ম্যাচের পর কোর্টের ধারে রাখা সোফায় বসে কাঁদছেন ফেডেরার। তাঁর পাশে বসে কাঁদছেন গত দু’দশকের প্রবল প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদাল। নোভাক জোকোভিচ, অ্যান্ডি মারেরা পিছনে দাঁড়িয়ে রইলেন শূন্য দৃষ্টি নিয়ে।
শিশুর মতো কেঁদেই চলেছেন ফেডেরার। বাধ মানছে না তাঁর চোখের জল। হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। তখনও স্থির লেভার কাপে তাঁর দলের সতীর্থরা।
হাউ হাউ করে কাঁদছেন। জীবনের প্রথম ভালবাসার সঙ্গে বিচ্ছেদ। বুকের ভিতর থেকে কষ্টটা যেন দলা পাকিয়ে উঠে আসছে। দর্শক ভর্তি স্টেডিয়ামের মাঝে দাঁড়িয়ে একা ফেডেরার। ‘ও২ এরিনা’-র ধুসর কোর্টের চারপাশ তখন আরও কালো, অন্ধকারে ঢাকা।
শুধু সতীর্থরাই নন, টেনিস-জীবনের শেয প্রতিযোগিতার প্রতিপক্ষরাও শোকাচ্ছন্ন। চোখের কোণ চিকচিক করছে তাঁদেরও। ফেডেরারকে বুকে টেনে নিলেন ‘অবশিষ্ট বিশ্ব’ দলের কোচ জন ম্যাকেনরো।
দর্শকরা কাঁদছেন। হাততালি দিচ্ছেন। প্রিয় নায়কের বিদায় মানতে পারছেন না তাঁরা। অনুরাগীদের কাছ থেকে বিদায় চেয়ে নেওয়ার সময়ও আবেগ সামলাতে পারলেন না ফেডেরার।
এ বার কিছু বলতে হবে। আনুষ্ঠানিকতা! খানিকটা সামলে নিলেন নিজেকে। কান্না ভেজা মুখেই তখন হালকা হাসির রেখা। ‘রাজা’ কি হাসছেন? না কি কান্না ঢাকছেন?
খেলার কোর্টে ছাড়ার পালা হোক না পূর্ব ঘোষিত, পরিকল্পিত— ফেডেরারের সামনে তখন ইউরোপ দলের কোচ বিয়র্ন বর্গ, নাদাল, জোকোভিচ, মারে-সহ বাকি সতীর্থরা। ফেডেরারের যাওয়ার পথ আগলে দাঁড়িয়ে তাঁরা।
শেষ ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। ২৪ বছরের টেনিস-জীবন সবে অতীত। প্রাক্তন হয়ে যাওয়া ফেডেরার নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। এগিয়ে এলেন মিরকা। তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে স্ত্রী। গালে, কপালে একের পর এক চুমু খাচ্ছেন। কানে কানে কিছু বলছেন। হয়তো বলছেন, ‘নিজের আবেগ সামলাও।’
সব আনুষ্ঠানিকতার পর্বও শেষ। যে দর্শকরা এত বছর ধরে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়েছেন, ভালবেসেছেন— তাঁদের বিদায় জানালেন ফেডেরার। পুরো কোর্ট ঘুরলেন। হাত নেড়ে দর্শকদের ধন্যবাদ জানালেন।
ফেডেরার বার বার বলেছেন, “এটা আনন্দের কান্না।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “কোনও মতে কেটে গেল, তাই না? আমি খুশি। তোমাদের যেমন বলছিলাম। আমার কোনও দুঃখ নেই।”