উদয়: নতুন তারা শুভমনে পূর্ণ আস্থা নির্বাচকদের। ফাইল চিত্র
২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানমেশিন। মাত্র ১৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ১৪৪৩ রান। গড় ৭২.১৫।
ভিভ রিচার্ডসের দেশে সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করে গৌতম গম্ভীরের রেকর্ড ভাঙা।
শাহরুখ খানের নাইট রাইডার্সের জার্সিতে সুদর্শন মুখ এবং সুন্দর ব্যাটিংয়ে কলকাতার হৃদয় জয় করে নেওয়া।
ক্রিকেটমহল নিশ্চিত, বৃহস্পতিবার ভারতের ক্রিকেট আকাশে উদয় হল এক নতুন তারার। যাঁর নাম শুভমন গিল। সদ্য ২০ বছরে পা দিয়েছেন। পঞ্জাবের কৃষিবিদের সন্তান। যাঁকে ট্র্যাক্টর চালানো চাষের জমিতে ক্রিকেট শেখাতেন তাঁর বাবা। আনন্দবাজারে এদিনই বেরনো পূর্বাভাস মতো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আসন্ন টেস্ট সিরিজের ১৫জনের দলে ঢুকে পড়লেন শুভমন। তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে ‘ফ্লোটার’ হিসেবে। টেস্ট ক্রিকেটে এমন পদ এই প্রথম দেখা যাবে। যেখানে টি-টোয়েন্টি বা ওয়ান ডের মতো যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে ব্যাটসম্যান তৈরি করে রাখা হচ্ছে। শুভমন প্রয়োজনে ওপেন করবেন। আবার মিডল অর্ডারেও খেলতে পারেন। যখন যেখানে ফাঁক তৈরি হবে। শুভমনকে এমনই প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন ধরা হচ্ছে যে, অদূর ভবিষ্যতে তিনি তিনটি ফর্ম্যাটে জায়গা করে নিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
প্রত্যাশা মতোই মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে উত্তরণ ঘটতে চলেছে রোহিত শর্মার। তিনি অবশ্য আর ‘ফ্লোটার’ থাকছেন না। ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হলেও টেস্টে রোহিতের জায়গা বরাবর নড়বড়ে থেকে গিয়েছে। দল পরিচালন সমিতির নিরঙ্কুশ সমর্থনও তিনি বারবার পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকাতেই অজিঙ্ক রাহানেকে বসিয়ে তাঁকে খেলানো হয়েছিল। যা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে। এ বার কিন্তু তাঁর টেস্ট কেরিয়ার এসপার-ওসপার বিন্দুতে এসে দাঁড়াচ্ছে। মোটামুটি ভাবে যা ঠিক হয়েছে, রোহিতকে ওপেনার হিসেবে যথেষ্টই সুযোগ দেওয়া হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই ভারত খেলবে তিনটি টেস্ট। ছ’টি ইনিংসে রোহিত ওপেন করার সুযোগ পেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ঠিক যে ভাবে বীরেন্দ্র সহবাগকে ওপেনার বানিয়ে সৌরভ বলে দিয়েছিলেন, ‘‘বীরু তুই ওপেন কর। মিডল অর্ডারে জায়গা করতে পারছি না। কথা দিচ্ছি তুই পুরো সিরিজ পাবি।’’ রোহিতকেও তেমনই প্রতিশ্রুতি দেবেন কোহালিরা। কথা হচ্ছে সহবাগ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা টেস্ট ওপেনার হয়ে উঠেছিলেন। রোহিত একই ভাবে ওয়ান ডের মতো টেস্টেও নিজেকে অপরিহার্য করে তুলতে পারেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ওপেনার হিসেবে দাগ কাটতে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজে বড় রান করে দেখাতে হবে তাঁকে।
না হলে রোহিত ফের টের পাবেন, দয়ালু ক্রিকেট সময়ে-সময়ে কত নির্মমও হয়ে উঠতে পারে। যে ভাবে বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে আসার পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজে তাঁকে ড্রেসিংরুমেই বসে থাকতে হয়েছিল। তেমনই আসন্ন সিরিজে রান না পেলে তাঁর জায়গা নেওয়ার জন্য অনেক তরুণ রক্ত অপেক্ষায়। তার মধ্যে এক নম্বর নাম শুভমন গিল। মিডল অর্ডারে চেতেশ্বর পুজারা, বিরাট কোহালি, অজিঙ্ক রাহানে এবং ক্যারিবিয়ান সফরে সফল হনুমা বিহারীদের ভিড়ে ট্র্যাফিক জ্যাম লেগে আছে। শুভমনের যদি মিডল অর্ডারে জায়গা না করা যায়, তা হলে ওপেনার হিসেবেই ভাবা হবে। তিনি তাই মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং রোহিতকে চাপে রাখার জন্য ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন।
আরও দু’জন তরুণ ওপেনার দ্রুতগতিতে উঠে আসছেন। একজন বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরন। অন্যজন গুজরাতের প্রিয়ঙ্ক পঞ্চাল। দু’জনকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশে রাখা হয়েছে। তেমনই বাংলা থেকে সুযোগ পেয়েছেন জোরে বোলার ঈশান পোড়েল। সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান সফরে ভারতীয় এ দলের হয়ে খুব ভাল খেলেছিলেন শুভমন। একটি ডাবল সেঞ্চুরি-সহ তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। সেই সফরে অভিমন্যু রান করতে পারেননি। সেটাই তাঁকে আসন্ন সিরিজে কিছুটা পিছিয়ে দিল। আবার দলীপের ফাইনালে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন। এবং যদি বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের হয়ে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিরুদ্ধে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলার ওপেনারের জন্য সুযোগের দরজা খুলে যেতেই পারে। অভিমন্যুকে এখন শুধু রান এবং রান করেই যেতে হবে। যেমন মায়াঙ্ক আগরওয়াল দু’হাজারের কাছাকাছি রান করে সুযোগ পেয়েছিলেন। যেমন শুভমন গিল ঘরোয়া ৭২.১৫ গড় এবং ৭৫-এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেট রেখে মু্গ্ধ করে দিয়েছেন সকলকে। তেমনই অভিমন্যুকে বৃহস্পতিবারের পরে মনে রাখতে হবে, ভারতীয় দলের সিংহদুয়ার তাঁর জন্য বন্ধ নয়। আসলে ঈষৎ ফাঁকই হয়ে রয়েছে। এ বার সেই দুয়ার হাট করে খুলে ফেলতে গেলে রানের পাহাড় দিয়ে ধাক্কা মারতে হবে।
কে এল রাহুলকে নিয়ে ভারতীয় দল পরিচালন সমিতির মোহভঙ্গ ঘটেছে। ইংল্যান্ড সফরে ওভালে সেঞ্চুরি বাদ দিলে মোটেও ভাল খেলতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়াতে ভাল রান পাননি। আর সদ্য শেষ হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দু’টেস্টের চার ইনিংসে তাঁর মোট রান ছিল ১০১। গড় ২৫.২৫! এর পরে যে তাঁকে বয়ে বেড়ানোর কোনও অর্থ নেই, সে ব্যাপারে কারও কোনও দ্বিমত নেই। তাঁকে আবার ঘরোয়া ক্রিকেটেই ফিরে যেতে হচ্ছে। সেখানে তাঁকে অভিমন্যু এবং প্রিয়ঙ্কের মতো দুই তরুণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আবার প্রচুর রান করে ফিরতে হবে। যদি মায়াঙ্ক এবং রোহিত ব্যর্থও হন, তা হলেও তিন নতুন তারকা ওপেনারের দৌড়ে থাকছেন। তাঁরা হলেন শুভমন, অভিমন্যু এবং প্রিয়ঙ্ক। এদের সুযোগ না দিয়ে রাহুলের কাছে ফিরে যাওয়া কঠিন হবে। ফলে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব তারকাকে আবার টেস্ট দলে ফিরতে হলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।
ভিজ়িয়ানাগ্রামে ২৬ সেপ্টেম্বর তিন দিনের ম্যাচ খেলবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ। যে দলে চার ওপেনারকেই রাখা হয়েছে। তবে নির্বাচকদের নজর থাকছে আগামী বছরের শুরুতে ভারতীয় দলের নিউজ়িল্যান্ড সফরের দিকে। সেখানে দু’টি টেস্ট খেলবেন কোহালিরা। রোহিত এবং মায়াঙ্ক যদি কিছু করতে পারেন তো ভাল, না হলে ওপেনিং নিয়ে নতুন ‘সিরিয়াল’ চলতেই থাকবে।