রোনাল্ডোর ‘রিয়াল’ যন্ত্রণা। ছবি: এএফপি।
বাহাত্তর ঘণ্টা আগে বার্সেলোনার মতো হেভিওয়েটকে হারিয়ে নিজেদের মরসুমে নতুন প্রাণ এনেছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। তিন দিনেই সব ভেঙে চুরমার। যে দল এল ক্লাসিকোয় এমএসএন-কে আটকে দিয়েছিল, তারাই এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে! দশ বারের চ্যাম্পিয়ন তাকিয়ে রয়েছে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে তাদের অন্যতম লজ্জাজনক বিদায়ের দিকে।
বুধবার রাতে ফোক্সভাগেন এরিনায় কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম পর্ব শেষে উল্ফসবার্গের মাঠে তখন চলছে উৎসব। স্কোরলাইন দেখাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম অঘটন। উল্ফসবার্গ-২ : রিয়াল মাদ্রিদ-০! যে উল্ফসবার্গ প্রথম বার শেষ আটে উঠেই চমকে দিয়েছে ফুটবলবিশ্বকে।
কিন্তু রিয়ালের বিবিসি-র চোখে আঙুল দিয়ে গত রাতে জার্মানির ক্লাবটি প্রমাণ করল ফুটবলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। ম্যাচে স্বাভাবিক ভাবে রিয়ালই ফেভারিট হিসেবে শুরু করেছিল। বল পজেশন থেকে আক্রমণ সবই ছিল জিনেদিন জিদান-ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দলের দখলে। যে কাসেমিরো ক’দিন আগেই বার্সার বিরুদ্ধে রিয়ালকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি উল্ফসবার্গ ম্যাচের ছবিও পাল্টে দেন। তবে বিপক্ষকে পেনাল্টি উপহার দিয়ে।
স্পট কিক থেকে গোল করতে কোনও ভুল করেননি রিকার্ডো রদ্রিগেজ। এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্লিনশিট হারান রিয়াল গোলকিপার কেলর নাভাস। লস ব্ল্যাঙ্কোস তখনও বিশ্বাস করতে পারছে না উল্ফসবার্গ এগিয়ে গিয়েছে। টাচলাইনে কোচ জিদানও স্তম্ভিত। রিয়ালকে আরও চমকে দিয়ে তার কিছুক্ষণ পরে ফের নাভাসকে পরাস্ত করেন ম্যাক্সিমিলিয়ান আর্নল্ড। তার পর থেকে রিয়াল আক্রমণ বনাম উল্ফসবার্গ ডিফেন্স চললেও সেই কঠিন পরীক্ষায় পাস করে জার্মান দলই।
ম্যাচ শেষ হওয়ামাত্র টুইটার জুড়ে শুরু হয়ে যায় উল্ফসবার্গের প্রশংসা। সমর্থকরাও এক প্রকার ভেবে নিয়েছেন প্রিয় ক্লাব সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছে। হোক না এটা প্রথম পর্ব। রোনাল্ডো কারও সঙ্গে করমর্দন না করেই মাঠ ছাড়েন। তাঁর মহার্ঘ জার্সি কাউকে দেওয়ার আব্দারও মেটাননি। সোজা ড্রেসিংরুমে গটগট করে হাঁটতে হাঁটতে চলে যান। সাংবাদিকদের সামনে এক-একজন রিয়াল প্লেয়ারের মুখে এক-একটা অজুহাত। গ্যারেথ বেল যেমন মনে করছেন, ম্যাচে তাঁদের বিরুদ্ধে রেফারিং খারাপ হয়েছে। ‘‘আমাকে লুইস গুস্তাভো ট্যাকল করল পেনাল্টি বক্সে। কিন্তু রেফারি দেখলেন না। যাই হোক এখনও দ্বিতীয় পর্ব আছে। নিজেদের মাঠে ভাল খেলতে হবে। তিন গোলে জিততেই হবে,’’ বলেছেন বেল।
তবে বেল যাই বলুন না কেন, জিদান মনে করছেন এই হারের পিছনে দায়ী রেফারি নন। দায়ী তাঁর দলের ফুটবলাররাই। যাঁরা বার্সাকে হারিয়েই আত্মতুষ্টি নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথমার্ধে ম্যাচের উপর প্রভাব ফেলতে পারেনি তাঁর দল। জিদান বলেছেন, ‘‘আমি একদম খুশি নই। বিশেষ করে প্রথমার্ধের খেলায়। এ রকম হার কপালে জোটে যদি কেউ শুরুর থেকেই ভাল করে না খেলে।’’ হারের কারণ খুঁজতে বসে জিদান আরও যোগ করেন, ‘‘দ্বিতীয় পর্বে এখনও আমাদের সুযোগ আছে। তিন দিনের মধ্যেই এইবারের বিরুদ্ধে ম্যাচ আছে। সেই ম্যাচে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। দেখতে হবে কোথায় ভুল হয়েছে।’’
উল্ফসবার্গ কোচ দিটার হেকিং আবার যেন ধন্যবাদ দিচ্ছেন রিয়ালকে। ‘‘রিয়াল দরজা খোলা রেখেছিল। আর আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগালাম।’’ ম্যাচে আবার বিতর্কও তৈরি করেন মার্সেলো। একটা সময় প্লে-অ্যাকটিং করে দু’দলের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে দেন ব্রাজিলীয় ফুলব্যাক। হেকিং বলছেন, ‘‘আমি মার্সেলোকে বললাম তোমাকে নাটক করা বন্ধ করতে হবে।’’ ০-২ থেকে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাসও রিয়ালের এমন কিছু ভাল নয়। অন্তত শেষ ২৯ বছরে রিয়াল সেটা করতে পারেনি। শেষ বার ২০০২-তে বায়ার্নের বিরুদ্ধে ১-২ হেরে দ্বিতীয় পর্বে ২-০ জেতে লস ব্ল্যাঙ্কোস। তবে এখন রিয়ালের অদৃশ্য স্লোগান হয়তো প্রয়াত ক্লাব কিংবদন্তি হুয়ানিতোর সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘‘বের্নাবাওতে নব্বই মিনিট মানে খুব লম্বা নব্বই মিনিট।’’
অন্য ম্যাচ— ‘এল ক্যাশিকো’তে আবার অ্যাডভান্টেজ ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। প্যারিস সাঁ জাঁর বিরুদ্ধে দুটো অ্যাওয়ে গোল পেয়ে ২-২ ড্র করল সের্জিও আগেরোরা। তবে প্যারিসে ম্যাচটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ডিফেন্সের ভুল আর ঘরের মাঠে ইব্রাহিমোভিচের পেনাল্টি নষ্টে।