মু্ম্বইয়ের বরিভেলি স্পোর্টস ক্লাবে রোহিত শর্মা ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন ১১ বছর বয়সে। সেই ক্লাবেই ২৮ বছর বয়সে হাঁটু মুড়ে বসেছিলেন। মহার্ঘ্য হিরের আংটি দিয়ে প্রোপোজ করেছিলেন তাঁর ম্যানেজার রিতিকা সজদেহকে। এর পর পেশাদারি সম্পর্ক দাম্পত্যে পাল্টে যাওয়া ছিল কয়েক মাসের অপেক্ষা।
মুম্বইয়ের ঝকঝকে তরুণী রিতিকা ছিলেন স্পোর্টস ইভেন্ট ম্যানেজার। সেই সূত্রেই আলাপ রোহিতের সঙ্গে। ৬ বছর ধরে রোহিতের কেরিয়ারের দেখভাল করেন তিনি। সেখান থেকেই আলাপ। ক্রমে আলাপ থেকে বন্ধুত্ব। রিতিকাকে নিজের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ বলতেন রোহিত।
যুবরাজ সিংহের সঙ্গেও রিতিকা খুব অন্তরঙ্গ। তিনি যুবির পাতানো বোন। নতুন প্রজন্মের পরিভাষায় ‘রাখি সিস্টার’।
৬ বছর ধরে পেশাদার সম্পর্ক যে একটু একটু করে প্রেমের দিকে এগোচ্ছে, বুঝতে পেরেছিলেন রোহিত-রিতিকা দু’জনেই। তবে রোহিত যে এত নাটকীয় ভাবে প্রোপোজ করবেন, ভাবতে পারেননি রিতিকা।
প্রোপোজের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতেও সময় নেননি রিতিকা। ক্রিকেটার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বরিভেলি ক্রিকেট ক্লাবকেই রোহিত বেছে নিয়েছিলেন বিয়ের প্রস্তাব জানানোর জায়গা হিসেবে।
২০১৫ সালের ৩ জুন রোহিত এবং রিতিকার এনগেজমেন্ট হয়। রোহিত টুইট করেন, ‘আমরা এ বার প্রিয়তম বন্ধু থেকে জীবনসঙ্গী’। সে বছরই ডিসেম্বরে তাঁরা বিয়ে করেন। মুম্বইয়ের ‘তাজ ল্যান্ডস’ হোটেলে তাঁদের বিয়ের আসরে আমন্ত্রিত ছিলেন ক্রিকেট, বলিউড এবং শিল্পজগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তারকা রোহিতের বিয়ের আগে পার্টি দিয়েছিলেন মুকেশ অম্বানী। জমকালো প্রি ওয়েডিং পার্টিতে চাঁদের হাট বসেছিল রোহিতের সহযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে।
পেশার সূত্রে বিয়ের আগে থেকেই ক্রিকেটে উৎসাহী রিতিকা। স্টেডিয়ামে রোহিতের ম্যাচ থাকলে গ্যালারিতে রিতিকা প্রায় অবশ্যম্ভাবী। সোশ্যাল মিডিয়ায় মাঝে মাঝেই রোহিতকে নিয়ে পোস্ট করেন রিতিকা।
বিয়ের আগে মডেল-অভিনেত্রী সোফিয়া হায়াতের সঙ্গে রোহিত শর্মার প্রেমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। পরে সংবাদ মাধ্যমে সোফিয়া জানান, লন্ডনে একটি পার্টিতে তাঁর সঙ্গে রোহিতের আলাপ হয়েছিল। সেখান থেকেই সম্পর্কের সূত্রপাত বলে দাবি সোফিয়ার।
তাঁর সঙ্গে রোহিতের সম্পর্ক ছিল বলে পরে টুইটও করেছিলেন সোফিয়া। সেখানে এ কথাও জানান, তাঁদের সেই সম্পর্ক এখন অতীত। বিচ্ছেদের জন্য রোহিতকেই দায়ী করেন সোফিয়া।
রোহিত নাকি সংবাদ মাধ্যমে তাঁর জীবনে সোফিয়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। এর পরেই সম্পর্ক থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এই ব্রিটিশ মডেল। টুইটারে ব্লক করে দেন রোহিতকে।
বিনোদন দুনিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়ে সোফিয়া মাঝে সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করেছিলেন। পরে অবশ্য বিয়ে করেন মডেল ভ্লাদ স্টানেস্কুকে।
তবে অতীতের কোনও টানাপড়েন ছায়া ফেলেনি রোহিত-রিতিকা সম্পর্কে। ভারতীয় ক্রিকেটমহলে অন্যতম জনপ্রিয় এই জুটি। তাঁদের একমাত্র মেয়ের নাম সামাইরা। ২০১৮-র ডিসেম্বরে জন্ম হয়েছে সামাইরার।
৫ বার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে আইপিএল ট্রফি এনে দেওয়া রোহিত শর্মার জীবন এগিয়েছে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। তাঁর বাবা গুরুনাথ ছিলেন একটি পরিবহণ সংস্থার গুদামঘরের কেয়ারটেকার। অর্থাভাবে বড় ছেলে রোহিতকে রাখতে পারতেন না নিজের কাছে।
ঠানের কাছে বম্বিভলিতে এক কামরার বাড়িতে বাবা গুরুনাথ, মা পূর্ণিমা এবং ভাই বিশালকে রেখে রোহিত বাধ্য হয়েছিলেন মুম্বইয়ের বরিভলিতে চলে আসতে। তিনি থাকতেন ঠাকুরদা, ঠাকুমা এবং কাকাদের সঙ্গে। সপ্তাহান্তে এক বার রোহিত যেতেন বাবা মায়ের কাছে।
কাকার অর্থসাহায্যেই রোহিতের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষক দীনেশ লাড তাঁকে স্কুল পরিবর্তন করার কথা বলেন। কিন্তু রোহিতের পরিবারের সেই সামর্থ্য ছিল না। শেষে দীনেশ তাঁর জন্য জলপানির ব্যবস্থা করেন। তার পরে রোহিত ভর্তি হন স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে।
এই স্কুলে ক্রিকেটের পরিকাঠামো অনেক ভাল ছিল। কেরিয়ারের পিছনে স্কুলের অবদান ভুলতে পারেন না রোহিত। সেইসঙ্গে এ কথাও জানান, প্রশিক্ষক দীনেশের চেষ্টায় জলপানি পেয়েছিলেন বলেই ৪ বছর তাঁকে ক্রিকেটের জন্য কোনও টাকা খরচ করতে হয়নি।
কেরিয়ারের শুরুতে তিনি ছিলেন স্পিনার। পরে দীনেশের পরামর্শে ব্যাটিংয়ে নজর দেন। দীনেশই তাঁকে ৮ নম্বর থেকে তুলে এনে ওপেনিংয়ে পাঠান। স্কুল ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত পারফরম্যান্সের দৌলতে রোহিতের সামনে জাতীয় দলের দরজা খুলে যায় ২০০৭ সালে।
আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি প্রথম ওয়ান ডে খেলেন ২০০৭ সালে। টেস্টে অভিষেক আরও ৬ বছর পরে। ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম বার টিম ইন্ডিয়ার হয়ে টেস্টে মাঠে নামেন রোহিত।
এখনও অবধি ৩২ টেস্টে রোহিতের সংগ্রহ ২১৪১ রান। সর্বোচ্চ রান ২১২। উইকেট পেয়েছেন ২টি। ২২৪ ওয়ানডেতে তাঁর সংগ্রহ ৯১১৫ রান। সর্বোচ্চ ২৬৪। উইকেট শিকারের সংখ্যা ৮।
রোহিতের আইপিএল কেরিয়ার শুরু হয়েছিল ডেকান চার্জার্সের হয়ে। ২০১১ থেকে তিনি আছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। গত কয়েক বছর মুম্বইয়ের অধিনায়কও তিনি। তাঁর অধিনায়কত্বে মুম্বই আইপিএল জয়ী হয়েছে ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে।
ভারতীয় দলের সহঅধিনায়ক রোহিত পশুপ্রেমী। তিনি পেটা-র সদস্য। যুক্ত ডব্লুডব্লুএফ ইন্ডিয়ার সঙ্গেও। পাশাপাশি, রোহিত সক্রিয় সমাজসেবামূলক কাজেও।
ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের বাইরে অন্যান্য মাইলফলক একে একে ছুঁতে চান রোহিত। স্বপ্নপূরণে তাঁর সঙ্গী স্ত্রী রিতিকা।