এ যেন ক্লাস ফাইভের ফার্স্ট বয়কে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দেওয়া। বা স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানাধিকারীকে উসেইন বোল্টের বিরুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া। খেলার মাঠে যে হারজিত দুই-ই আছে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কাগজে কলমে চ্যাম্পিয়ন একটা দল যে এত খারাপ ভাবে হারতে পারে, তা মঙ্গলবার কোহালিদের না দেখলে বোধহয় কেউ বিশ্বাস করত না।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়া যে এক দল নয়, তা মনে রেখেও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন, এত খারাপ ভাবে কোনও দল হারতে পারে? কী এমন হল যে দুর্দান্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া একটা দল স্রেফ মুখ থুবড়ে পড়ল? অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস? না, দলের প্রায় সবার একসঙ্গে খারাপ খেলা? দেখে নেওয়া যাক ওয়াংখেড়েতে ভারতের লজ্জাজনক হারের কয়েকটি কারণ।
প্রথমেই বলতে হবে দল নির্বাচনের কথা। ধওয়ন, রাহুল, রোহিত— তিন ওপেনারকে দলে জায়গা দিতে গিয়ে দলের ভারসাম্যটাই গেল বিগড়ে। চার নম্বরে দুর্দান্ত খেলা শ্রেয়স পাঁচ নম্বরে নেমে ব্যর্থ হলেন। এক ধাপ নীচে ব্যাট করতে নেমে রান পেলেন না কোহালি নিজেও।
রোহিত ফিরে যাওয়ার পর ধওয়ন-রাহুল ভাল পার্টনারশিপ তৈরি করলেও কখনওই সে ভাবে রান তুলতে পারেননি। দু’জনের ব্যাটিং দেখেই মনে হয়েছে, পিচ বেশ কঠিন। যেখানে পিচ ছিল যথেষ্টই সহজ। দুই সেট ব্যাটসম্যানকে মাথা তুলতে দেননি স্টার্ক-জাম্পারা। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অজি বোলারদের।
খুব কম সময়ের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট হলেও ইনিংস গড়ার দিকে এগোননি কোহালি। বরং, তিনি চেয়েছিলেন জাম্পাদের শাসন করতে। কিন্তু তাঁর পরে যে আর কোনও ব্যাটসম্যান নেই, তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন কি?
চরম স্বার্থপরের মতো ব্যাট করলেন ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার শিখর ধওয়ন। তার ৯১ বলে ৭৪-এ দলকে বাঁচানোর চেয়ে নিজেকে বাঁচানোর তাগিদটা যেন বেশি ছিল। রাহুল-রোহিত ওপেন করে ধওয়নের বদলে দলে মনীশ পাণ্ডে এলে ভারসাম্য বজায় থাকত। ব্যাটিং অর্ডারে আত্মঘাতী পরিবর্তনটাও করতে হত না।
ঋষভ পন্থকে ঠিক আর কতগুলো সুযোগ দিলে তাঁর ‘অসামান্য প্রতিভা’-র প্রকাশ ঘটবে, সেটাও বোঝা জরুরি। দলের প্রয়োজনে তিনি শেষ কবে রান পেয়েছেন সেই তথ্য খোঁজার চেয়ে ডার্ক ম্যাটার খুঁজে পাওয়া বোধহয় অনেক সহজ। এ দিনও প্রয়োজনের সময় রান করে দলকে সাহায্য করতে ব্যর্থ হলেন।
বুমরাহ কি সম্পূর্ণ চাপমুক্ত? পুরনো পরিচিত বিধ্বংসী বুমরাহকে খুঁজেই পাওয়া গেল না ওয়াংখেড়েতে। ইয়র্কার তো দূর অস্ত্, ওয়ার্নার, ফিঞ্চকে শুধুই হাফভলি উপহার দিয়ে গেলেন। সাত ওভার বল করে দিলেন ৫০ রান। ওভার প্রতি রান সাতেরও বেশি!
প্রশ্ন উঠতে পারে শার্দূল ঠাকুরকে দলে নেওয়া নিয়েও। ওয়ান ডে তে তিনি কোনওদিনই দারুণ কিছু করেননি। তাঁর জায়গায় নবদীপ বা চহালকে খেলানো যেতেই পারত। পাঁচ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে সবচেয়ে খারাপ বোলিংটা এ দিন করলেন শার্দূলই।
বল-বিকৃতির কলঙ্ক কাটিয়ে ওয়ার্নার ২.০-কে দেখল ওয়াংখেড়ে। দুই ওপেনারের মধ্যে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। তাঁর ১১২ বলে ১২৮ ভারতে তাঁর অন্যতম সেরা ইনিংস হয়ে থাকবে।
মুম্বইয়ের ম্যাচে ভারতকে সব বিভাগেই টেক্কা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাঁদের জয়ের আরও একটি অনুঘটক মিচেল স্টার্কের বোলিং। প্রথম স্পেলে মার খেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তারপরে ফিরে এসেছেন দুরন্ত ভাবে। রোহিতকে তুললেন যে বলটায় তার গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার। এর পর শ্রেয়স আইয়ারকে তুলে নিলেন। সব মিলিয়ে ভারতে তাঁর দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচে নিয়ে গেলেন তিন উইকেট। প্যাট কামিন্স তুলে নিলেন ধওয়ন আর ঋষভ পন্থের উইকেট। প্রশংসা করতে হবে দুই স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা এবং অ্যাস্টন অ্যাগারেরও।
মঙ্গলবার কোহালি এবং তাঁর দলকে দেখে মনে হয়েছে ম্যাচ হারার আগেই হেরে বসে আছে। শরীরী ভাষাতেও বিধ্বস্ত হওয়ার ছাপ স্পষ্ট। এই ধাক্কা কি টিম ইন্ডিয়া কাটিয়ে উঠতে পারবে? নাকি, ওয়াংখেড়ের মতো রাজকোটেও মেন ইন ব্লু-দের ছাপিয়ে হলুদ ঝড় উঠবে? (ছবি: এপি)