বিশ্ব ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ড গড়েছেন নাইজেরিয়ার ক্রীড়াবিদ টবি আমুসান। তাঁকে নিয়েই বিতর্ক। ফাইল চিত্র
ভেঙে গিয়েছে বিশ্বরেকর্ড। শুধু তাই নয়, একটি প্রতিযোগিতায় ১২ জন প্রতিযোগী নিজেদের ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েছেন। এক প্রতিযোগিতায় এত রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তথা অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদ। তাঁর প্রশ্ন, সময় মাপার যন্ত্রে কি কোনও সমস্যা ছিল? এই প্রশ্নে তোলপাড় ক্রীড়ামহল।
বিশ্ব ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ড গড়েছেন নাইজেরিয়ার ক্রীড়াবিদ টবি আমুসান। মহিলাদের ১০০ মিটার হার্ডলসের সেমিফাইনাল ১২.১২ সেকেন্ডে শেষ করেছেন তিনি। এর আগে ২০১৬ সালে ১০০ মিটার হার্ডলসে রেকর্ড গড়েছিলেন আমেরিকার কেন্ড্রা হ্যারিসন (১২ .২০ সেকেন্ড)। ০.০৮ সেকেন্ডে সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন টবি। শুধু টবি নন, প্রথম সেমিফাইনালে মোট পাঁচ জন, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে প্রথম পাঁচ ও তৃতীয় সেমিফাইনালে দু’জন প্রতিযোগী তাঁদের কেরিয়ারের সেরা সময়ে দৌড়েছেন।
একসঙ্গে এত জন দৌড়বিদের রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাইকেল জনসন। অলিম্পিক্সে চারটি সোনাজয়ী জনসন টুইটে বলেছেন, ‘অবিশ্বাস্য। আমি মনে করি না ১০০ বারের মধ্যে ১০০ বারই সময় মাপার যন্ত্র ঠিক থাকবে। বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছে। ১২ জন ব্যক্তিগত সেরা সময়ে দৌড়েছেন। পাঁচটি জাতীয় রেকর্ড হয়েছে।’ তাঁর প্রশ্নের সমর্থনে যুক্তিও দিয়েছেন জনসন। টুইটে লিখেছেন, ‘ব্রিটিশ দৌড়বিদ সিন্ডি সেম্বার বলেছে, ওর মনে হচ্ছিল ও ধীরে দৌড়েছে। ক্রীড়াবিদরাও এই ঘটনায় অবাক।’
সত্যিই কি সময় মাপার যন্ত্রে কোনও সমস্যা থাকতে পারে? কী বলছেন বাংলার ক্রীড়াবিদরা?
এই প্রসঙ্গে ২০০২ ও ২০০৬ সালের এশিয়ান গেমসে রুপোজয়ী দৌড়বিদ সোমা বিশ্বাস আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের মতো প্রতিযোগিতায় এই ধরনের ভুল হওয়া অস্বাভাবিক। তবে মেশিনও বিকল হতে পারে। সেটা এখান থেকে তো বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁরা সবটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই কোনও সিদ্ধান্ত নেন। আমি তো এই রকম কিছু আগে শুনিনি।’’
অনেকটা একই মত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো ও ব্রোঞ্জজয়ী দৌড়বিদ সুস্মিতা সিংহ রায়ের। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের সময়ে এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কারণ যদি যান্ত্রিক ত্রুটি হয়, তা হলে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। নাইজেরিয়ার মেয়েটি কিন্তু একই দিনে দু’বার রেকর্ড করেছে। এতটা ভুল হওয়া অস্বাভাবিক।’’
যোগাযোগ করা হয়েছিল দ্রোণাচার্য পুরস্কারজয়ী কোচ কুন্তল রায়ের সঙ্গেও। তিনিও নিশ্চিত, রেকর্ড না হলে দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সেটা জানিয়ে দিতেন। কুন্তল বলেন, ‘‘যখনই এই ধরনের কোনও রেকর্ড হয় তখন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখেন। সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন না। আরও একটা বিষয় দেখতে হবে যে হাওয়া কতটা সাহায্য করছে। যদি হাওয়া সাহায্য না করে তা হলে বিশ্বরেকর্ড হতেই পারে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কারণ মেয়েটি আগেও ভাল সময়ে দৌড়েছে।’’
টবি সেমিফাইনালে যখন দৌড়েছিলেন তখন হাওয়ার বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ০.৯২৪ মিটার। প্রতি সেকেন্ডে ২ মিটারের থেকে কম হাওয়া বইলে তাকে গ্রাহ্য করা হয় না। কিন্তু তার বেশি হাওয়া বইলে তার সাহায্য প্রতিযোগীরা পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রেকর্ড হলেও তার উল্লেখ হয় না। সেমিফাইনালের দু’ঘণ্টা পরে ফাইনালে ১০০ মিটার হার্ডলস শেষ করতে ১২.০৬ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন টবি। কিন্তু সেই সময় হাওয়ার গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ২.৫২৪ মিটার। তাই সেই সেটি রেকর্ড হিসাবে গ্রাহ্য হয়নি।
বিশ্বরেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জনসনকে। কেউ কেউ বলছেন, এর আগে ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমস ও ২০২১ সালের ডায়মন্ড লিগেও সোনা জিতেছেন টবি। তিনি এক জন আমেরিকান দৌড়বিদের রেকর্ড ভেঙেছেন বলে সহ্য করতে পারছেন না জনসন। কেউ আবার জনসনের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ তুলেছেন।
সমালোচনার জবাব দিয়েছেন জনসন। টুইট করে লিখেছেন, ‘আমি শুধু ধারাভাষ্যকার হিসাবে আমার কথা বলেছি। আমি কোনও প্রতিযোগী নয়, প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। আমি টবিকে শ্রদ্ধা করি। এই ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।’