রজার: ৩৫ বছর বয়সে ১৯ গ্র্যান্ড স্লামের মালিক। ছবি: এএফপি
কোর্টের ধারে বসে তোয়ালেতে মুখ ঢেকে বসে তিনি। ক্যামেরা ক্লোজ আপে ধরল। দেখা গেল, সম্রাটের চোখে জল। আট নম্বর উইম্বলডন খেতাব, ১৯ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে কেঁদে ফেলেছেন রজার ফেডেরার।
উইম্বলডন তাঁর পাখির চোখ ছিল বলেই ক্লে কোর্ট মরসুমে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। ভীষণ ভাবে চেয়েছিলেন এই ট্রফিটা ঘরে তুলতে। সেই স্বপ্ন পূরণ হতেই আবেগের বাঁধ ভাঙল টেনিস কিংবদন্তির।
কেন এই বাঁধভাঙা আবেগ, তা তাঁর মন্তব্যেই আন্দাজ করা গেল। যখন বললেন, ‘‘আমার নায়কেরা এই উইম্বলডনের কোর্টে খেলেছেন। সে জন্যই এরকম এক ঐতিহাসিক টুর্নামেন্টকে মর্যাদা দিতে পারাটা আমার কাছে বিশাল ব্যাপার। নিজেকে সব সময় বলে এসেছি, তুমি ঠিক পারবে। আজ সত্যিই পারলাম। আট নম্বর উইম্বলডন খেতাব জয় আমার কাছে অসাধারণ এক অনুভূতি।’’ আনন্দাশ্রু তখনও মোছা হয়নি তাঁর।
ফেডেরারকে নিয়ে ভক্তদের প্রতিক্রিয়ায় একটা শব্দই উঠে আসছে— সুপার হিউম্যান। অতি মানব। সুপার হিউম্যানই বটে। না হলে ৩৫ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে ট্রফি হাতে নিয়ে কেউ বলতে পারে, ‘‘আশা করি এটাই আমার শেষ উইম্বলডন নয়। আবার এখানে ফিরে আসতে চাই। আরও একবার সেন্টার কোর্টে নেমে নবম খেতাবটা জিততে চাই।’’
কেনই বা এ কথা বলবেন না? একটা সেটও না হেরে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়া কি মুখের কথা? নিজের এই ঐশ্বরিক পারফরম্যান্সে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছেন ফেডেরার। বলেন, ‘‘বিশ্বাসই হচ্ছে না যে একটা সেটও হারিনি আমি। এটা যেন ম্যাজিক। অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। বাড়াবাড়ি।’’ ১৯৭৬-এ বিয়র্ন বর্গও ঠিক এ ভাবেই কোনও সেট না হেরে চ্যাম্পিয়নের কাপ হাতে তুলেছিলেন। ৪১ বছর পর আবার সেই কীর্তিই ফিরে এল ফেডেরারের র্যাকেটে।
রেকর্ডের নাম রজার
• ওপেন যুগে সবচেয়ে বেশি বয়সি (৩৫) উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন।
• বিয়র্ন বর্গের (১৯৭৬) পরে কোনও সেট না হারিয়ে উইম্বলডন জয়ের রেকর্ড।
• আট নম্বর উইম্বলডন ট্রফি জিতে পিট সাম্প্রাসকে টপকে গেলেন মোট উইম্বলডন খেতাবের দিক থেকে।
• ক্রিস এভার্ট, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাকে টপকে গেলেন ১৯টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জিতে।
• ওপেন যুগে উইম্বলডনে ৯১টি ম্যাচ জেতার রেকর্ড করলেন।
পাঁচ বছর আগে যখন শেষবার উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে এই একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, তার পরের পাঁচ বছরে দু’বার ফাইনালে উঠেও ফেডেরারকে হারতে হয়েছিল নোভাক জকোভিচের কাছে। কিন্তু এ বার ফাইনালে ওঠার আগে সব বাধাই দূর হয়ে যায় তাঁর সামনে থেকে। জকোভিচ সেমিফাইনালে চোট পেয়ে কোর্ট ছাড়েন। নাদাল অপ্রত্যাশিত ভাবে হারেন। এই সব অঘটনের পরে ফেডেরারের রাস্তায় কাঁটা প্রায় ছিলই না বলা যায়। মারিন চিলিচ বিশ্বের ছ’নম্বর হতে পারেন। কিন্তু নাদাল বা জোকারের তো আর নন।
আরও পড়ুন: সেনেগাল লিগ কাপ ফাইনালে স্টেডিয়ামের দেওয়াল ধসে মৃত্যু আট সমর্থকের
একদিকে যখন ফেডেরারকে আনন্দে কাঁদতে দেখা যায়, তখন তাঁর প্রতিপক্ষ ক্রোট তরুণের চোখেও হতাশার কান্না। প্রথম সেটেই যে চোট পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তার পরের মুহূর্তগুলো অসহনীয় হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। সেন্টার কোর্টে প্রথম সিঙ্গলস ফাইনালে নামা চিলিচ বলেন, ‘‘এটা ভেবেই কান্না পাচ্ছিল যে, নিজের সেরাটা আর দেওয়া সম্ভব নয়। কত কষ্ট করে এই জায়গাটায় আসতে হয়েছে। তার পর যদি মনে হয় যে এই ম্যাচে নিজের সেরাটা দেওয়া সম্ভব নয়, তা হলে তো আর আবেগের বশে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এটা আমার কাছে একটা বিপর্যয় ছাড়া আর কী?’’
তবে চিলিচকে নিয়ে ফেডেরারের যথেষ্ট সহানুভূতি রয়েছে। বলেন, ‘‘ছেলেটার দুর্ভাগ্য। ও রকম একটা চোট যে হয়ে যাবে, তা ভাবতেই পারেনি ও। তবে তাও যথাসম্ভব ভাল খেলার চেষ্টা করেছে ও।’’
গতবারের উইম্বলডনের পর ছ’মাস বিশ্রাম থেকে ফিরে এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর উইম্বলডন খেতাব জয়। গত বছর একটাও খেতাব না পাওয়া ফেডেরার এ বছর মাত্র দু’টো ম্যাচ হেরেছেন। তাঁর কাছে এটা বড় প্রাপ্তি। ম্যাচের পর সাংবাদিকদের ফেডেরার বলেন, ‘‘আমি খুবই অবাক বছরটা এত ভাল যাওয়ায়। দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতব ভাবিইনি।’’ এই জয়ের পর বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে উঠে আসবেন ফেডেরার। তার পরে আরও উপরে ওঠার দৌড় শুরু হয়ে যাবে তাঁর।