মী সঙ্গীতার সেই সুযোগ নেই। তাঁকে বাগডোগরার বিমান ধরতে হয়েছিল। কারণ, শুক্রবারই তাঁর কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কথা। শিলিগুড়িতে পৌঁছে আনন্দবাজারকে সঙ্গীতা বললেন, ‘‘বেলারুশের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার কয়েক ঘণ্টা পরেই আমাদের ভারতে ফেরার বিমান ধরতে হয়েছিল। তাই প্রচণ্ড ক্লান্ত।’’ বেলারুশের বিরুদ্ধে তাঁর বিস্ময় গোল দেখে ফুটবলপ্রেমীরা মুগ্ধ শুনে যেন ক্লান্তি কিছুটা ভুললেন তিনি। তবে ভারতীয় দল জিততে না পারায় মন খারাপ সঙ্গীতার।

Advertisement

জাতীয় দলের নতুন বাঙালি তারকার শৈশবের কোচ অবশ্য বিস্মিত নন এই গোল নিয়ে। বলছিলেন, ‘‘সঙ্গীতা দূরপাল্লার শটে এ রকম গোল আগেও অনেক বার করেছে।’’ আরও বললেন, ‘‘সঙ্গীতা বল নিয়ে প্রচণ্ড গতিতে উঠতে পারে। পুরো মাঠ জুড়ে খেলে। আমি মনে করি, জাতীয় দলে মাঝমাঠের পরিবর্তে ওকে উই‌ঙ্গার হিসেবে ব্যবহার করলে আরও ভাল খেলবে।’’

কল্যাণীর মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও বছর চব্বিশের সঙ্গীতা বাংলার হয়ে খেলেন না। এসএসবি-র ফুটবলার তিনি। বাংলার হয়ে দীর্ঘ দিন খেলা সত্ত্বেও চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে সঙ্গীতা যোগ দেন সেনা দলে। বাংলার ফুটবলে বঞ্চনার এই ছবি না বদলালে সঙ্গীতার মতো প্রতিভারা এ ভাবেই চলে যাবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement