নায়ক: অষ্টম বার উইম্বলডন জয়ের পরে বিশেষ ফোটো সেশনে রজার ফেডেরার। হাতে ধরা র্যাকেট, পিছনে গোলাপ, সবুজের সমারোহ। চিরসবুজ ফেডেরারের প্রতীক। ছবি: গেটি ইমেজেস
রজার ফেডেরারের নামের আগে আর কী বিশেষণ বসানো যায়? টেনিস কিংবদন্তি? সর্বকালের সেরা টেনিস প্লেয়ার?
না, সে সব পুরনো হয়ে গিয়েছে। আট নম্বর উইম্বলডন এবং উনিশ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে তাই সুইস কিংবদন্তির নামের পাশে অন্য এক বিশেষণ বসাতে চান বরিস বেকার। সেই বিশেষণ হল— বিশ্বের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ।
নিজের কলামে বেকার লিখেছেন, ‘‘ফেডেরারকে নিয়ে লিখতে গেলে শব্দ কম পড়ে যায়। আমার যখন বয়স হয়ে যাবে, মাথার চুল পেকে যাবে, তখন বলতে পারব, সে দিন আমিও সেন্টার কোর্টে ছিলাম। যে দিন ফেডেরার ওর আট নম্বর উইম্বলডন জিতেছিল।’’ কিন্তু ফেডেরারের জায়গা তা হলে এখন কোথায়? সে জবাবও নিজের লেখায় দিয়েছেন প্রাক্তন জার্মান টেনিস খেলোয়াড়। ‘‘আপনি যদি বাকি খেলাগুলোর ওপর চোখ রাখেন, তাদের প্রতিনিধিদের দেখেন, তা হলে দেখবেন, এদের সবার ওপরে এখন জায়গা করে নিয়েছে রজার ফেডেরার। আমি বলব, লিওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে ফেডেরার। পিছনে ফেলে দিয়েছে লেব্রন জেমসকেও। এমনকী এই মুহূর্তে মাইকেল ফেল্পসের চেয়েও আমি ফেডেরারকে এগিয়ে রাখব,’’ লিখেছেন বেকার।
তিনি নিজেও টেনিস কিংবদন্তিদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন। উইম্বলডনে তিনিও ঝড় তুলেছিলেন। তাই হয়তো বেকার বলছেন, ‘‘এক জন ক্রীড়বিদ হয়ে আর এক জন ক্রীড়াবিদকে এর চেয়ে বড় কথা আর কী বলতে পারি। সর্বকালের সেরা ফেডেরার। আর কোনও কথা নয়।’’
আরও পড়ুন:উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়ে র্যাঙ্কিংয়ে উঠলেন রজার
কেন তিনি ফেডেরারকে এই সিংহাসনে বসাচ্ছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বেকার। তাঁর কথায়, ‘‘উইম্বলডনে ফেডেরার কী করেছে, আসুন তার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। চল্লিশ বছরের বেশি সময় পরে এক জন উইম্বলডন জিতল কোনও সেট না হারিয়ে। আর কে জিতল? না এক জন ৩৫ বছর বয়সি খেলোয়াড় যে কি না ক’দিন বাদেই ৩৬ বছরে পা দিতে যাচ্ছে। ওপেন যুগে বয়স্কতম খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডন জিতল ও।’’
বেকার বুঝে পাচ্ছেন না, কোন শক্তি এখনও টেনে নিয়ে যাচ্ছে ফেডেরারকে। ‘‘যা দেখছি, তাতে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। কী ভেবে ফেডেরার এখনও চালিয়ে যাচ্ছে, আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। ও তো বলতেই পারে, ‘অনেক হয়েছে, এ বার স্ত্রী আর বাচ্ছাদের সময় দিতে হবে।’ কিন্তু সেটা ও করছে না। আসলে টেনিসের প্রতি এই ভালবাসাই ফেডেরারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।’’
বেকার আরও বলছেন, ঘাসের কোর্টে ফেডেরারের চেয়ে বেশি ভাল আর কাউকে খেলতে দেখেননি। তিনি নিজেও ঘাসের কোর্টে টেনিসটা খারাপ খেলতেন না! আর সে কারণে হয়তো এটাও বলে রাখছেন, ‘‘আমার সেরা সময় খেলা হলে হয়তো ফেডেরারকে একটু বিব্রত করতে পারতাম।’’
যদি সেই লড়াই সত্যিই দেখা যেত, তা হলে ম্যাচে কী হতো? বেকার মনে করছেন, ‘‘শক্তি নির্ভর খেলা, ছোট ছোট র্যালি, সব কিছু নিয়ে ঝাঁপানোর মনোভাব, এ সবই আপনারা দেখতে পেতেন আমার মধ্যে। কিন্তু তাও শেষ পর্যন্ত আমি ওর প্রতিভার সামনে চাপে পড়ে যেতাম। তবে এটা বলতে পারি, ম্যাচটা বেশ জমে যেত।’’
ফেডেরার যে এ রকম কিছু করতে পারতেন, এক বছর আগেও বিশ্বাস করতে পারতেন না বেকার। ‘‘কী করে করব? তখন হাঁটুর চোট ওকে ভোগাচ্ছে। এর পরে অস্ত্রোপচার হল। লম্বা একটা বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে তরতাজা করে যে এ ভাবে ফিরে আসা যায়, সেটা দেখিয়ে দিল ফেডেরার। তবে এর জন্য আমরা ওর কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ আমরা সেরা ফর্মের ফেডেরারকে দেখতেই চাই।’’
মুগুরুজার আমন্ত্রণ: আগের দিনই বলেছিলেন, তিনি রজার ফেডেরারের সঙ্গে নাচতে চান। রবিবার ফেডেরার উইম্বলডন জেতার পরে মেয়েদের চ্যাম্পিয়ন গারবিনে মুগুরুজা সরাসরি টুইট করেন ছেলেদের চ্যাম্পিয়নকে, ‘নাচের জন্য তৈরি তো?’ ফেডেরার সেই চ্যালেঞ্জে মোটেই পিছু হঠেননি। মুগুরুজাকে পাল্টা টুইট করেছেন, ‘চলে এসো চ্যাম্প মুগুরুজা।’ একই সঙ্গে মুগুরুজা বলছেন, ‘‘সাফল্য হজম করা খুূব কঠিন। জানি, কী ভাবে মাটিতে পা রেখে চলতে হয়।’’