জুটি: আরসিবির বড় ভরসা দুই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। এ বি ডিভিলিয়ার্স এবং বিরাট কোহালি। ফাইল চিত্র
বরাবরের তারকা ঝলমলে দল। বিরাট কোহালি, এবি ডিভিলিয়ার্স, দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন ‘ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেল। কিন্তু ১৩টি আইপিএল বেরিয়ে গিয়েছে, আজও ট্রফি অধরা আরসিবি-র। গত বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে প্লে-অফে উঠেও শূন্য হাতেই ফিরতে হয় কোহালিদের। এ বারে অধিনায়ক শিবিরে যোগ দিয়েই বলেছেন, মন বলছে ভাল কিছু ঘটবে। সত্যিই ঘটবে? দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট ভক্তরা।
ব্যাটিং: বরাবরই তারকার মেলা আরসিবি ব্যাটিংয়ে। প্রধান স্তম্ভ সেই কোহালি এবং ডিভিলিয়ার্স। অধিনায়ক কোহালি জানিয়ে দিয়েছেন, ওপেন করবেন। অতীতে আইপিএলে ওপেন করে চারটি সেঞ্চুরি-সহ ৯৭৩ রান করেছিলেন। সেই সফল মরসুমের পরেও কেন তিনি এত দিন নিয়মিত ওপেন করেননি, সেটাই বিস্ময়কর। গত বারের আবিষ্কার দেবদত্ত পাড়িকল শুরুতে নামবেন কোহালির সঙ্গে। তিনে ডিভিলিয়ার্স। উইকেটের চারদিকে যে কোনও শট খেলতে পারেন বলে যাঁকে ‘৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান’ বলা হয়। অ্যারন ফিঞ্চকে ছেড়ে দিয়ে আরসিবি এ বারে কিনেছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার ছন্দে থাকলে ব্যাট হাতে যে কোনও ম্যাচ একা ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তাঁর ছক্কা মারার দক্ষতা নিঃসন্দেহে ব্যাটিংয়ে পেশি যোগ করবে। শুরুতে বিরাট, মাঝের দিকে ডিভিলিয়ার্স-ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট চললে যে কোনও স্কোরই তুলে ফেলা সম্ভব। ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝড় তোলা নতুন এক মহম্মদ আজ়হারউদ্দিনকে নিয়ে অনেকে আশাবাদী। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ১৯৪.৫৪ স্ট্রাইক রেট ছিল উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান এই নতুন আজ়হারের। নিউজ়িল্যান্ডের হয়ে সদ্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অকল্যান্ডে টি-টোয়েন্টিতে ২৯ বলে ৭১ করা ফিন অ্যালেন বড় চমক হয়ে উঠতে পারেন। এমনই ভয়ডরহীন ক্রিকেটার অ্যালেন যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত কুড়ি ওভারের সিরিজে পর-পর দু’টি ম্যাচে প্রথম রান করেন রিভার্স সুইপে।
অলরাউন্ডার: ম্যাক্সওয়েল অবশ্যই এই বিভাগে সব চেয়ে বড় তারকা। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিনার হিসেবেও স্বচ্ছন্দে কয়েক ওভার করে দিতে পারবেন। সম্প্রতি ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করা ওয়াশিংটন সুন্দরের উপরেও অনেক বেশি নির্ভরতা থাকবে এ বার। ব্যাট হাতে উপরের দিকেও ব্যবহার করা যায় তাঁকে, আবার নীচের দিকের ব্যাটিংও শক্তিশালী দেখাবে তাঁর উপস্থিতির জন্য। কর্নাটকের পবন দেশপাণ্ডেও আছেন। বাঁ হাতে ব্যাট করেন, সঙ্গে ডান হাতি অফস্পিন। নিউজ়িল্যান্ডের কাইল জেমিসনও রয়েছেন। ভারতের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ব্যাট-বল হাতে নজর কেড়েছিলেন ৬ ফিট ৭ ইঞ্চির জেমিসন। সম্প্রতি খুব ভাল ছন্দে না থাকলেও আইপিএলের ঝলমলে মঞ্চে তরুণ অলরাউন্ডার মুখিয়ে থাকবেন ভাল কিছু করার জন্য।
বোলিং: আরসিবি-র স্পিন বিভাগ দুর্দান্ত। লেগস্পিনার যুজ়বেন্দ্র চহাল গত আইপিএলেও দারুণ সফল। হালফিলে ভারতের হয়ে খেলার সময়ে ছন্দ হারিয়েছেন, বাদ পড়েছেন ঠিকই। কিন্তু আইপিএলের মঞ্চে চহাল অন্য রকম বোলার। সঙ্গে ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো তরুণ, বুদ্ধিদীপ্ত অফস্পিনার রয়েছেন, যিনি পাওয়ার প্লে-তে দারুণ সফল। ম্যাক্সওয়েলের অফস্পিনও কাজে লাগতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার তরুণ লেগস্পিনার অ্যাডাম জ়াম্পা আছেন। পেস বোলিং সামলানোর মূল দায়িত্ব থাকবে দুই ভারতীয় তরুণ মহম্মদ সিরাজ এবং নবদীপ সাইনির কাঁধে। বিদেশিদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে সফল ফাস্ট বোলার কেন রিচার্ডসনও আছেন।
শক্তি: আরসিবি-র প্রধান সম্পদ অবশ্যই দুর্ধর্ষ ব্যাটিং। কোহালি এবং ডিভিলিয়ার্স এক সঙ্গে ব্যাট করলে বিশ্বের যে কোনও বোলিং আক্রমণ আতঙ্কিত হবে। তার সঙ্গে এ বার ম্যাক্সওয়েলের নাম যুক্ত হয়েছে। এর সঙ্গে কোহালিদের বড় অস্ত্র যুজ়বেন্দ্র চহাল। লেগস্পিনারের চারটি ওভারের দিকে সব চেয়ে বেশি করে তাকিয়ে থাকেন অধিনায়ক কোহালি।
দুর্বলতা: ম্যাক্সওয়েল আন্তর্জাতিক মঞ্চে সফল হলেও অজ্ঞাত কারণে আইপিএলে নিষ্প্রভ। আরসিবি চাইবে, নতুন ম্যাক্সওয়েলের উদয় ঘটুক তাদের জার্সিতে। পেস বোলিং বিভাগে অভিজ্ঞতা কম। সিরাজ ও সাইনি খুব বেশি ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি খেলেননি ভারতের হয়েও। ব্যাটিং ঝড়ের মুখে পড়লে চাপের মধ্যে ভেঙে পড়ার ভয় রয়েছে। শেষের ওভারগুলিতে আলগা বোলিং আরসিবি-র ট্রফি খরার অন্যতম বড় কারণ। সাইনি-সিরাজকে তাই ইয়র্কার অস্ত্রে শান দিয়ে রাখতে হবে। কোহালি, দেবদত্ত ছাড়া ভাল ভারতীয় ব্যাটসম্যান নেই।
সম্ভাব্য প্রথম একাদশ: বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), দেবদত্ত পাড়িকল, এ বি ডিভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ফিন অ্যালেন, মহম্মদ আজ়হারউদ্দিন/পবন দেশপাণ্ডে, ওয়াশিংটন সুন্দর, কাইল জেমিসন, মহম্মদ সিরাজ, যুজ়বেন্দ্র চহাল এবং নবদীপ সাইনি।
পূর্বাভাস: ট্রফির খরা মেটাতে গেলে ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে কোহালিদের। প্লে-অফে যাওয়া উচিত।