লড়াকু: তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে লড়তে হল ফেডেরারকে। ছবি: এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শুরু হওয়ার আগেই আতঙ্কের চিহ্ন ছিল। তাঁর ভক্তরা দেখেও না দেখার ভঙ্গিতে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। এ বারে কিন্তু আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচও জিতলেন রজার ফেডেরার। কিন্তু ফের তাঁকে পাঁচ সেট ধরে লড়াই করতে হল। টেনিস দুনিয়ায় ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ৩৬ বছরের ফেডেরারের কোমরের চোট কি তাঁকে ভোগাচ্ছে? গত বছরেই হাঁটুর অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় ছ’মাস কোর্টের বাইরে ছিলেন ফেডেরার। ফিরে এসে এ বছরের শুরুতে আঠেরোতম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন অস্ট্রেলীয় ওপেনে। স্ল্যাম নম্বর ১৯ করেন উইম্বলডনে। নিজেকে চাঙ্গা রাখার জন্য রাফায়েল নাদালের গুহা ফরাসি ওপেনে খেলতে যাননি।
তবুও যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের দু’সপ্তাহ আগে মন্ট্রিয়লে খেলতে গিয়ে কোমরে চোট লাগে তাঁর। যে কারণে সিনসিনাটি ওপেন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি। ফ্লাশিং মেডোজে খেলতে এলেও পুরনো রজারের যে ঝলক এ বছর দেখা যাচ্ছিল, সেটা প্রথম দু’টি ম্যাচে উধাও। তাঁর বিখ্যাত এক হাতের ব্যাকহ্যান্ড শটকে খুবই দুর্বল দেখাচ্ছে। সেটা দেখেই সন্দেহ বেড়েছে যে, কোমরের চোট পুরোপুরি সেরেছে কি না। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে প্রথম রাউন্ডে অনামী আমেরিকান টিনএজার ফ্রান্সেস তিয়াফো-কে হারাতে পাঁচ সেটে লেগেছে তাঁর।
দ্বিতীয় রাউন্ডে মিখাইল ইয়ুঝনি-কে হারাতে গিয়ে যে রকম সংগ্রাম করতে হয়েছে ফেডেরারকে, তার পর মনে হতে বাধ্য যে, কোথাও একটা সমস্যা রয়েছে। যদি মাস্ল ক্র্যাম্পের জন্য না ভুগতেন ইয়ুঝনি, তা হলে ফেডেরার হেরেও যেতে পারতেন। অথচ, ২০০০ সাল থেকে শুরু করে কখনও ফেডেরারকে হারাতে পারেননি ইয়ুঝনি। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সেটে তিনিই শাসন করছিলেন, ফেডেরার নন। তার পরেই মাংসপেশীতে টান লাগতে শুরু করে ইয়ুঝনির। শেষ পর্যন্ত ফেডেরারই জেতেন ৬-১, ৬-৭ (৩), ৪-৬, ৬-৪, ৬-২।
আরও পড়ুন: সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না শ্রীলঙ্কার
ওদিকে, ফেডেরারের সঙ্গে যাঁর দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় বসে থাকে সারা দুনিয়ার টেনিস ভক্তরা, তিনি অনেক নিশ্চিন্তে এগোচ্ছেন। রাফায়েল নাদাল ২০ বছরের তারো দানিয়েল-কে হারালেন ৪-৬, ৬-৩, ৬-২, ৬-২। প্রথম সেটে হারানোর পর তেড়েফুঁড়ে ওঠেন রাফা এবং কোনও রকম অঘটন ঘটতে দেননি। ‘‘এখানে প্রত্যেকটা ম্যাচই কঠিন হতে পারে। কারণ, সকলে ভাল খেলার জন্য আসে।’’ নিজের খেলা নিয়ে দারুণ কথা বলে গেলেন এর পর। ‘‘এটা সত্যি যে, আমি খুব ভাল খেলিনি। আবার এটাও সত্যি যে, আমি পরের রাউন্ডে
পৌঁছে গিয়েছি।’’
জয়ী: চার সেটে জিতে তৃতীয় রাউন্ডে নাদাল।ছবি: এএফপি
ফেডেরার নিজে স্বীকার করতে চাইছেন না যে, কোমরের চোট তাঁকে ভোগাচ্ছে। তিনি বলছেন, টুর্নামেন্টের আগের যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পারেননি বলেই এ রকম হচ্ছে। ‘‘আমি জানতাম, শুরুর দিকে কয়েকটা ম্যাচে আমাকে সংগ্রাম করতে হবে। আসল কথাটা হচ্ছে, আমি এখনও ড্রয়ে বেঁচে রয়েছি। মানে আমার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে,’’ চিরাচরিত আত্মবিশ্বাসী ঢংয়ে বলে দিয়েছেন তিনি। তাঁর ১৯ বছরের টেনিস জীবনে ফেডেরার ৩২৩টি ম্যাচ জিতেছেন। ১৯টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। বেশির ভাগ জয়ই এসেছে তাঁর জাদুকরি দক্ষতার জোরে। কালেভদ্রে ভাগ্যের উপর ভর করতে হয়েছে তাঁকে। ইয়ুঝনির সঙ্গে লড়াই ছিল সে রকমই একটি ম্যাচ।
দ্বিতীয় সেট টাইব্রেকারে জেতার পরে তৃতীয় সেটে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে যান ইয়ুঝনি। চতুর্থ সেটের মাঝপথে ক্র্যাম্প শুরু হয় তাঁর। পরে তিনি বললেন, ‘‘প্রথমে পায়ে টান ধরতে শুরু করল। তার পর হাতে, আস্তে আস্তে গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।’’ এমনই ক্র্যাম্প ধরতে শুরু করে যে, কোর্টের মধ্যে পড়েও গেলেন কয়েক বার। শেষ শটটি মারলেন কোনও রকমে র্যাকেটের ফ্রেম দিয়ে। অদ্ভুত নিয়মের কারণে পরিস্থতি আরও কঠিন হয়ে যায় ইয়ুঝনির। নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের মধ্যে ক্র্যাম্প হলে শুশ্রুষা করানো যাবে না। ‘‘ম্যাচটা যদি বেস্ট অফ থ্রি হতো, হয়তো আমিই জিততাম,’’ করুণ হাসি হেসে বলে গেলেন ইয়ুঝনি। তিনিও জানেন, গত সতেরো বছরে ফেডেরারকে হারানোর এত কাছাকাছি আর কখনও আসেননি!