ফেডেরারের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন নাদাল। ছবি— এএফপি।
১১ বছর আগে উইম্বলডনের রয়্যাল বক্সে বসে ১৪টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিক পিট সাম্প্রাসকে দেখতে হয়েছিল, তাঁর সাম্রাজ্য দখল করে নিচ্ছেন রজার ফেডেরার।
২০০৯ সালের উইম্বলডন ফাইনালে মার্কিন তারকা অ্যান্ডি রডিককে ম্যারাথন লড়াইয়ে হারিয়ে ফেডেরার ১৫টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নিয়েছিলেন। ঘাসের কোর্টে সে দিন ফেডেরারের দাপট দেখে সাম্প্রাস বলে দিয়েছিলেন, ‘সর্বকালের সেরা’ হতে চলেছেন ফেডেরার।
এই ২০২০-তে এসে ফেডেরার-ভক্তদের আশঙ্কা, চলতি বছরেই হয়তো সিংহাসন হারাতে চলেছেন সুইস কিংবদন্তি। ‘সর্বকালের সেরা’র শিরস্ত্রাণ উঠতে চলেছে বাঁ হাতি রাফায়েল নাদাল-এর মাথায়। গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জয়ের নিরিখে ফেডেরারের ঘাড়ের কাছে এখন নিঃশ্বাস ফেলছেন বাঁ হাতি স্পেনীয় তারকা। ফেডেরারের ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম খেতাবের থেকে মাত্র একটি গ্র্যান্ড স্লাম পিছনে নাদাল। মুখোমুখি লড়াইয়ে ২৪-১৬-তে এগিয়ে বাঁ হাতি তারকা।
আরও পড়ুন: ‘যত সমালোচনা হোক না কেন, কথা বলবে আমার ব্যাটই’
মঙ্গলবার শীর্ষ বাছাই নাদাল বলিভিয়ার হুগো ডেলিয়েনকে ৬-২, ৬-৩, ৬-০-এ উড়িয়ে দিয়েছেন । এ বারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার দৌড়ে নোভাক জকোভিচের সঙ্গে ফেভারিট ধরা হচ্ছে তাঁকেও। গত বার জোকার খেতাব জিতেছিলেন মেলবোর্নে। অনেকেই মনে করছেন, এ বার সার্বিয়ান তারকাকে মাটি ধরিয়ে গত বারের হারের মধুর প্রতিশোধ নেবেন নাদাল। তা হলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন ফেডেরারকে।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পরেই রয়েছে ফরাসি ওপেন। যে ক্লে কোর্ট নাদালের যৌবনের তপোবন, বার্ধক্যের বারাণসী। লাল সুড়কির কোর্টে নাদাল নামা মানে যেন অবধারিত ভাবেই তিনি জিতবেন। আর সেটা হলে ফেডেরারকে সরিয়ে তিনিই হবেন টেনিস সার্কিটের ‘সম্রাট’। সময় বড় নির্মম। এক নম্বর জায়গা চিরকাল কেউ ধরে রাখতে পারে না। ফুটবলে ব্রাজিল আর বিশ্বসেরা নয়। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যে থাবা বসিয়েছে জামাইকা। ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দাপট কবেই চুকে বুকে গিয়েছে। তেমনই ফেডেরার এখন অস্তমিত সূর্য। গত বছরের চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের একটিও জিততে পারেননি তিনি। নাদাল ও জোকার সেখানে দু’টি করে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নেন। ‘ফেড-এক্স’-এর খেলায় থাবা বসিয়েছে বয়স। খেলা পাঁচ সেটে পৌঁছে গেলে ৩৮-এর ফেডেরার হয়ে পড়ছেন ক্লান্ত। গত বারের উইম্বলডন ফাইনাল হয়েছিল ম্যারাথন। জোকোভিচ সেই ফাইনাল জিতেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফেডেরারের পক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া এখন খুব কঠিন।
আরও পড়ুন: বস্তারের বিশেষ ভাবে সক্ষম খুদেকে ব্যাট উপহার দিলেন সচিন
আন্দ্রে আগাসির মতো তারকা অনেক আগেই নাদালকে ‘সর্বকালের সেরা’র সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। কারণ ব্যাখ্যা করে স্টেফি গ্রাফের স্বামী বলেছিলেন, ফেডেরার বছর চারেকের মধ্যে রডিক, হিউইটদের মধ্যে থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন। সেখানে ফেডেরার, জকোভিচ, মারের মতো মহাতারকাদের বিরুদ্ধে লড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাদাল। তার উপরে একাধিক বার চোটের লাল চোখ দেখতে হয়েছিল তাঁকে। র্যাঙ্কিংয়ে নেমে গিয়েছিলেন অনেক নীচে। চোট সারিয়ে দুর্দান্ত ভাবে আবার ফিরেও আসেন নাদাল। ফেডেরারকেও এ ভাবে চোট পেয়ে কোর্ট থেকে সরতে হয়নি। একাধিক বার চোট পেয়ে দারুণ ভাবে ফিরে আসা এবং স্বপ্নের পারফরম্যান্স তুলে ধরার জন্যই ‘সর্বকালের সেরা’ হওয়ার দৌড়ে ফেডেরারকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন নাদাল।