সৌজন্য: যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে চোটের জন্য ম্যাচ থেকে সরে যাওয়ার পরে নোভাককে সান্ত্বনা ওয়ারিঙ্কার। এএফপি
প্রথম বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে কি ফেডেরার-নাদাল মহাদ্বৈরথ দেখা যাবে? অপ্রত্যাশিত ভাবে কাঁধের চোটের জন্য নোভাক জোকোভিচ প্রি-কোয়ার্টারে ছিটকে যাওয়ার পরে সেই সম্ভাবনাই কিন্তু দেখা যাচ্ছে। যার জন্য দর্শকদের বিদ্রুপের মুখেও ওকে পড়তে হল!
দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচেই এই চোট কোর্টে ভুগিয়েছিল জোকোভিচকে। ম্যাচের মধ্যে তিন বার যে জন্য শুশ্রূষাও নিতে হয় ওকে। তার পরে অবশ্য তৃতীয় রাউন্ডে খুব একটা সমস্যা না হওয়ায় সবাই ভেবেছিল গত বারের চ্যাম্পিয়ন হয়তো চোট সামলে কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠে যাবে। কিন্তু তা হল কোথায়!
স্ট্যান ওয়ারিঙ্কার বিরুদ্ধে দু’সেট পিছিয়ে তৃতীয় সেটের খেলা চলার সময়ই জোকোভিচ চেয়ার আম্পায়ারকে জানিয়ে দেয়, আর ও খেলতে পারছে না। ম্যাচটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ ভাবে গত বারের চ্যাম্পিয়ন বিদায় নেওয়াটা অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেনি। তাই হতাশায় দর্শকদের কেউ কেউ জোকোভিচকে বিদ্রুপ করতেও ছাড়েনি। বিগ থ্রি-র এক জন ছিটকে যাওয়ায় বাকি দুই অর্থাৎ ফেডেরার ও নাদালের ফাইনালে আরও এক ধুন্ধুমার লড়াই দেখার সুযোগ রয়েছে কেন বলছি, তা ব্যাখা করছি।
ফেডেরার যে রকম ফর্মে খেলছে ফাইনালের আগে ওকে আটকানোর মতো কাউকে দেখছি না। কোয়ার্টার ফাইনালে ফেডেরারের সামনে গ্রিগর দিমিত্রভ। অনেকটা ফেডেরারের মতোই শট মারার স্টাইল বলে টেনিস সার্কিটে অনেকেই ওকে ‘বেবি ফেডেরার’ বলে ডাকে। বুলগেরিয়ার ছেলেটা ফর্মেও আছে। কিন্তু ফেডেরার গত দু’ম্যাচে যে ভাবে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে প্রি-কোয়ার্টারে গফাঁকে ৬-২, ৬-২, ৬-০ উড়িয়ে দেওয়ার পরে দিমিত্রভের পক্ষে ফেডেরারকে হারানো অসম্ভভ একটা কাজ।
দিমিত্রভকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠলে ফেডেরার মুখোমুখি হবে ওয়ারিঙ্কা বা দানিল মেদভেদের। জোকোভিচের বিরুদ্ধে প্রি কোয়ার্টারের খেলা দেখে মনে হল স্ট্যানও ফর্মে আছে। তিন বছর আগে ও যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে রাশিয়ার ছেলেটা অর্থাৎ মেদভেদও কিন্তু পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে এ বারের হার্ডকোর্ট মরসুমে দুরন্ত ছন্দে আছে। ক’দিন আগেই সিনসিনাটি মাস্টার্সে জিতেছে। তার আগে কানাডা মাস্টার্সে ফাইনালে উঠেছে। ওয়ারিঙ্কাকে হারিয়ে ও সেমিফাইনালে ফেডেরারের মুখোমুখি হতেই পারে।
তবে, ওর একটাই সমস্যা ছ’ফুট ছ’ইঞ্চি লম্বা হলেও শারীরিক দিক থেকে খুব শক্তপোক্ত নয়। প্রি-কোয়ার্টারে জিতেই বলেছে, কাঁধে চোটের সমস্যা ভোগাচ্ছে। প্রায় ছেড়েই দিচ্ছিল ম্যাচটা। এর উপরে কোয়ার্টার ফাইনালে যদি পাঁচ সেটের লড়াই গড়ায়, সেই ধকল ও নিতে পারবে কি না সেটাই প্রশ্ন।
সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা আছে স্ট্যানেরও। ফেডেরারের সতীর্থ স্ট্যানের আবার একটা বড় গুণ হল ফেডেরার-নাদাল-জোকোভিচের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে চাপে না পড়ে খোলা মনে লড়াই করতে পারে। তা হলেও এই ফর্মের ফেডেরারের সঙ্গে এঁটে ওঠা সোজা হবে না ওর পক্ষে। তা ছাড়া, শেষ সাত বারই ফেডেরার হারিয়েছে স্ট্যানকে। তাই বলছি ফেডেরারে ফাইনালে ওঠার পথে বড় বাধা কাউকে দেখছি না।
নাদালকে আবার প্রি-কোয়ার্টারে খেলতে হবে মারিন চিলিচের বিরুদ্ধে। পাঁচ বছর আগের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন ও এ বারের ২২ নম্বর বাছাইকে হারাতে দ্বিতীয় বাছাই নাদালের বিশেষ সমস্যা হওয়ার কথা নয়। চিলিচের বাধা পেরোতে পারলে কোয়ার্টারে নাদালের সামনে পড়ার সম্ভাবনা আলেকজান্ডার জেরেভের। কিন্তু জার্মান তরুণ আবার এর মধ্যেই দুটো পাঁচ সেটের ম্যাচ খেলে ফেলেছে প্রথম দু’রাউন্ডে। নাদালের সামনে আবার ক্লান্তি কাটিয়ে পাঁচ সেটের লড়াই হলে সেই ধকল ও কতটা কাটাতে পারবে সন্দেহ আছে। জেরেভকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠলে নাদালের মুখোমুখি হতে পারে গেইল মঁফিস বা মাতেও বারেত্তিনি। যেই উঠুক নাদালের দু’জনকে সামলাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
অনেকেই প্রশ্ন করবেন, ফাইনালে নাদাল-ফেডেরার দ্বৈরথ হলে কে এগিয়ে থাকবে? যদি ফর্মের বিচারে দেখা হয়, তা হলে বলব এগিয়ে ফেডেরার। দুর্দান্ত ফর্মে আছে আটত্রিশের চিরতরুণ। বেশি র্যালিতে যাচ্ছে না। ছোট ছোট পয়েন্টে খেলছে। দুর্ধর্ষ সার্ভিস করছে। নেটে উঠে আসছে। সব মিলিয়ে যাঁকে বলে ফেডেরারোচিত মেজাজ, সেটাই দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে। তার উপরে ফাইনাল হবে স্থানীয় সময়ে বিকেল চারটে। দিনের বেলায় যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের কোর্ট দ্রুত গতির থাকে। ফেডেরারের যেটা পছন্দ। তবে নাদালের বিরুদ্ধে ফেডেরারের স্ট্র্যাটেজি কতটা কাজে আসবে, সেটা বলা যায় না। তা ছাড়া বয়সটাও একটা ব্যাপার। যত ম্যাচ দীর্ঘ হবে তত বেশি সুবিধে পাবে প্রায় পাঁচ বছরের জুনিয়র নাদাল। তাই, ফেডেরার-নাদাল ফাইনাল হলে আমি এগিয়ে রাখব নাদালকেই।