দুরন্ত: অভিষেক টেস্টে ইনিংসে পাঁচ উইকেট অক্ষরের। বিসিসিআই।
চেন্নাইয়ে দ্বিতীয় টেস্টে ভারতকে জেতানোর নেপথ্যে তাঁর নামটাই সব চেয়ে আগে আসছে। সেঞ্চুরি এবং দু’ইনিংস মিলিয়ে আট উইকেট। পাশাপাশি চলছে পিচ নিয়ে বিতর্কও। যার জবাবও ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে দিয়ে গেলেন ম্যাচের নায়ক আর অশ্বিন।
ম্যা্চের সেরা ক্রিকেটারের মতে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সময় এসেছে। সেটা পিচ নিয়েই হোক কী নতুন কোনও প্রতিভা সম্পর্কে মতামত পেশ করার ক্ষেত্রেই হোক। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার মনে করেন, ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও বিদেশের পিচ নিয়ে বক্তব্য থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমান বা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেন না। অশ্বিনের কথায়, ‘‘ওরা (ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ) কী ভাবছে, তা নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। বিদেশ সফরের সময় আমাদেরও পিচ নিয়ে বক্তব্য থাকে। কিন্তু আমরা কোনও অভিযোগ করি না। বরং নিজেদের কাজটা চুপচাপ করে যাই।’’
অশ্বিন এও মনে করিয়ে দিতে চান যে, এই ব্যাপারটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। ভারতীয় অফস্পিনারের কথায়, ‘‘আমি তো আমাদের কোনও কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে দেখিনি যিনি বিদেশে গিয়ে পিচ নিয়ে অভিযোগ করছেন। তিনি সুনীল গাওস্কর হোক কী রবি শাস্ত্রী। দু’জনেই প্রচুর বিদেশ সফর করেছেন। কিন্তু কখনও বলেননি, পিচে প্রচুর ঘাস আছে বা সে রকম কিছু।’’ নাম না করলেও অশ্বিনের তিরের লক্ষ্য যে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন, তা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। গত কয়েক দিন ধরে চিদম্বরম স্টেডিয়ামের পিচ নিয়ে বিষোদ্গার করে চলেছেন ভন। যাবতীয় সমালোচনা সামলানোর জন্য অশ্বিনের মন্ত্র হল, “যখন কেউ এ সব কথা বলে তখন অবশ্যই আমরা তার সম্মান করব। এবং, উদারতার সঙ্গে সে সব মন্তব্যকে একপাশে সরিয়ে রাখব।’’
তবে শুধু বিদেশিদের জন্যই নয়, ভারতীয় ক্রিকেট মহলের কাছেও একটা বার্তা দিতে চান অশ্বিন। তিনি চান, ক্রিকেটারদের সম্পর্কে যেন মানসকিতা আর দৃষ্টিভঙ্গির বদল হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন গ্রিন আর ভারতের ঋষভ পন্থের তুলনা করেছেন। অশ্বিন বলেছেন, ‘‘মাস দুই আগে আমরা অস্ট্রেলিয়ার এক ক্রিকেটার, ক্যামেরন গ্রিনকে দেখি। অভিষেক হওয়ার আগে থেকেই যার সম্পর্কে বলা হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের উদীয়মান প্রতিভা। আমাদের বিরুদ্ধে সিরিজে ও বোধ হয় একটা হাফসেঞ্চুরি করেছিল। কোনও উইকেট নেয়নি। কিন্তু ওকে সবাই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। যা দেখে আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল ভারতের কথা। মনে পড়ে যাচ্ছিল, ভারতে কোন চোখে তরুণ ক্রিকেটারদের দেখা হয়!’’
এর পরেই তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ঋষভের উদাহরণ দেন অশ্বিন। বলেন, ‘‘ঋষভ দারুণ এক জন ক্রিকেটার। আমাদের দলে আরও দারুণ সব ক্রিকেটার আছে। দলের বাইরেও আছে। কিন্তু এরা যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করে, তখন যেন আমরা উঠে পড়ে লেগে যাই ওদের দোষ ধরতে।’’ যোগ করেন, ‘‘ঋষভ পন্থের মতো ক্রিকেটাররা নিশ্চিত ভাবে উন্নতি করবে। কিন্তু ওদের পাশে যদি দাঁড়ানো যায়, তা হলে সেই কাজটা আরও দ্রুত হবে।’’ জীবনের প্রথম টেস্টেই ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর পটেল। তাঁর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে অশ্বিনের গলায়।
লাল বলের ক্রিকেটে দুরন্ত পারফরম্যান্স করলেও সাদা বলের ক্রিকেটে এখনও ব্রাত্য অশ্বিন। তবে আইপিএলে বরাবরই ভাল খেলেন এই অফস্পিনার। এমনকি, ভারতের টি-টোয়েন্টি দলেও ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই ইচ্ছা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজে পূর্ণ হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মার্চে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে রবীন্দ্র জাডেজা সুস্থ হয়ে ওঠেন কি না, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করে থাকবে অশ্বিনের ভাগ্য। সংবাদ সংস্থাকে বোর্ডের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘যুজ়বেন্দ্র চহাল অবশ্যই সাদা বলের সিরিজে এক নম্বর স্পিনার। কিন্তু জাডেজা যদি সুস্থ না হয় তা হলে অশ্বিন খারাপ বিকল্প হবে না।’’ অশ্বিন যে ভাবে বেন স্টোকসকে নিয়মিত আউট করছেন, সে ব্যাপারটার উপরেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাদা বলের সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে যশপ্রীত বুমরাকে।